যশোরের চৌগাছা উপজেলায় সৈয়দপুর গ্রামের এসকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নতুন বই দেয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী অভিযোগটি তুলেছেন। জানা গেছে, চৌগাছা উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের এসকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সরকারি নতুন বই দেয়ার জন্য ২০০ করে টাকা নেয়া হয়েছে। টাকা না দিলে অনেকের দেরি করে বই দেয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন জানায়, সে ৯ম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা পেশায় একজন দরিদ্র কৃষক। টাকা দিতে না পারায় বছরের প্রথম দিনে তাকে বই দেয়া হয়নি। জানুয়ারী মাসের শেষের দিকে ২০০ টাকা দিয়ে সে বই নিয়েছে।৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইয়াসমিন খাতুন হিরা জানায়, তারা বাবা নেই। বই নিতে অনেক কষ্ট করে তার মা বই নিতে টাকা দেন। ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অনিক হোসেন সুমন জানায়, স্যারেদের ২০০ টাকা দিয়ে সে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনই বই নিয়েছে। বই নিতে এবারই সে টাকা দিয়েছে আগে কখনো এতো টাকা দিতে হয়নি।
এ ছাড়া ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জিসান হোসেন, ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাকিব হাসান, মেহেদী হাসান, তানিয়া খাতুন ও ৯ম শ্রেণী শিক্ষার্থী মারিয়া খাতুন সবাই একই কথা জানায়। তাদের বই নিতে ২০০ টাকা করে দিতে হয়েছে। সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, তার ছেলে সাব্বির হোসেন ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তিনি বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আক্তারুলের কাছে ২০০ টাকা দিয়ে বই নেন।
একই গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলামও জানান, ৮ম শ্রেণীতে পড়ে তার ছেলে। তিনিও ২০০ টাকা দিয়ে বই নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য জাহাঙ্গীর আলী জানান, তার মেয়ে পড়ে। তিনিও ২০০ টাকা দিয়ে বই নিয়েছেন। বইয়ের জন্য টাকা নেয়ার সিদ্ধান্ত শিক্ষক নিয়েছেন। এটা ম্যানেজিং কমিটির কোন সিদ্ধান্ত ছিল না। স্থানীয় ইউপি সদস্য সোবহানুল আলম বাবু জানান,তার মেয়ে পড়ে স্কুলে। বই নেয়ার তার মেয়েও ২০০ টাকা দিয়েছে। তবে,বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি বুঝতে পারেন বই নিতে কোন টাকা লাগে না। করোনার সময়ে দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ রয়েছে। তাই শিক্ষকরা বই দেয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছেন।
প্রধান শিক্ষক হানিফ আলী বলেন, বই দেয়ার সময় টাকা আদায় করা হয়েছে ঘটনাটি সঠিক। তবে সেটা বইয়ের জন্য না। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩০০ করে টাকা নেয়া হয়েছে সেটি বেতন ও অ্যাসাইমেন্ট বাবদ।
প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হারুন-অর-রশিদ বলেন, বই দেয়ার জন্য টাকা নেয়ার কোন সিদ্ধান্ত ম্যানেজিং কমিটিতে হয়নি। নিলে প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকরা ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছে। এর দায়ভার শিক্ষকদেরই নিতে হবে। চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, বই দেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কোন আইন নেই। এসকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বই দেয়ার জন্য টাকা নেয়া এ বিষয়টি নিয়ে তাকে জানাননি। তদন্ত করে সত্যতা মিললে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।