আগামী অর্থবছরের অনুন্নয়ন ব্যয় নির্বাহে ৮৩১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বাজেট অনুমোদন দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট। এর মধ্যে গবেষণাকেন্দ্রিক খাতগুলোতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। যদিও চলতি অর্থবছরে ৭৭৪ কোটি ২৮ লাখ ৪২ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ ছিল ৪০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট বাজেটের আকার বাড়লেও গবেষণা খাতে বরাদ্দ কমিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
গতকাল স্বাস্থ্যবিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সশরীরে সিনেটের অধিবেশন আয়োজন করা হয়। অধিবেশনে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দীন আহমেদ ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেট এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট উত্থাপন করেন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এ অধিবেশনে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এনাম উজ্জামানসহ সিনেট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অধিবেশন উপলক্ষে প্রকাশিত বাজেট বইয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গবেষণা মঞ্জুরি চলতি অর্থবছর ছিল ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা আগামী অর্থবছরের জন্য বাড়িয়ে ১১ কোটি টাকা করা হয়েছে। তবে গবেষণা সরঞ্জামাদি ক্রয়, শিক্ষা ও শিক্ষা উপকরণ ক্রয়, বিভাগীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়, রাসায়নিক দ্রব্যাদি ও শিক্ষকদের গবেষণা ভাতা বাবদ বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
সিনেট অধিবেশনে গবেষণা বরাদ্দে সমালোচনা করে সিনেট সদস্য ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, গবেষণা খাতে মঞ্জুরি বরাদ্দ মাত্র ১১ কোটি টাকা; এ অর্থ দিয়ে বড় কোনো গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ গবেষণা। সেই গবেষণাকাজে গুরুত্ব না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। এ সময় গবেষণা খাতে তহবিল সংগ্রহে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাজেট উপস্থাপনকালে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমাদের নিজস্ব আয় খুবই কম বিধায় বাজেট প্রণয়নে আমাদের অনেকাংশে নির্ভর করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনুদানের ওপর। ২০২০-২১ সালের মূল বাজেটে ইউজিসির নিয়মিত অনুদান ছিল ৭৪৮ কোটি ৬ লাখ টাকা, যা পরবর্তী সময়ে সংশোধিত হয়ে দাঁড়ায় ৬৬৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। চলমান মহামারীর কারণে আমরা বর্তমান বছরে অনেক কাজ শুরু বা সম্পন্ন করতে পারিনি বিধায় মূল বাজেটে প্রদেয় অর্থ খরচ হয়নি।
অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার অবস্থান নির্ণয়ের একটি শক্তিশালী সূচক হলো মৌলিক গবেষণা। মূলত টিচিং-লার্নিংয়ের পাশাপাশি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মৌলিক কাজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কার্যক্রমের উন্নয়নে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শতবর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে সরকার এক বিশেষ গবেষণা বরাদ্দ প্রদান করেছে। এর আওতায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মৌলিক গ্রন্থ ও জার্নাল প্রকাশনা এবং গবেষণা প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে অনলাইন ও অফলাইনের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখা হয়েছে। সেশনজটের ঝুঁকি মোকাবেলায় ‘ক্ষতি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ দুর্যোগ মোকাবেলায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধৈর্য, সাহস ও সঠিক পরিকল্পনায় সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। শিক্ষার সামগ্রিক ব্যবস্থাকে ডিজিটাইজেশনের আওতায় আনতে ‘ইউনিভার্সিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ তৈরি করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।