বোর্ড পরীক্ষার খাতা হারানোর তথ্য গোপন করে টাকার বিনিময়ে ইচ্ছেমতো নম্বর দেয়ার অপরাধে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পেয়েছেন শুধু 'তিরস্কার দণ্ড'। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক আদেশে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে সবচেয়ে লঘু এই 'দণ্ড' দেওয়া হয়। অফিস আদেশে বলা হয়, ড. সুশীল কুমার পালের বিরুদ্ধে 'অসদাচরণের' বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। তবে তিনি ভুল স্বীকারসহ ক্ষমা প্রার্থনা করায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৪(ক) অনুযায়ী লঘুদণ্ডের আওতায় উপবিধি ২(ক) অনুসারে 'তিরস্কার' দণ্ড প্রদান করা হলো।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভাগীয় মামলার ক্ষেত্রে লঘু ও গুরু দুই ধরনের দণ্ড দেওয়া হয়। লঘুদণ্ডের মধ্যে সবচেয়ে লঘু হলো 'তিরস্কার'। এর উপরের লঘুদণ্ড হলো ইনক্রিমেন্ট বন্ধ, কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পদোন্নতি স্থগিত ইত্যাদি।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে জানা গেছে, সুশীল কুমার পাল পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালনকালে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট (বিএম) পরীক্ষার প্রায় দুই হাজার উত্তরপত্র হারানোর ঘটনা ঘটে। তারপরও তিনি নিয়মানুগ কোনো পদক্ষেপ নেননি। উল্টো কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নিজস্ব পদ্ধতি অনুসরণ না করে হারানো উত্তরপত্রের বিপরীতে নম্বর দেওয়ার ব্যবস্থা নেন। সে সময় অভিযোগ ওঠে, আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে তিনি হারানো উত্তরপত্রের বিপরীতে নম্বর দিয়েছেন।
এ ঘটনায় সুশীল কুমারের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী 'অসদাচরণ'-এর অভিযোগ দাখিল করা হয় কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে। বিষয়টি আমলে নিয়ে মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের মাধ্যমে তদন্ত করা হয়। এ ঘটনার পর বোর্ড থেকে তাকে বদলি করা হয়। বর্তমানে তিনি মুন্সীগঞ্জ সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ড. সুশীলের বক্তব্য, সরকারপক্ষের বক্তব্য এবং সংশ্নিষ্ট নথি ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে অভিযোগের সত্যতা মেলে। এ ঘটনা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। তবে নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে তার জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে ড. সুশীল কুমার পালকে বারবার ফোন করা হলেও ফোন রিসিভ হয়নি। তবে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোরাদ হোসনে মোল্লা জানান তিনি বোর্ডে যোগদানের আগেই এ ঘটনা ঘটেছিল।