জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ৪৭টি উন্মুক্ত স্থানে ফেলা হয় বর্জ্য। অনেক সময় এসব বর্জ্যের স্তূপ পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়, যাতে পরিবেশ আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সম্প্রতি এক গবেষণা নিবন্ধে এমনটি দাবি করা হয়েছে।
গবেষণাটি করেছেন জাবির ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিবি হাফছা ও একই বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ। গত জুলাইয়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ’-এ তাঁদের গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, জাবি ৪৭টি উন্মুক্ত স্থানে কঠিন বর্জ্যের স্তূপ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুল, হল, বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদ, কেন্দ্রীয় মাঠ, বিভিন্ন রাস্তার পাশ, বটতলা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, টারজান পয়েন্ট আরও কয়েটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এসব কঠিন বর্জ্যের উৎস মূলত বিভিন্ন বিভাগ, অনুষদ, রাস্তার খাবারের দোকান, বটতলা ও টারজান।
নিবন্ধে বলা হয় আবর্জনা, প্লাস্টিক, কাগজপত্র, প্লাস্টিক ব্যাগসহ সব ধরনের কঠিন বর্জ্য স্বাভাবিক পরিবেশকে দূষিত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ ছাড়া বর্জ্য পোড়ানোর জন্য আগুন লাগানো হয়, যা স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ আগুনে বর্জ্য পুড়ে বাতাসে বিভিন্ন দূষণকারী পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এ ছাড়া এটি শ্বাসযন্ত্রে জ্বালাতন করে, শ্বাস নিতে অসুবিধা সৃষ্টি করে ও হাঁপানিসহ মারাত্মক ব্যাধি ও স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি করে।
গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, জাবি ক্যাম্পাসে একটি সবুজ মনোরম পরিবেশ বিদ্যমান, কিন্তু কালের আবর্তনে তা হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বর্জ্য ফেলা হয় উন্মুক্ত স্থানে, যা ক্যাম্পাসের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। ক্যাম্পাসের উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ফেলায় পরিবেশ এবং সৌন্দর্য মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
সহকারী অধ্যাপক বিবি হাফছা বলেন, ‘গবেষণাটির মূল উদ্দেশ্য ‘‘পরিচ্ছন্নতায় সবুজ’’ ধারণাটি অনুসরণ করে একটি টেকসই বিষমুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে আমরা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্যাম্পাস থেকে বিভিন্ন উপায়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করি।’
গবেষক রাজু আহমেদ বলেন, ‘এ গবেষণার মাধ্যমে মূলত জিও লোকেশনের সাহায্যে ক্যাম্পাসের কোথায় উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য নিক্ষেপণ করা হয় তা চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া কীভাবে বর্জ্যের উৎস পরিবেশকে দূষিত করছে তা জ্ঞাতার্থ হওয়া।’
গবেষণায় সুপারিশ করা হয়, ক্যাম্পাসের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রাকৃতিক, স্বাস্থ্যকর, মনোরম এবং টেকসই পরিবেশ রক্ষার জন্য আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কৌশল হিসেবে ‘পরিচ্ছন্নতায় সবুজ’ ধারণাটির সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। যা ইতিপূর্বে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সফলতার সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গৃহীত হয়েছে।
জাবির রেজিস্ট্রার ভবনের এস্টেট শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান বলেন, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বিন, মাচা তৈরি করা হয় ময়লার জন্য। এরপরেও দর্শনার্থীদের অসচেতনতার কারণে যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ হয়। এ সংক্রান্ত গবেষণাটি আমাদের হাতে এলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারব।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান, পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এ এইচ এম সাদৎ বলেন, ‘আধুনিক নগরসভ্যতার অপরিহার্য উপাদান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগরে এখনো সেটি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে না। আমাদের এ কমিটি স্বেচ্ছাসেবী কাজের অংশ। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অংশ নয়, ফলে কোনো নির্বাহী কর্তৃত্ব আমাদের হাতে নেই। কর্তৃপক্ষের এখনই সময় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।’