টিকা : শিক্ষকদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে শিক্ষার্থীরা - দৈনিকশিক্ষা

টিকা : শিক্ষকদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দেশে কলেজ ও মাদরাসার ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা নেওয়ার হার খুবই সামান্য। এ ধরনের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৪০ হাজারের মতো। এদের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫ লাখ ও মাদরাসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ হাজার। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৪ হাজার শিক্ষার্থী প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন। তারা সবাই মাদরাসার শিক্ষার্থী। অবশিষ্ট ১৫ লাখ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীর মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই। তারা টিকার জন্য নিবন্ধনই করতে পারেননি। অবশিষ্ট ১০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ঠিক কী পরিমাণ শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছেন, সে তথ্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে নেই।

মাদরাসা ও মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের টিকার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, টিকায় শিক্ষকদের তুলনায় শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে। কলেজ পর্যায়ে টিকার উপযোগী শিক্ষার্থীদের তিন ভাগের এক ভাগের এনআইডি নেই। তারা টিকার জন্য নিবন্ধনই করতে পারেনি। ২ ভাগ শিক্ষার্থীর এনআইডি থাকলেও তাদের মধ্যে ঠিক কী পরিমাণ টিকা নিয়েছেন, সে তথ্য জানা নেই কারও।

একইভাবে টিকার উপযোগী মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে টিকা নিয়েছেন মাত্র এক ভাগ। তারাও দ্বিতীয় ডোজ এখনো পাননি। অবশিষ্ট নয় ভাগ শিক্ষার্থী ঠিক কবে টিকা পাবেন, তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

১৮ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা নেওয়ার এমন হতাশাজনক অবস্থার মধ্যেই আজ রোববার দেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুল-কলেজ-মাদরাসা খুলছে। দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর সরকার এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিলেও টিকা উপযোগী শিক্ষার্থীদের টিকার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি। এমনকি টিকা দিতে পারেনি এসব প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। তবে শিক্ষার্থীদের তুলনায় শিক্ষকদের টিকাগ্রহণের হার অনেক বেশি। মোট শিক্ষকদের ৭০-৮০ শতাংশই টিকা নিয়েছেন।

এমন অবস্থায় সব শ্রেণির  শিক্ষার্থীদের সতর্ক থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি  বলেন, ছয় বছরে শিশুদের স্কুলে পাঠানোর দরকার নেই। ৬-১২ বছরের শিশুরা স্কুলে যাবে। মাস্ক পরবে, স্বাস্থ্যবিধি মেলে চলবে। পাশাপাশি ১২-১৮ বছরের শিক্ষার্থীদের পুণ্য বয়স্ক মানুষের মতো সকল কিছু মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, শিশুরা কখনো আক্রান্ত হয় না। যারা নানা সমস্যা, রোগবালাইয়ে ভোগে তারাই আক্রান্ত হয়। আমাদের দেশে সামনে যে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসবে তাতে শিশুদের চেয়ে বয়স্করাই বেশি আক্রান্ত হবেন। এতে আমাদের শিক্ষক, কর্মচারী-কর্মকর্তাদের পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের টিকা নিতে হবে। 

মাদরাসাশিক্ষার্থী টিকা নিয়েছেন মাত্র ৪ হাজার : মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি এবং এমপিওভুক্ত ও নন-এমিপিওভুক্ত মাদরাসায় মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ১২ হাজারের মতো। এদের মধ্যে টিকা নেওয়ার বয়স হয়েছে অর্থাৎ ১৮ বছর ঊর্ধ্ব বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ হাজারের কাছাকাছি। তাদের মধ্যে মাত্র ৪ হাজার শিক্ষার্থী টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। অবশিষ্ট ৩৬ হাজার এখনো কোনো টিকা পাননি।

উচ্চ মাধ্যমিকের ৫ লাখ শিক্ষার্থীর এনআইডি নেই : দেশে কলেজ পর্যায়ে ১৮ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী শিক্ষার্থীর সঠিক কোনো তথ্য নেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে। তবে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ধারণা দিয়েছেন, কলেজ পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ লাখের মতো। এদের মধ্যে ১৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছরের বেশি।

তবে কলেজ পর্যায়ে ১৮ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫ লাখের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক। এনআইডি না থাকায় এসব শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারছেন না। তবে ঠিক কী পরিমাণ শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছেন, সে তথ্য দিতে পারেননি এই কর্মকর্তা।

৭০-৮০ শতাংশ শিক্ষক টিকা নিয়েছেন : টিকার উপযোগী শিক্ষার্থীদের তুলনায় শিক্ষকরা টিকায় অনেক এগিয়ে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সেখানে মোট শিক্ষক রয়েছেন ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭১২ জন। আর ১৬ হাজার ৭৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এসব স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ১০ হাজার ৩০০ জন করোনা টিকার দুটি ডোজ পেয়েছেন। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে পেয়েছেন ১৩ হাজার ৬৬৩ জন। সব মিলিয়ে ৮৫ শতাংশ টিকা পেয়েছেন।

শিক্ষকদের মধ্যে এখনো টিকার বাইরে রয়েছেন ৫৫ হাজার ৪১২ জন। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে টিকা পাননি ২ হাজার ৪১১ জন। এদের মধ্যে অনেকে রেজিস্ট্রেশন করলেও টিকা পাননি। অনেকে আবার অসুস্থতার কারণে টিকা নিচ্ছেন না।

এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের সব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ৮৫ শতাংশ টিকার আওতায় এসেছে। বাকি ১৫ শতাংশ গর্ভবতী, অসুস্থ ও অন্যান্য জটিলতার কারণে টিকা নেননি। তারাও টিকা নিতে পারবেন। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বলেন, বয়সভিত্তিক ধাপে ধাপে টিকা দেওয়ার কারণে এখনো ১৫ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারী টিকার বাইরে রয়েছে। তবে কোনো কোনো জেলায় ৯০ শতাংশের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী টিকার আওতায় এসেছেন। আমরা কড়া নির্দেশনা দিয়েছি, যারা টিকা নিচ্ছেন না তারা কেন নিচ্ছেন না তার কারণসহ রিপোর্ট পাঠাতে।

মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম রুহুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, আমি রাজধানীর কয়েকটি মাদরাসা পরিদর্শন করেছি। সারা দেশে আমাদের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে আমরা ২২ দফা নির্দেশনা দিয়েছি। ডকুমেন্টারি ফিল্ম দিয়েছি। কেউ করোনা আক্রান্ত হলে কী করবেতার নানা ধরনের নির্দেশনা দিয়েছি। আজ (গতকাল) ঢাকায় তিনটি মাদরাসা ঘুরেছি। সবাই বেশ সতর্ক। সেখানে শিক্ষকরা টিকা পেয়েছেন জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের জন্য নানা ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়েছেনপরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, হাত ধোয়ার বেসিন রাখা, শ্রেণিকক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসার ব্যবস্থা ইত্যাদি।

এই কর্মকর্তা জানান, এমপিওভুক্ত মাদরাসার শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১ লাখ ৫২ হাজারের মতো। তাদের মধ্যে ১ লাখ ২৮ হাজার প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন। নন-এমপিওভুক্ত মাদরাসায় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৩০ হাজারের মতো। ৭০ শতাংশের বেশি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী টিকা নিয়েছেন। তবে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার হার কম।

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043718814849854