জ্যেষ্ঠদের ভাগ্য লিখবেন কনিষ্ঠ কর্মকর্তারা! - দৈনিকশিক্ষা

জ্যেষ্ঠদের ভাগ্য লিখবেন কনিষ্ঠ কর্মকর্তারা!

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের উপরের পদে কনিষ্ঠদের পদায়ন করায় বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এতে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। বিগত দিনে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত, বিভাগীয় মামলাসহ একাধিক শাস্তির মুখোমুখি হওয়া এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত চলা অবস্থায় একাধিক কর্মকর্তাকে এবার প্রাইজ পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে এ ক্যাডারের 'চেইন অব কমান্ড' ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। এই ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর ও শিক্ষাবোর্ডে ঊর্ধ্বতন পদে সম্প্র্রতি কিছু জুনিয়র কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়। এ ছাড়া নানা অভিযোগে অতীতে শাস্তিমূলক বদলি করা কিছু শিক্ষককে কয়েকদিন আগে ফিরিয়ে এনে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। বিপরীত দিকে সরকারি দলের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্নিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। এ নিয়ে কয়েক দিনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে সরকারি কলেজ ও শিক্ষা-সংশ্নিষ্ট অফিসগুলোতে।

বুধবার (৩ এপ্রিল) সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাব্বির নেওয়াজ। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, নতুন বদলি ও পদায়ন নিয়ে এতটাই বিতর্ক তৈরি হয়েছে যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এটা নিয়ে এখন আর মুখ খুলতে চাইছেন না। জানা গেছে, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শীর্ষ দুটি পদ মাউশি মহাপরিচালক ও পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন)। এ দুটি পদে দু'জন কনিষ্ঠ কর্মকর্তাকে বসানো হয়েছে। তারা সারাদেশের প্রায় ৬০০ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের এসিআর লিখবেন।এই দু'জনই ১৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা। অথচ বর্তমানে সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম, একাদশ ও ত্রয়োদশ বিসিএসের কমপক্ষে দেড় হাজার কর্মকর্তা চাকরিতে রয়েছেন। এসব শিক্ষক এখন ক্ষুব্ধ। মাত্র সাত মাসে আগে অধ্যাপক পদোন্নতি পাওয়া একজনকে বসানো হয়েছে শিক্ষা প্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) পদে। রাজধানীর একটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, যারা এক সময় আমার অধীনে কাজ করেছে এখন তারাই আমার সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হয়ে বসেছেন। আগে কখনও সরকারি কলেজে

অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা না থাকলে তাদের মাউশির পরিচালক ও মহাপরিচালক পদে বসানো হতো না। অথচ এবার সেটাই হচ্ছে। এই অধ্যক্ষ আরও বলেন, এভাবে বদলি ও পদায়নের মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারকেই বিতর্কিত করে তোলা হয়েছে। 

বিসিএস স্বাধীনতা শিক্ষা সংসদের নেতারা বলেন, মাউশির মহাপরিচালকসহ শীর্ষপদে যারা আসীন আছেন তারা বর্তমানে চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা। তাদের গ্রেডেশন (জ্যেষ্ঠতা) এতই নিচে যে, সরকার ৫০ শতাংশ অধ্যাপককে তৃতীয় গ্রেড দিলেও তারা এটা পাবেন না। ফলে এত জুনিয়র কর্মকর্তাকে ঊর্ধ্বতন পদে পদায়ন করায় সিনিয়রদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে। কেননা, দাপ্তরিক কাজ ও যোগাযোগে সম্বোধন নিয়েই এ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে বেশি।

একাধিক শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা বলছেন, নতুন বদলি ও পদায়নে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত একটি সিন্ডিকেট শিক্ষা প্রশাসনে আবার পুনর্বাসন পেল। এই সিন্ডিকেটের নেতা সাবেক এক মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস)। তারা বলেছেন, এই এপিএস শিক্ষা ক্যাডারে ছিলেন। তিনি শিক্ষা ক্যাডারের বদলি ও পদায়ন করতে গড়ে তুলেছিলেন সিন্ডিকেট। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় ওই এপিএসকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সাবেক ওই এপিএস এখন আবার তার সিন্ডিকেট শক্তিশালী করেছেন। তার পছন্দের কর্মকর্তাদেরও গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে।

গত ২৪ মার্চ এক আদেশে ২৬ জনকে পদায়ন ও পৃথক আদেশে রেকর্ড সংখ্যক ১৮ জনকে একযোগে ওএসডি করা হয়। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মাউশিতে টানা চাকরি করে আসা অনেক কর্মকর্তাকে এবার বদলি করা হয়নি। অথচ বদলি করা হয়েছে ৩ বছরও হয়নি এমন কর্মকর্তাকে। ক্লিন ইমেজের কর্মকর্তা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা মুহাম্মদ জাকির হোসেন ও কামরুন নাহার। জাকির হোসেন সাধারণ প্রশাসন সহকারী পরিচালক এবং কামরুননাহার গবেষণা কর্মকর্তা ছিলেন। তিন বছর না হলেও তাদের অজ্ঞাত কারণে ওএসডি করা হয়েছে। কোনো অভিযোগ না থাকলেও উপপরিচালক (প্রশাসন) শফিকুল ইসলাম সিদ্দিকীকে ওএসডি করা হয়েছে। পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক হিসেবে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি থেকে কর্মরত অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। এর আগে তিনি ২০০৯ থেকে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জুলাই পর্যন্ত তিনি শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ছিলেন। ঘুরে ফিরে তিনি আছেন। তাকে বদলি করা হয়নি। সহকারী পরিচালক তাসলিমা সুলতানা আছেন ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে, দিলরুবা আক্তার আছেন ২০০৭খ্রিষ্টাব্দেরথেকে। এভাবে অনেক কর্মকর্তা ৫ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে মাউশিতে সহকারী পরিচালক (বিশেষ শিক্ষা) পদে পদায়ন পান ছিদ্দিকুর রহমান। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে হাইকোর্ট তাকে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন এবং তার কর্মকাে র জন্য তাকে তিরস্কার করেন। দুর্নীতি ও অসদাচরণের জন্য ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে তার বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভাগীয় মামলাও করেছিল। সর্বশেষ তিনি ছিলেন দুয়ারীপাড়ার একটি সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে। তাকে দেওয়া হয়েছে মাদ্রাসা বোর্ডের রেজিস্ট্রার হিসেবে। কামালউদ্দিন মাদ্রাসা বোর্ডের উপ-রেজিস্ট্রার ছিলেন। তাকে এই পদ থেকে সরানোর দাবি ছিল। তাকে দেওয়া হয়েছে আরও বড় পদে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে।

অধ্যাপক তপন কুমার সরকার ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বোর্ডে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হন সহকারী অধ্যাপক থাকা অবস্থায়। পরবর্তী সময়ে সিনিয়র প্রফেসর পদমর্যাদার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হন সহযোগী অধ্যাপক পদে থেকেই। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। তিনি এবার দায়িত্ব পেলেন আরও উপরের পদে ঢাকা বোর্ডের সচিব হিসেবে।

২৪ মার্চের নতুন বদলির আদেশ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আছে। আছে সরকারবিরোধী প্রচারণা এবং সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সভা-সমাবেশ করার অভিযোগ। যে কারণে বদলির আদেশ জারির পর থেকে ক্ষুব্ধ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে লেখালেখি করছেন। পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী এবং সচিবের কাছে প্রাইজ পোস্টিং পাওয়া কর্মকর্তাদের 'জীবনবৃত্তান্ত' তুলে ধরে চিঠি লিখেছেন অনেকে। তাতে কয়েকজনকে আওয়ামী বিরোধী আদর্শের এমনকি ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, বাসদসহ অন্যান্য সংগঠনের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে। নতুন বদলির ফলে শিক্ষা ভবনে আওয়ামীবিরোধী কর্মকর্তাদের আধিক্য বেড়েছে বলেও তাতে দাবি করা হয়েছে।

এ সব বিষয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি ও রাজধানীর সরকারি নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিমউল্লাহ খন্দকার বলেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে একই স্থানে আছেন, শিক্ষার স্বার্থে তাদের দ্রুত বদলি করা উচিত। এ ছাড়া মাউশির মহাপরিচালক, পরিচালক এবং বিভিন্ন বোর্ড ও দপ্তর-অধিদপ্তরের পদগুলোতে সাধারণত সিনিয়র শিক্ষকদের পদায়নের রেওয়াজ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এমনটি হওয়া উচিত নয়।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063600540161133