ডিজিটাল শিক্ষাই সমাধান:  আমিরুল আলম খান - দৈনিকশিক্ষা

ডিজিটাল শিক্ষাই সমাধান: আমিরুল আলম খান

আমিরুল আলম খান |

‘একবিংশ শতকে মানুষ সামগ্রিক শিক্ষা অথবা বিভাজিত শিক্ষা ব্যবস্থার কোন্‌টি বেছে নেবে? অনেকের মতে, এখনকার কেন্দ্রীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা তখন ভেঙে যাবে। বৃহদায়তনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান দখল করবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিশ্ববিদ্যালয়। কম্পিউটার সহযোগে মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞান, দক্ষতা আয়ত্ত করবে ঘরে বসেই।

শিক্ষা গ্রহণের জন্য সাত সাগর তের নদী পার হওয়া নিষ্প্রয়োজন হয়ে পড়বে। কম্পিউটার, ইন্টারনেট প্রযুক্তি ঘরে বসেই বিশ্বের যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা গ্রন্থাগারের বই-পুস্তক পাঠের সুযোগ ইতিমধ্যে অনেকটা মানুষের নাগালের মধ্যে এনে দিয়েছে। আগামী শতকের নতুন নতুন প্রযুক্তি এ সবকিছুকে পরিণত করবে ইতিহাসের সামগ্রীতে।

নতুন নতুন প্রযুক্তি তার স্থান দখল করবে।’ ১৯৯৯ সালে কথাগুলো লিখেছিলাম যশোর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ বার্ষিকীতে। বাংলাদেশে তখনও কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়নি। গত ২৩ সেপ্টেম্বর দৈনিক সমকালে অজয় দাশগুপ্তের ‘ক্লাস ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়ে, শুনছে গ্রামের কলেজে’ শিরোনামে উপসম্পাদকীয় পাঠ করে আমার নিজের এই লেখাটির কথা মনে পড়ল। আমার সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে শিক্ষার স্বরূপ সন্ধান’ বইয়ে ‘একুশ শতকের শিক্ষা’ শিরোনামে প্রবন্ধটি সংকলিত হয়েছে।


বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে ঘনায়মান দুর্যোগে প্রযুক্তির যৌক্তিক ব্যবহার আমাদের উদ্ধার করতে পারে। সে আলোচনায় পরে আসছি।
প্রথমেই বলি, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই দেশে উচ্চশিক্ষা প্রসারের তাগিদ অনুভূত হয়। সেদিনের চাহিদা পূরণে একজন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট সিনেট সদস্য হিসেবে অজয় দাশগুপ্ত বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা বিস্তারে এক দুঃসাহসী প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। তখনকার চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে দেশে প্রথিতযশা ১০-১২টি কলেজে অনার্স কোর্স চালুর জন্য তিনি যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, তার সুফল আমরা এখন ভোগ করছি।

পৃথিবীর দেশে দেশে কলেজেই উচ্চস্তরের শিক্ষাদানের কাজটি সম্পম্ন হয়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হলো গবেষণা করা, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা। দুর্ভাগ্যক্রমে ঔপনিবেশিক শাসনের সুবিধার্থে ভারতীয় উপমহাদেশে সে নীতি অনুসৃত হয়নি এবং বিশ্ববিদ্যালয় এ উপমহাদেশে সত্যিকার অর্থে গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়নি। তার পরও পরাধীন ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা ও গবেষণায় যেটুকু অবদান রেখেছিল; স্বাধীন বাংলাদেশে তা বলতে গেলে নির্বাসিত।

অজয় দাশগুপ্ত ‘ক্লাস ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়ে, শুনছে গ্রামের কলেজে’ শিরোনামে যে নিবন্ধটি সমকালে প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তার গুরুত্ব অপরিসীম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ চীনের পিয়েনজিনের একটি রেস্তোরাঁ থেকে নেদারল্যান্ডস থেকে পরিচালিত একটি ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে। এ কনফারেন্সে আরও যুক্ত হন ঘানা, ফিলিপাইন, শ্রীলংকা ও জর্ডানের প্রতিনিধিরা। বর্তমান বিশ্বে এটি একটি অতি সাধারণ ঘটনা। কিন্তু যে খবরটি আমাদের উৎসাহিত করেছে তা হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনোসাইড স্টাডিজে ইতিমধ্যে ভিডিও কনফারেন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্লাস নেওয়া শুরু হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ নিয়ে দেশে দেশে যারা গবেষণা করেন, তাদের কয়েকজন নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন।

তারা ক্লাস পরিচালনা করেন কেউ আমেরিকা থেকে, কিউবা ভারত বা কম্বোডিয়া থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য তাদের লাখ লাখ টাকা ও সময় ব্যয় করে ঢাকা আসতে হয় না।
অজয় দাশগুপ্ত স্বপ্ন দেখছেন, বাংলাদেশের সেরা শিক্ষকরা যখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান, সেটি প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে গ্রামের কলেজে সম্প্রচার ও অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা গেলে আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা হতে পারে।

এ লেখা পড়ে আমি ফোন করে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছি, শুধু সদিচ্ছা থাকলেই এ স্বপ্ন পূরণ সম্ভব। আমার ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলতে চাই।
২০১০ সালে আমি ভারতের কেরালা রাজ্যের কোচিতে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ ওপেন ফোরাম কনফারেন্সে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আমরা চার প্রতিনিধি স্থানীয় কিছু শিক্ষককে অনুরোধ করি কেরালার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষত মাধ্যমিক শিক্ষা বিষয় প্রত্যক্ষ করার ব্যবস্থা করতে। আমরা কোচি শহরের একটি সহশিক্ষা ও একটি বালিকা বিদ্যালয় পরিদর্শন করি। বালিকা বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির পাঠদান ছিল অভিভূত হওয়ার মতো।

তাত্ত্বিক আলোচনা সামান্য, শিক্ষার্থীরা সব শিখছে হাতেকলমে। আমাদের পরিদর্শন ছিল আকস্ট্মিক। কাজেই সেখানে সাজানো কিছু দেখানোর সুযোগ ছিল না। আমরা দেখলাম, সপ্তম শ্রেণিতে মেয়েরা টিভি প্রোগ্রাম শিক্ষার জন্য নিজেরাই স্ট্ক্রিপ্ট রচনা, সম্পাদনা, ক্যামেরা শুটিং ও সম্প্রচারের কাজ করছে। শিক্ষক তা পর্যবেক্ষণ করছেন, নোট রাখছেন। শেষে তিনি কোথায় কী কী বিষয়ে আরও সতর্ক এবং কী কী সংশোধন দরকার সে বিষয়ে দরকারি পরামর্শ দিলেন।

আমরা কেরালার মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করলে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় কোচি জেলার টিচার্স ট্রেনিং কলেজে। কেরালায় ১৪টি জেলায় ১৪টি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ আছে। রাজধানী ত্রিবানদ্রাম থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে ট্রেনিং পরিচালনা করা হয় এবং ১৪টি কেন্দ্রের সব প্রশিক্ষণার্থী তা সরাসরি দেখতে, শুনতে পারেন এবং প্রশ্ন ও অংশগ্রহণ করতে পারেন। শুধু তাই নয়; অংশগ্রহণকারী কেন্দ্রের যে কোনো প্রশিক্ষণার্থী অপর যে কোনো কেন্দ্রের যে কোনো প্রশিক্ষণার্থীর সঙ্গেও মতবিনিময় করতে পারেন। আমরাও সে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে অংশ নিয়ে মূল কেন্দ্রের পরিচালক, অন্যান্য কেন্দ্রের প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করি। গোটা ব্যবস্থাটি পরিচালনার জন্য কেরালা রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে উৎক্ষেপিত একটি স্বতন্ত্র উপগ্রহ কাজ করছে।

শুধু কেরালা কেন, বাংলাদেশে মাগুরা জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম ন’হাটা। সেখানে নুহাট স্কুুল অব সায়েন্স শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান করেন ড. মাম্নান মৃধা। তিনি সুইডেনের ভুবনবিখ্যাত KTH Royal Institute of Technology-Gi Bio-Medical Engineering বিভাগের অধ্যাপক। নিজ গ্রাম ন’হাটায় তিনি স্থাপন করেছেন প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন স্টকহোম থেকে তিনি স্কাইপ ব্যবহার করে পাঠদান করেন। ড. মাম্নান মৃধাকে পেশাগত কাজে সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়াতে হয়। কিন্তু তিনি যেখানেই থাকেন, সেখান থেকেই নির্ধারিত ক্লাস পরিচালনা করেন। এ ক্ষেত্রে তাকে প্রায় সময় পুনর্নির্ধারণ করতে হয় এবং মেসেঞ্জারে তিনি তা শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেন। এ ছাড়া তিনি বিভিম্ন ভিডিও ক্লিপ তার বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত শেয়ার করেন, যাতে তারাও তা ব্যবহার করতে পারেন। ড. মাম্নান মৃধা শুধু প্রযুক্তি ব্যবহারেই তার দায়িত্ব সীমাবদ্ধ রাখেন না। শিক্ষাদানে তিনি প্রয়োগ করেন আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতিও। হার্বর্ট, ্ব্নুম, কেন রবিনসনের অংশগ্রহণমূলক সৃজনশীল শিক্ষাতত্ত্ব তিনি সাফল্যের সঙ্গে প্রয়োগ করেন, যেখানে শিক্ষার্থীরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে এবং তিনি তাদের জ্ঞানাল্প্বেষণে সহায়কের ভূমিকা পালন করেন মাত্র। তাই শিক্ষার্থীরা থাকে সর্বদা সক্রিয় এবং আবিস্কারের আনন্দে তারা শিক্ষালাভ করে। KTH Royal Institute of Technology আমন্ত্রণে ২০১৩ সালে আমি সুইডেনের KTH Royal Institute of Technology
পরিদর্শনের সুযোগ পাই। সেখানে কীভাবে প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষার বিস্তরণ হচ্ছে তা দেখার সৌভাগ্য হয় আমার।

বাংলাদেশে শিক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহার এখন অনেক সহজ। শুধু সদিচ্ছা থাকলেই তা করা সম্ভব। তবে আমি মনে করি, শুধু শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রায় পাঁচ কোটি শিক্ষার্থীর বাংলাদেশের নিজস্ব স্বতন্ত্র উপগ্রহ ব্যবস্থা থাকা উচিত, যা এ ধরনের শিক্ষা সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এভাবে আমরা আমাদের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করতে পারি।
শেষ করতে চাই আমার পূর্বোল্লিখিত প্রবন্ধের শেষ কথাগুলো দিয়ে- ‘একুশ শতকে পাঠ্যক্রম যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক হবে, সে কথা উল্লেখ না করলেও চলে। তখন মানুষের প্রয়াস হবে দক্ষতা অর্জনের। তবে কি মানবিক বা সামাজিক বিজ্ঞান পাঠের যুগের অবসান হতে যাচ্ছে? সম্ভবত তেমন পরিস্থিতি কোনোদিনই আসবে না। মানুষ যতই যন্ত্র আর প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠুক, সামাজিক মূল্যবোধের যতই পরিবর্তন ঘটুক, শিল্পকলাকে মানুষ কোনোদিনই অস্বীকার করতে পারবে না। শিল্পকলা মানুষকে দ্রষ্টার ভূমিকায় অধিষ্ঠিত করে। শিল্পকলার মৃতু্যর অর্থ বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার অবসান। তাই যতই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর হোক, মানুষকে তার মানবিক গুণাবলি বিকাশের লক্ষ্যে মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান পাঠ অব্যাহত রাখতেই হবে। তবে আর একটি মৌলিক বিষয়ের প্রতি মানুষকে অধিকতর মনোযোগী হতে হবে। তা হলো পরিবেশ ও জটিল বাস্তুসংস্থানবিদ্যা (Ecology)। মানুষ ইতিমধ্যে পরিবেশের দারুণ ক্ষতিসাধন করেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ যদি পরিবেশবান্ধব না হয়, তবে মানুষ ডেকে আনবে তার নিজেরই বিপর্যয়। পৃথিবীর বুক থেকে মানুষ নামক প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটবে। তাই একবিংশ শতাব্দীর পাঠ্যক্রমে পরিবেশ বিজ্ঞান হয়ে উঠবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
প্রযুক্তির যৌক্তিক ব্যবহারে আমরা যেন মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিদ্যাকে অবহেলা না করি।

আমিরুল আলম খান: সাবেক চেয়ারম্যান, যশোর শিক্ষা বোর্ড

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041329860687256