সেশন ফি’র টাকা পরিশোধ না করার অজুহাতে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার সৈয়দপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে চলতি শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের পাঠ্যবই দেয়া হয়নি। বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এ নিয়ে সহকারী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বইয়ের দাবিতে স্কুলের অফিস কক্ষে শিক্ষার্থীরা গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে অফিস থেকে দ্রুত বই দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, যমুনার ভাঙনে বিধ্বস্ত জালালপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচশত শিক্ষার্থী রয়েছে। বার্ষিক পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেয়া হয় নতুন বছরের বই নিতে হলে আগে পাঁচশত টাকা সেশন ফি নিয়ে আসতে হবে। এ টাকা দিতে বিলম্ব করায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল হামিদের নির্দেশে সপ্তম শ্রেণির ৯৫ জন, অষ্টম শ্রেণির ১৪১ জন ও নবম শ্রেণির ৯০ শিক্ষার্থীকে বই দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী আকাশ ও নবম শ্রেণির আরিফুল জানান, হেড স্যার বলেছেন টাকা না দিলে বই দেয়া হবে না। বিনামূল্যের বই নিতে কেন টাকা দিতে হবে? টাকা না দেয়ায় খালি হাতে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের স্থানীয় অভিভাবক রবি মোল্লা, সাহেদ আলী ও জমেলা খাতুন জানান, প্রধানমন্ত্রীর বিনামূল্যে বই বিতরণের নির্দেশ মানছেন না প্রধান শিক্ষক। তিনি টাকা না দিলে বই দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী বই না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। এটা দেখার কি কেউ নেই।
এ প্রতিবেদক সরজমিনে গেলে কয়েকজন শিক্ষক জানান, বিনামূল্যের বই নিতে টাকা দিতে হয় এমন নজির কোথাও নেই। বছরের প্রথম দিনেই বই বিতরণ করা হয়েছে সারাদেশে। তারা আরো বলেন, বই বিতরণের পরেও সেশন ফি আদায় করা যেত, তা না করে হেড মাস্টারের নির্দেশ মোতাবেক ১৪ দিন হল বই গোডাউনে তালাবদ্ধ রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বলেও জানান তারা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল হামিদ জানান, সরকারি নিয়ম মেনে অ্যাকাউন্ট খুলে সেশন ফির টাকা আগে উত্তোলনের কথা বলা হয়েছে। যারা বই পায়নি দ্রুতই তাদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হবে।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম শাহাদৎ হোসেন জানান, দ্রুত বই বিতরণে হেড মাস্টারকে বলা হয়েছে। তারপরও রোববার বিদ্যালয়ে গিয়ে বই বিতরণে বিলম্বের কারণ তদন্ত করা হবে। শাহজাদপুরের ইউএনও শাহ শামছুজ্জোহা জানান, বিনামূল্যে যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই দিতে সবাইকে নির্দেশ দেয়া আছে। এর ব্যত্যয় কেউ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার বেশির ভাগ শিক্ষার্থী নতুন বছরের পাঠ্যবই এখনো হাতে পায়নি। পঞ্চম শ্রেণি থেকে যারা ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠছে তাদের নতুন স্কুলে ভর্তির পরপরই বই পাওয়ার স্বাদ এখনো নিতে পারেনি। উপজেলার শুধু ষষ্ঠ শ্রেণিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বইটি ছাড়া আর কোনো বই এখনো তারা হাতে পায়নি। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জেলা শহরগুলোতে অনেক আগেই বই পেয়ে গেছেন শিক্ষার্থীরা। অথচ উপজেলা পর্যায়ে এখনো অধিকাংশ পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছায়নি বলে জানায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।