ঢাবিতে ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে অসন্তোষ - দৈনিকশিক্ষা

ঢাবিতে ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে অসন্তোষ

ঢাবি প্রতিনিধি |

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৩০২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পাঁচ দিনের মধ্যে ৩২ জনের পদ স্থগিত করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে সংগঠনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবাহিতসহ বিভিন্ন তথ্য গোপনের অভিযোগে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ৩৩ সদস্যের আংশিক কমিটিও যোগ্য ও ত্যাগী ছাত্রনেতাদের বাদ দিয়ে অছাত্র ও বিবাহিতদের দিয়ে গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতারা। এ ব্যাপারে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেছেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এর আগে গত রোববার কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে সভাপতি ও সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। একই দিন খোরশেদ আলমকে সভাপতি ও আরিফুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ৩৩ সদস্যের আংশিক কমিটিরও ঘোষণা দেওয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণার পর থেকে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করায় অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ নেতারা বলেন, অযোগ্য, নিষ্ক্রিয় ও নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির পক্ষে দলীয় কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এ কমিটি ভেঙে দিয়ে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি করা উচিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি খোরশেদ আলম ২০০৮-০৯ ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। এখন তারা নিয়মিত ছাত্র নন। খোরশেদকে ২০১৬ সালের আগে কখনো ছাত্রদলের কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। আরিফুল ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। তিনি ছাত্রদলে অনেকটা অপরিচিত মুখ। তার যোগ্যতা হলো, তিনি কেন্দ্রীয় এক শীর্ষনেতার নিজস্ব লোক। এ ছাড়া কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক পদ পাওয়া মাসুম বিল্লাহ (স্যার এএফ রহমান হল), তারিকুল ইসলাম, নাছির উদ্দিন ও রাজু আহমেদ অতীতে ছাত্রলীগ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মাসুম ২০১৩ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের হয়ে মারামারিসহ নানা বিতর্কিত ঘটনায় যুক্ত ছিলেন, যা তখন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কমিটির সহসভাপতি মশিউর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক ইউসুফ হোসেন খান, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুর রহমান ও সহসাধারণ সম্পাদক আফছার উদ্দিন দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় ছিলেন। মশিউর বিবাহিত। যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলামও বিবাহিত। সহসাধারণ সম্পাদক মুন্সী সোহাগকে অতীতে ছাত্রদলের কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। তবে চলতি বছর তিনি পরপর দুটি পদ পেয়েছেন।

পদবঞ্চিত এক নেতা বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তিন মাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি প্রায় তিন বছর পার করেছে। গত কয়েক মাসে সংগঠন প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। সবাই আশা করেছিলেন, যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি হবে, নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে। কিন্তু নতুন কমিটি করা হয়েছে অযোগ্য, নিষ্ক্রিয় ও নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে।

ফলে প্রাণচাঞ্চল্য ফেরা তো দূরে থাক, নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন চরম ক্ষোভ, হতাশা ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। নতুন কমিটির দলীয় কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নের সক্ষমতা নেই। কারণ, তাদের পেছনে তেমন কর্মী নেই। তাদের শুভেচ্ছা মিছিলে মাত্র ১৫ থেকে ২০ জনের উপস্থিতির মাধ্যমে বিষয়টি ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।

ক্ষুব্ধ নেতারা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলে অন্তত ছয়টি পক্ষ রয়েছে। সাধারণত কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ইচ্ছায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি হয় না। পক্ষগুলোর শীর্ষনেতাদের মধ্যে সমন্বয় করেই কমিটি করা হয়। কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ইচ্ছানুযায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগিরই এই কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন করবেন বলে আশা তাদের। প্রয়োজনে তারা আন্দোলনে নামার কথাও ভাবছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি নিয়ে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম বলেন, তারা দুজনেই দীর্ঘদিন ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সভাপতি খোরশেদ ডাকসুর এজিএস প্রার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক আরিফুলও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। কিছু সাংগঠনিক বাধ্যবাধকতা ও মানদ-ের কারণে অনেকের মধ্য থেকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে থাকা কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

কেন্দ্রের পদ স্থগিত হওয়া নেতারা : গত বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দাপ্তরিক প্যাডে সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় কমিটির ৩২ জনের পদ স্থগিত করা হয়। এতে বলা হয়, ‘৩২ জনের নামে অভিযোগ উত্থাপন হওয়ায় আপাতত পদ স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তদন্তসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

পদ স্থগিত হওয়া নেতাদের মধ্যে একজন সহসভাপতি রয়েছেন। তিনি হলেন কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস। তাদের মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন ১০ জন। তারা হলেন- মো. জহিরুল ইসলাম, মো. ইউনুচ আলী রাহুল, মো. সালাহউদ্দিন, আকন মামুন, খায়রুল আলম সুজন, মারজুক আহমেদ, জুয়েল মৃধা, সালেহ মো. আদনান, আবুল কালাম আজাদ, মো. সোহরাব হোসেন সুজন।

পদ স্থগিত হওয়া নেতাদের মধ্যে সহসাধারণ সম্পাদক রয়েছেন ১৩ জন। তারা হলেন- আবদুল্লাহ আল মাসুদ, মাইনুল ইসলাম সোহান, কাজী মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাজু, এসএম ফয়সাল, কামরুজ্জামান কামরুল, মীর ইমরান হোসেন মিথুন, বাছিরু ইসলাম রানা, আজিজুল হক জিয়ন, মো. আরিফুর রহমান আমিন, মিজানুর রহমান মিজান, ফেরদৌস হোসেন ফয়সাল, আল মামুন ও আরিবা নিশীথ।

সহসাংগঠনিক সম্পাদক পাঁচজনের পদ স্থগিত হয়েছে। তারা হলেন- মো. আল আমিন, এমএ রহিম শেখ, শহীদুল ইসলাম নয়ন, মামুন মজুমদার, মো. নজরুল ইসলাম রাঢ়ী। এ ছাড়া সহআইন সম্পাদক ওয়ালিউল্লাহ, সহপাঠাগার সম্পাদক আনিসুর রহমান আনিচ ও সহঅর্থ সম্পাদক মো. রিয়াদ আহমেদের পদও স্থগিত হয়েছে।

জানা গেছে, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৩০২ জনকে জায়গা দেওয়া হলেও অনেকের ক্ষেত্রেই গঠনতন্ত্র মানা হয়নি। এরই মধ্যে এসব অভিযোগ বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমাও দিয়েছেন পদবঞ্চিতরা। এর ধারাবাহিকতায় ৩২ জনের পদ স্থগিতের ঘোষণা এলো।

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037069320678711