ঢাবিতে অনলাইন ক্লাস : সিলেবাস শেষ হয়নি ৫৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর - দৈনিকশিক্ষা

ঢাবিতে অনলাইন ক্লাস : সিলেবাস শেষ হয়নি ৫৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর

ঢাবি প্রতিনিধি |

নভেল করোনাভাইরাসজনিত মহামারীর কারণে গত বছরের মার্চ মাসে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও। শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে গত বছরের জুলাই মাস থেকে অনলাইনে ক্লাস নিতে শুরু করে বিভিন্ন বিভাগ। যদিও অনলাইনে প্রায় এক বছর ক্লাস শেষে পাঠ্যক্রমে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন বিভাগের ৫৩ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর এখনো সিলেবাস শেষ হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ হাজার ৭৩০ জন শিক্ষার্থীর ওপর জরিপটি চালায় গবেষণা সংসদের সোশ্যাল সায়েন্স টিম। জরিপে দেখা গেছে, ক্লাস-সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা থাকার পরও অধিকাংশ শিক্ষার্থীই পরীক্ষা দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

জরিপে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৮৫ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী মোবাইল ব্যবহার করে ক্লাস করেন। এদের মধ্যে ৬৪ দশমিক ১ শতাংশই মোবাইল ডাটার সাহায্যে ক্লাসে অংশ নেন। শেষ হওয়া অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে ভীষণ অসন্তুষ্টি দেখিয়েছেন ৪৬.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। সন্তুষ্ট শিক্ষার্থীর হার মাত্র ২ দশমিক ৭ শতাংশ। আবার ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে পরীক্ষা দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। জরিপে অংশ নেয়া ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন যে অনলাইনে ক্লাস করার মতো দক্ষতা তাদের নেই। দেখা গেছে, অনলাইনে অনুষ্ঠিত মিড-টার্ম বা সমমানের পরীক্ষায় বিভাগ থেকে সঠিক দিকনির্দেশনা পেয়েছেন ৬২ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ কোনো দিকনির্দেশনা পাননি। বাকি ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। তবে ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছেন যে তারা অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে আগ্রহী। তবে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলে প্রস্তুতির জন্য অন্তত ৩০-৪০ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। মাত্র ২ শতাংশ বলছেন যে তারা অনলাইনে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমানের স্নাতক সম্পন্ন হওয়ার কথা গত বছর। তবে মহামারীর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম স্থগিত হওয়ায় পিছিয়ে যান তিনি। সিলেবাস এখনো পরিপূর্ণভাবে শেষ হয়নি, যদিও সামনে ফাইনাল পরীক্ষা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি বলেন, মহামারীতে আমাদের ছুটি হয়ে যাওয়ায় কিছু ক্লাস অনলাইনে হয়েছে। আমাদের কারো সিলেবাসই এখনো পরিপূর্ণভাবে শেষ হয়নি। পরীক্ষা যদি অনলাইনে নিতেই হয় তাহলে যেন তা অ্যাসাইনমেন্ট আকারে নেয়া হয়, সে অনুরোধ করেন তিনি। তার মতে, নির্দিষ্ট সময় দিয়ে এভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হলে সেটি সবার জন্য ভালো হবে। কারণ যারা দুর্গম এলাকায় আছে তাদের ইন্টারনেট ব্যবস্থা ভালো না। আবার অনেকের হাতের কাছেই অনলাইনে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার মতো যথাযথ যন্ত্র বা সুবিধা নেই।

জরিপে আরো দেখা যায়, মাত্র ২৬ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের বিভাগ থেকে পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উপাত্ত পেয়েছেন। ১৬ শতাংশ কোনো কিছুই পাননি। বাকি ৩২ শতাংশ শিক্ষকদের কাছ থেকে ও ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ কিছু পরিমাণে পেয়েছেন।

অনলাইন পরীক্ষার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের মতামত ও পরামর্শও উঠে এসেছে এ জরিপে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই অ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রশ্নের ধরন অপেক্ষাকৃত সহজ করা ও সিলেবাস ছোট করার কথা বলেছেন। অল্প কিছু শিক্ষার্থী শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে বা অটোপ্রমোশনের কথা বলালেও প্রায় সবাই পরীক্ষায় সবার অংশগ্রহণ যেন নিশ্চিত করা হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে বলেছেন।

অনলাইন পরীক্ষার বিপক্ষে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা যত দ্রুত সম্ভব ক্যাম্পাস খুলে সশরীরে পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, দুর্বল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা, অপর্যাপ্ত ডিভাইস, বাড়ির প্রতিকূল পরিবেশ, অনলাইনে পরীক্ষায় সবার অংশগ্রহণের অনিশ্চয়তা, শ্রেণীবৈষম্য সৃষ্টি ও সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের সভাপতি নাসরিন জেবিন বলেন, জরিপটিতে দেখা গেছে অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী সিলেবাস শেষ করতে পারেননি। তবে এর জন্য শুধু অনলাইনে ক্লাস নেয়াই দায়ী নয়। স্বাভাবিক সময়েও অনেকে পরীক্ষার আগ মুহূর্তে সিলেবাস শেষ করেন। আমরা চেষ্টা করেছি জরিপে যেন সব বিভাগের সমান অংশগ্রহণ থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে। যাতে করে সঠিক তথ্য উঠে আসে।

সিলেবাস শেষ না হওয়ার বিষয়ে জরিপটি নিয়ে ঢাবির কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাওহিদা জাহান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আমরা শিক্ষার্থীদের অনলাইন পাঠ কার্যক্রমে যুক্ত করেছি তাদের শিক্ষাক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য। শিক্ষার্থীদের বিভাগ ও অনুষদ থেকে সীমিত পর্যায়ে কিছু সহায়তা করা হয়েছে। কিন্তু অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার মতো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনতে হবে। সেক্ষেত্রে ঢাবি গবেষণা সংসদের এ জরিপটি একটি প্রারম্ভিক ধারণা দেবে। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পরীক্ষা দেয়ার প্রতিবন্ধকতাগুলো আরো বিস্তৃতভাবে চিহ্নিত করে সেগুলোর দ্রুত সমাধান কামনা করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, করোনাকালীন বাস্তবতায় অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা নানা সমস্যায় পড়ছে এটা সত্যি। এটি নিয়ে কমবেশি আলোচনা হচ্ছে। আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করব।

নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00376296043396