তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক বিশেষায়িত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির (বিডিইউ) অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সেশনজটমুক্ত উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা। যদিও কার্যক্রম শুরুর তিন বছরে শিক্ষার্থীদের অনলাইন পরীক্ষা পদ্ধতিতে আগ্রহী করতে পারেনি ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। বিডিইউর নিজস্ব একটি জরিপের তথ্য বলছে, সেখানকার ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীই অনলাইনে আয়োজিত পরীক্ষায় অংশ নিতে অনাগ্রহী।
জানা যায়, করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে অনলাইনে দুটি সেমিস্টারের পাঠদান কার্যক্রম শেষ করেছে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে সশরীরে কয়েকটি কোর্সের সেমিস্টার পরীক্ষা নিলেও করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে সেটি স্থগিত করতে হয়। নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় সম্প্রতি অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের মতামত জানতে একটি জরিপ পরিচালনা করে কর্তৃপক্ষ। অধ্যয়নরত ২০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে জরিপে অংশ নেন ১৬৮ জন শিক্ষার্থী।
জরিপের ফলে দেখা যায়, অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে মত দেন মাত্র ৩৩ জন। বাকি ১৩৫ জনই সশরীরে পরীক্ষায় অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। অর্থাৎ তথ্য-প্রযুক্তিকেন্দ্রিক বিশেষায়িত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীই অনলাইনে পরীক্ষায় বসতে অনাগ্রহী। শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারছে না এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
জরিপের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, এমন নয় যে আমাদের অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার সক্ষমতা নেই। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণের সব ধরনের প্রস্তুতি ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীরা আগ্রহী না হওয়ায় পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা অনলাইনে শিক্ষার্থীদের মতামত সংগ্রহ করি। সেখানে অধিকাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার বিপক্ষে মত দেয়। এজন্য আমরা অনলাইনে পরীক্ষা নিইনি।
ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইন পরীক্ষায় অনাগ্রহের কারণ ব্যাখ্যা করে মুনাজ আহমদ বলেন বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে টানা দুটি সেমিস্টারের পাঠদান অনলাইনে সম্পন্ন করেছি। শিক্ষার্থীরা সেখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে। আসলে অনলাইনে টানা ক্লাস করে শিক্ষার্থীরা এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
অনলাইনে পরীক্ষা নিতে না পেরে সম্প্রতি সশরীরে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। গত শনিবার একাডেমিক কাউন্সিলের সভা করে আগামী আগস্ট থেকে সশরীরে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আগস্ট থেকে সশরীরে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিডিইউ অনুমোদন পায় ২০১৬ সালে। সংসদে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিল উত্থাপন হলে এ বিষয়ে ব্যাপক আশা প্রকাশ করে ভিন্নধর্মী একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী ও তত্কালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। যদিও কার্যক্রম শুরুর পর থেকে অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই এগোচ্ছে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ও।