যশোরের চৌগাছায় করোনাভাইরাসের টিকা নিতে স্কুল শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলা পরিষদের হলরুমে শিক্ষার্থীরা টিকা নিতে আসলে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। সকাল সাড়ে সাতটায় প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী একত্রে টিকা নিতে আসলে ধাক্কাধাক্কি, চিৎকার, চেচামেচিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়। পরে সকাল দশটা থেকে তাদের টিকা দেয়া হয়।
এদিকে সকালে কেন্দ্রে আসলেও অনেক শিক্ষার্থীর টিকা পেতে দুপুর হয়ে যায়। বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের অবহেলা এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসের ব্যর্থতার জন্য শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পরতে হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন অভিভাবকরা।
জানা গেছে, গত ১২ জানুয়ারি থেকে চৌগাছায় শিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকা দেয়া শুরু হয়। সেদিন যশোরে টিকা না থাকায় বাগেরহাট থেকে টিকা এনে তা দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের। যশোরে টিকা না থাকায় ১৩ জানুয়ারি টিকা দেয়া বন্ধ রেখে ১৫ জানুয়ারি একদিনে ৪ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। কথা ছিলো ১৫ তারিখে যাদের টিকা দেয়ার কথা সেসব স্কুলের শিক্ষার্থীদের আগে টিকা দেয়া হবে। এরপর যাদের ১৩ তারিখে টিকা দেয়ার কথা ছিলো তাদের টিকা দেয়া হবে। কিন্তু সকাল সাতটার মধ্যেই শহরের সরকারি শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী উপজেলা পরিষদ চত্বরে চলে আসলে সব মিলিয়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ভিড় জমে যায়। এতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। কিন্তু এসময় শিক্ষার্থীদের সামলাতে কোনো ব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায়নি। পরে অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ঢাকেন। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে চলে যাওয়ায় তাদের পাওয়া যায়নি। শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দুইজন আনসার সদস্যকে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মোতায়ন করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, শিডিউল ভেঙে একটি স্কুলের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী সকাল সাড়ে সাতটার সময় উপজেলা পরিষদ চত্বরে চলে আসে। অথচ এই শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিদ্যালয়টির কোনো শিক্ষক সেখানে ছিলেন না। ফলে শিক্ষার্থীরা বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি করে। তারা ধাক্কাধাক্কি, চিৎকার, চেচামেচি করে পরিবেশ উত্তপ্ত করে তোলে। এতে দূর দুরান্ত থেকে আগত শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ে। অনেক শিক্ষার্থী সকাল সাতটায় উপজেলা পরিষদে আসলেও দুপুর দুইটা পর্যন্ত টিকা নিতে পারে নি।
চৌগাছা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল আহমেদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, যশোর সিভিল সার্জন অফিস থেকে সকাল সাড়ে সাতটায় টিকা দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে পৌনে নয়টায়। চৌগাছায় এনে টিকা দেয়া শুরু হয়েছে সকাল দশটা থেকে। আগে থেকেই সকাল আটটা থেকে শিডিউল থাকায় দুই ঘণ্টায় যেসব শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার কথা ছিলো তারাসহ অন্যরা একসাথে এসে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম রফিকুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করা হয়েছে, সমস্যা হবে না। তিনি আরও জানান, সকালে টিকা আসার কথা ছিলো ৮টায়, তা এসেছে ১০টায়। এছাড়া সরকারি শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা কাগজপত্র উল্টাপাল্টা করে রাখার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সামনে এমন বিশৃঙ্খলা আর হবে না বলে আশা করছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার লাকি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব শিক্ষা অফিস ও শিক্ষকরা নিয়েছেন। আমার কর্মীদের শুধুমাত্র টিকা দেয়ার কথা। অভিযোগ শুনে সকালেই সেখানে যাই। তখন শিক্ষকরা জানান, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। এরপরও অভিযোগ আসতে থাকলে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ পেতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) অফিসিয়াল মোবাইলে কল করা হয়। এসময় একজন নারী উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফোন ধরে পুলিশ সদস্যরা নির্বাচনী দায়িত্বে গেছেন বলে জানান। শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তার দুই জন আনসার সদস্যকে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয়।