পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় কয়েকটি মাদরাসার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের আলিম শাখায় অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জালিয়াতির মাধ্যমে করা এসব ভর্তি বাতিল ও এর সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিচার দাবি করে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক ও ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার অভিযোগ জানিয়েছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। তবে অভিযুক্ত মাদরাসার কর্তৃপক্ষের দাবি, কোনো শিক্ষার্থীকেই তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা না জানিয়ে ভর্তি করানো হচ্ছে না। কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এমন অভিযোগ করছেন বলে ধারণা তাদের।
জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তিতে অভিযুক্ত মাদরাসাগুলো হলো- উপজেলার দক্ষিণ শিয়ালকাঠী আলিম মাদরাসা, চড়াইল আবদুল আলী আলিম মাদরাসা ও আতরখালী আলিম মাদরাসা।
অপরদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলো- উপজেলার পশ্চিম পশারিবুনিয়া গ্রামের মো. এনায়েত বেপারীর মেয়ে সাইয়্যেদা আক্তার পপি, ধাওয়া গ্রামের মো. লাভলু খানের মেয়ে লাইজু আক্তার, দারুলহুদা গ্রামের মো. লিটনের মেয়ে লিমা আক্তার ও তেলীখালী গ্রামের মো. মাহবুবের মেয়ে নিপা আক্তার।
সাইয়্যেদা আক্তার পপি অভিযোগে বলেন, জিপিএ ৩ দশমিক ৩১ পেয়ে দাখিল পাস করেছেন তিনি। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের আলিম অনলাইন ভর্তি আবেদন করতে গিয়ে দেখেন তার অজান্তে ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে আতরখালী আলিম মাদরাসায় ভর্তি করানো হয়েছে। এর সঙ্গে ওই মাদরাসার ইংরেজির প্রভাষক মামুন খান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক আবুল কালাম জড়িত বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ দুই শিক্ষক তাদের বাড়িতে এসে ওই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার কথা বললে পপির অভিভাবক অস্বীকৃতি জানানোর কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী লাইজু আক্তার অভিযোগে বলেন, দাখিলে জিপিএ ২ দশমিক ৫৬ পেয়ে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের আলিম অনলাইনে ভর্তি আবেদন করতে গিয়ে দেখেন দক্ষিণ শিয়ালকাঠী আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ ও অফিস সহকারী তাকে জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে রেখেছেন। অথচ এ বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। অভিযোগপত্রে ভর্তি বাতিল ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন লাইজু।
এদিকে নিপা আক্তার ও লিমা আক্তার চড়াইল আবদুল আলী আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ ও আরবির প্রভাষক মাওলানা মো. নজরুল ইসলাম বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনেছেন। জানা যায়, নিপা ৩ দশমিক ৩৮ পেয়ে ও লিমা ৩ দশমিক ০৬ পেয়ে দাখিল পাস করেছেন। কিন্তু অনলাইনে আলিমে ভর্তি আবেদন করতে গিয়ে দেখেন চড়াইল আবদুল আলী আলিম মাদরাসায় ভর্তি হয়ে আছেন তারা। অথচ এ বিষয়ে কিছুই জানা নেই তাদের। অভিযোগে তারা তাদের ভর্তি বাতিলের দাবিসহ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে দক্ষিণ শিয়ালকাঠী আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. আবু কাওসার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সরকার কমপক্ষে ২৫ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানোর সীমা নির্ধারণ করে দিলেও স্থানীয় কয়েকটি মাদরাসা থেকে এবার দাখিল পাস করেছে ২০ জন শিক্ষার্থী। ফলে আলিমে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমাদের অনুরোধ করতে হচ্ছে। আমরা কিছু শিক্ষার্থীকে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি চয়েজে রাখতে বলেছি, এখন ভর্তি নিশ্চয়ন হয়নি। যে কেউ চাইলে এখনও অন্য প্রতিষ্ঠানকে ভর্তির জন্য চয়েজ হিসেবে দিতে পারে।
তিনি বলেন, অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানোর ব্যাপারটি সত্য নয়। এ বিষয়ে ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা অভিযোগের বিষয়ে কিছু জানেন না। কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এমন অভিযোগ করে থাকতে পারে। আমরা কোনো শিক্ষার্থীকে জোর করে বা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভর্তি করছি না। তবে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের কিছু শিক্ষার্থীকে আমাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করার জন্য অনুরোধ করছি মাত্র।
এদিকে এ বিষয়ে আতরখালী আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. নজীর আহমদকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার অবসর গ্রহণের সময় আসন্ন। ফলে ভর্তির বিষয়টি আমি আর দেখছি না। কয়েক জন প্রভাষক এ বিষয়ে তদারকি করছেন। উনারা এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।
পরে আতরখালী আলিম মাদরাসার ইংরেজির প্রভাষক মামুন খানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে তিনি বলেন, এ অভিযোগটি সত্য নয়। অধ্যক্ষ একজন অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক ও আমাকে ডেকেছিলেন। আমরা অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়েছি। ভর্তি হতে অনুচ্ছিক হলে তাকে মাদরাসায় এসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। আমরা কোনো শিক্ষার্থীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভর্তি করছি না। শিক্ষার্থীদের ভর্তি করতে তাদের দাখিলের রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর দরকার পড়ে। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভর্তি করতে হলে আমাদের এগুলো লাগবে। আমরা এগুলো কোথায় পাবো?
তিনি আরও বলেন, সরকার নির্ধারিত কমপক্ষে ২৫ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো কথা থাকলেও আমরা এখন পর্যন্ত ১২ জন শিক্ষার্থী পেয়েছি। ফলে আমরা অভিভাবকদের অনুরোধ করছি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর জন্য।
এ বিষয়ে জানতে চড়াইল আবদুল আলী আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. আ. রহমানের কাছে দৈনিক শিক্ষাডটকম থেকে মুঠোফোনে কল করা হলে প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে পেরে কল কেটে দেন তিনি। পরে কয়েকবার কল করে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কলটি রিসিভ করেননি অধ্যক্ষ।