সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি খুলতে শুরু করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসেই বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের তথ্য থাকলেও কত শতাংশ টিকা নিয়েছেন সে তথ্য নেই ইউজিসির কাছে। তবে অনেক শিক্ষার্থী যেমন টিকা নিয়েছেন, অনেকে আবার রেজিস্ট্রেশন করে এসএমএস না আসায় অপেক্ষায় আছেন।
১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বর্তমানে ৯৯টির শিক্ষা কার্যক্রম চলমান। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই লাখ ৭৪ হাজার। গতকাল সোমবার পর্যন্ত ইউজিসির হাতে ৭০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য এসেছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লাখ ২৯ হাজার ৬৯৯ জন শিক্ষার্থী জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র নেই এমন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩২ হাজার ৮৩৮ জন ইউজিসির ওয়েব লিংক ‘ইউনিভ্যাক’-এ রেজিস্ট্রেশন করেছেন। সব মিলিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৫৯.৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী। বুধবার (১৩ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, বড় কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রেশনের হার ৫৯ শতাংশের বেশি। আর এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী এক ডোজ এবং অনেকে দুই ডোজ টিকাও নিয়েছেন।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য প্রফেসর ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনলাইনে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি চলছে। অন-ক্যাম্পাসে লেখাপড়া শুরু করতে আমরা টিকা নেওয়ার ওপর নির্ভর করছি। কারণ আমাদের কাছে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা আগে। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি টিকাকেন্দ্র স্থাপন করতে। সেটা না হলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ডেজিগনেটেড টিকা কেন্দ্র থাকুক। এ ব্যাপারে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর টিকা দেওয়ার পর আমরা সরাসরি ক্লাস চালু করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত টিকার তথ্য আপডেট হচ্ছে। আমাদের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছে। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ টিকা নিয়েছে। এসএমএস না আসায় অনেকে টিকার জন্য অপেক্ষা করছে। সমস্যা হলো যাদের এনআইডি নেই, তাদের নিয়ে।’
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রায় ১৭ হাজার। বিশ্ববিদ্যালয়টির স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রায় শতভাগই টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে। যাদের এনআইডি নেই তারা ইউজিসির ওয়েবলিংক ইউনিভ্যাকে রেজিস্ট্রেশন করেছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছে। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী। গত ৯ অক্টোবর থেকে অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের সরাসরি ক্লাস শুরু হয়েছে। আগামী ১৬ অক্টোবর থেকে শ্রেণিকক্ষে সব শিক্ষার্থীর ক্লাস শুরু হবে।’
এত শিক্ষার্থীকে কিভাবে টিকার আওতায় আনা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক আগেই ভ্যাকসিন সাপোর্ট সেন্টার করেছি। শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনাটা আমরা অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে নিয়েছি। কোনো শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করতে দেরি করলে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। শিক্ষার্থীদের গণটিকায় উৎসাহিত করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার শর্ত হিসেবে টিকা নিতে বলেছি। সব মিলিয়ে আমাদের বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছে।’
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক আবু সাদাত বলেন, ‘পাঁচ হাজারের বেশি আমাদের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে। দুই ডোজ টিকা নিয়েছে এক হাজার শিক্ষার্থী। আর এক ডোজ টিকা নিয়েছে ৮০০ শিক্ষার্থী। রেজিস্ট্রেশন করে টিকার জন্য অপেক্ষায় আছে এক হাজার ৭০০ শিক্ষার্থী। যাদের এনআইডি নেই এমন ৮০০ শিক্ষার্থী ইউজিসির ওয়েবলিংক ইউনিভ্যাকে রেজিস্ট্রেশন করেছে। আগামী ২ নভেম্বর থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি ক্লাস শুরু হবে।’
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক আল আমিন শিকদার শিহাব বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থী ছয় হাজারের বেশি। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ দুই ডোজ টিকা নিয়েছে, ৩০ শতাংশ নিয়েছে এক ডোজ। বাকি ১০ শতাংশের বেশির ভাগ রেজিস্ট্রেশন করে টিকার জন্য অপেক্ষা করছে। শতভাগ শিক্ষক-কর্মচারী টিকা নিয়েছেন। গত ৯ অক্টোবর থেকে আমাদের অন ক্যাম্পাস ক্লাস শুরু হয়েছে।’
গত ২৩ সেপ্টেম্বর ইউজিসি এক বিজ্ঞপ্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে বাধা নেই বলে জানায়। তবে তারা দুটি শর্ত দেয়। প্রথমটি হচ্ছে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের এক ডোজ টিকা নিতে হবে বা টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে যেসব শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তাঁদের ইউজিসির ওয়েবলিংক ইউনিভ্যাকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ‘সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই দুটি শর্ত পূরণ করলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যাবে বলে আমরা জানিয়েছি। এরই মধ্যে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে। এ মাসেই বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে বলে আমাদের জানিয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নিবে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল। কত শিক্ষার্থী টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে, সে তথ্য আমরা সংগ্রহ করতে শুরু করেছি। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। যারা ইউনিভ্যাকে রেজিস্ট্রেশন করেছে, তাদের কিভাবে টিকার আওতায় আনা যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে।’