ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আমাদের প্রজন্মের জন্য আর্কাইভ বিশেষ - দৈনিকশিক্ষা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আমাদের প্রজন্মের জন্য আর্কাইভ বিশেষ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটা নিঃসন্দেহে এক বিরল সৌভাগ্য যে এই বিশ্ববিদ্যালয় তার ক্যাম্পাসজুড়ে ধারণ করে আছে এমন কিছু স্থান ও স্থাপনা, যেগুলো আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস ও আন্দোলনের নানা ঘটনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা।

নিবন্ধে আরও জানা যায়,  এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস তাই একই সঙ্গে আমাদের প্রজন্মের জন্য আর্কাইভ বিশেষ। এর স্থাপনাগুলো আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক বিধায় এগুলো আজ আমাদের জাতীয় সম্পদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাই এই ক্যাম্পাসের স্বত্বাধিকারী হলেও আরেক অর্থে তারা এই ঐতিহাসিক স্থানগুলোর দায়িত্ববান কাস্টডিয়ান। এসব স্থাপনার কোনো পরিবর্তন, সম্প্রসারণ ও প্রতিস্থাপন তাই এককভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল নয়। বরং এসবের ন্যূনতম কোনো পরিবর্তনে একটা জাতীয় ঐকমত্য খুবই জরুরি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সম্পূর্ণ অথবা আংশিক ভেঙে সে জায়গায় একটা আধুনিক (?) ও বর্ধিত আকারের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র নির্মাণের কথা ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

টিএসসি ভবন যেহেতু এ দেশের আধুনিক স্থাপত্যের সূচনালগ্নের এক অনন্য যাত্রা-স্মারক, তদুপরি ষাটের দশকের উত্তাল সংগ্রাম ও স্বাধীনতার বহু ঘটনার সাক্ষী এই ভবন, সেই হিসেবে ৫৬ বছরের পুরনো এই ভবন এখন একটা ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবেই জাতির আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

মিডিয়ায় প্রকাশিত টিএসসি ভাঙার খবরে তাই সমাজের নানা স্তরের মানুষ অন্তরে আহত হয়েছেন এবং টিএসসি ভবন অবিকৃত রাখার পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁদের আকাঙ্ক্ষা ও দাবির কথা ব্যক্ত করেছেন।

এমন একটা গণদাবির প্রেক্ষাপটে ঢাবি, ডিএমসি, বিএসএমএমইউ ও বুয়েট—এই চারটি পাশাপাশি ও সংলগ্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র নিয়ে একটা সমন্বিত পরিকল্পনা করাটা এখন সময়ের দাবি বলেও মনে হয়।

ঢাবির বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। শিক্ষকও প্রায় চার হাজার। বর্তমান টিএসসি ভেঙে ঠিক সেই জায়গায়ই এত বিপুলসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষকের জন্য প্রতুল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে একটা পরিপূর্ণ ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র বিনির্মাণের চিন্তাও খুব উপযোগী না-ও হতে পারে। কারণ এই সম্প্রসারণকাজে শুধু টিএসসির বর্তমান জায়গাও কিন্তু যথেষ্ট নয়। এর জন্য প্রয়োজন হতে পারে পাশের আণবিক শক্তি কমিশন ভবনসহ সংলগ্ন অন্য ক্ষুদ্র ও মামুলি স্থাপনাগুলোর স্থানকেও একীভূত করে সব পরিসরে একটা সমন্বিত পরিকল্পনা করা।

ঢেলে সাজানোর এই পরিকল্পনায় একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ইত্যাদি জাতীয় ও আবেগের স্থাপনাগুলোকেও চিন্তায় ও বিবেচনায় নিয়ে নকশা প্রণয়নের সম্পূর্ণ কাজটি একসঙ্গে করলেই শুধু তা সঠিক ও উপযোগী হওয়ার সম্ভাবনাকে বহুলাংশে বাড়িয়ে দেবে।

ইতিহাসের ঘটনাবলি, সময়ের চাহিদা ও স্থানের গুরুত্ব বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক স্থাপনাই টিএসসি, বাংলা একাডেমি ও শহীদ মিনার এলাকায় অযাচিত হিসেবে এখন প্রতীয়মান হয়। এগুলোর মধ্যে শহীদ মিনারের উত্তরে ছড়ানো-ছিটানো চার-পাঁচটি ভবন নিয়ে প্রাচীরঘেরা ত্রিভুজাকার টিচার্স কোয়ার্টারগুলো অন্যতম।

এ কথা মনে হওয়া খুবই যুক্তিসংগত যে প্রাচীর ভেঙে এই ভবনগুলো এখান থেকে স্থানান্তর করা আশু প্রয়োজন। তাহলে শহীদ মিনার থেকে টিএসসির মোড় অবধি পুরো পরিসরটিই উন্মুক্ত হয়ে পাশের জগন্নাথ হলের মাঠসহ একটা অবারিত চত্বরে পরিণত হবে। ২৫শে মার্চ ভোরে জগন্নাথ হলের মাঠে লাইন করে ছাত্রদের দাঁড় করিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক গুলি করে হত্যার ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে এই মাঠটিকেও শহীদ মিনার চত্বরের অঙ্গীভূত করা খুবই প্রাসঙ্গিক। এভাবে পরিকল্পনা করলে একদিকে এই পরিসর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে যেমন ভবিষ্যতে এক বিশ্বমিলনমেলা প্রাঙ্গণ হিসেবে তার উপযোগিতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হবে, অন্যদিকে ফেব্রুয়ারি মাস ছাড়াও একই সঙ্গে সারা বছরই এই এলাকা টিএসসির জনসমাগমস্থলের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

এরই মধ্যে ঢাবির মাস্টারপ্ল্যান নতুন করে গুছিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা আমরা শুনছি। এটা আশাব্যঞ্জক খবর। তাই এখনই সময়, নতুন করে নতুন চিন্তা দিয়ে এই এলাকাটির স্থাপনাগুলোর ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে একটা কালোপযোগী মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা।

বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে দেশের প্রথিতযশা অনেক স্থপতিই এই কাজে তাঁদের পেশাদারি সহযোগিতা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে কর্তৃপক্ষের ডাক পাওয়ার আশায় উন্মুখ হয়ে বসে আছেন। ডাক পেলে সংশ্লিষ্ট অন্য পেশাজীবীরাও নিশ্চিতভাবে এগিয়ে আসবেন।

আমরা জানি যে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের অনেক কার্যক্রম তথা এর পরিসরগুলোর ব্যবহার খণ্ডকালীন। দিনের অনেক সময় রিহার্সালের কক্ষ, ছোট সেমিনার হল এবং বছরের অনেক মাসই, বিশেষ করে অডিটরিয়ামগুলো ফাঁকা পড়ে থেকে। আমরা এ-ও জানি যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, বুয়েট ও বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়—এই চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান পাশাপাশি। তাই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একাধিক জায়গায় বিভিন্ন আকারের দুই বা ততোধিক ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র বানিয়ে এবং বিদ্যমান সুবিধাগুলো পরস্পরের টাইম শেয়ারিংয়ের ভিত্তিতে ব্যবহারের যদি চিন্তা করা হয়, তাহলে সব প্রতিষ্ঠানের জন্যই তা স্থানসংকুলানসহ অনেক বেশি কাঙ্ক্ষিত ও কার্যকর হতে পারে।

বুয়েটের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। বুয়েটের কোনো ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র নেই। তবে আছে একটা অডিটরিয়াম ও কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া। বছরে সাকল্যে হয়তো ৩০ দিন এই অডিটরিয়াম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অন্য সময় এটা অব্যবহৃত বা প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে।

বুয়েটের আছে একটা বিশালাকার জিমনেসিয়ামও। এই জিমনেসিয়াম তার সর্বোচ্চ ধারণ সক্ষমতায় কখনো ব্যবহৃত হয় না। একই কথা ঢাবির জিমনেসিয়াম ও সুইমিংপুলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী মাত্র এক হাজার। আর বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী বলা যায় হাতে গোনা? এই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই স্বল্পসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর জন্যও নেই কোনো ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র। তবে বিএসএমএমইউয়ের একটা অডিটরিয়াম রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে বুয়েট, ডিএমসি ও বিএসএমএমইউ যোগ করলে সব ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষক মিলে সাকল্যে সংখ্যাটা দাঁড়ায় প্রায় ৫৫ হজার। টাইম শেয়ারিং ও বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে আকারভিত্তিক একাধিক মিলনকেন্দ্র করলে তার ব্যবহারও যেমন ব্যাপক হয়, তেমনি পাশাপাশি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যই এই সুবিধা নিশ্চিত করা সহজ হয়।

চিন্তা যদি নতুন করেই করতে হয়, তাহলে বৃত্তের বাইরে এসে এই চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক্সট্রা কারিকুলাম কার্যক্রম ও মিলনায়তনের জন্য পারস্পরিক অংশীদারির ভিত্তিতে নতুন ও বিদ্যমান সুবিধাদির ব্যবহার নিশ্চিত করলে তা স্থানসংকুলানসহ ছাত্র-ছাত্রীদের বহুমাত্রিক মানসিক বিকাশ ও পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরো সুফল বয়ে আনবে বলে প্রতীয়মান হয়।

সুবিধাদি সমন্বয়ের এই প্রস্তাব তাই বিবেচনায় নিতে ও ভেবে দেখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সবিনয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি।

 

লেখক : তরিকুল ইসলাম, স্থপতি

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036258697509766