জাল সনদে নয় বছর এমপিওভোগ! - দৈনিকশিক্ষা

জাল সনদে নয় বছর এমপিওভোগ!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

অপর একজন প্রার্থীর গণিতের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জাল করে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কৃষি শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক পদে চাকরি করছেন তিনি। জাল সনদ নিয়ে দীর্ঘ নয় বছর অবৈধভাবে সরকারি বেতনভাতা বা এমপিও বাবদ ভোগ করছেন লাখ লাখ টাকা। সম্প্রতি সনদ যাচাইয়ে তার জাল সনদের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এনটিআরসিএ জাল সনদধারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

জালসনদধারী ওই শিক্ষক মাহফুজা খাতুন। কৃষি শিক্ষা বিষয়ের জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদ নিয়ে তিনি রংপুর সদরের মুলাটোল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘ নয় বছর সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। এসময়ের প্রায় পুরোটাই পেয়েছেন এমপিও। গত ২৮ নভেম্বর তার জাল সনদের বিষয়টি জানিয়ে সনদ যাচাই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এনটিআরসিএ। জালসনদধারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, জালসনদধারী শিক্ষক মাহফুজা খাতুন প্রতিষ্ঠান কতৃপক্ষকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং মামলা না করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। যদিও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এ বিষয়ে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার এবং মামলা দায়ের করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানের তিনজন শিক্ষকের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে গত ৩১ আগস্ট তাদের সনদ যাচাই করতে এনটিআরসিএতে আবেদন পাঠায় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। দুইজন শিক্ষক নিবন্ধন সনদ সঠিক পাওয়া গেল মাহফুজা খাতুনের সনদটি জাল বলে প্রতিবেদন দেয় এনটিআরসি। 

গত ২৮ নভেম্বর এনটিআরসিএর সহকারী পরিচালক তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সনদ যাচাই প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃষি শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মাহফুজা খাতুনের সনদটি জাল। তিনি যে রোল নাম্বার ব্যবহার করে জাল সনদ তৈরি করেছেন তা মূলত আলমগীর হোসেন নামের একজন প্রার্থীর অর্জিত গণিত বিষয়ের শিক্ষক নিবন্ধন সনদের। প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, প্রতিষ্ঠানের অপর দুই শিক্ষক সহকারী মৌলভী মো. শাহ জালাল ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক রতন চন্দ্র বর্মনের সনদটি সঠিক আছে। প্রতিবেদনটি প্রতিষ্ঠানটিকে ইমেইলে পাঠানো হয়। এছাড়া তা এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটেও আপলোড করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদ নিয়ে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মুলাটোল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন মাহফুজা খাতুন। সে বছরের শেষের দিকে কৃষি শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত হন তিনি। গত নয় বছর এমপিও বাবদ অবৈধভাবে আত্মসাৎ করেছেন সরকারের লাখ লাখ টাকা। কিন্তু সম্প্রতি এনটিআরসিএর সনদ যাচাই প্রতিবেদনে বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেছে। চাকরি বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মাহফুজা খাতুন। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করছে না। 

এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও রংপুর আইন কলেজের অধ্যক্ষ সাজেদুর হাসান তাতা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন,  জাল সনদধারী শিক্ষক চাপ দিচ্ছেন এ অভিযোগটা সঠিক নয়। আমি ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। মনে হয় তিনি মামলা করেছেন। আমি এখন বাগেরহাটে আছি, তাই সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছি না।

কিন্তু এখনো পর্যন্ত জাল সনদধারী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগ আছে, কোন ব্যবস্থা না নিতে মাহফুজা খাতুন ও তার স্বজনরা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দূর্গা রাণী সরকার মাহফুজা খাতুনের সাথে সক্ষতা করে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

এদিকে জাল সনদধারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দূর্গা রাণী সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, মাহফুজা খাতুন দাবি করেছেন ওই সনদ যাচাইয়ের প্রতিবেদনটি জাল। তাই, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাকে সাত দিনের সময় দিয়েছে প্রতিবেদনটি জাল প্রমাণ করতে। এজন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।

এদিকে জাল সনদে শিক্ষকতা করে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক মাহফুজা খাতুন দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব (SUBSCRIBE) করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031590461730957