ঢাবিতে জায়গা মেলে না গণরুমেও - দৈনিকশিক্ষা

ঢাবিতে জায়গা মেলে না গণরুমেও

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার পি জে হার্টগ আন্তর্জাতিক হল। বিদেশি শিক্ষার্থীদের এই আবাসিক হল বেশ পরিপাটি। কক্ষগুলোর মেঝে ঝাঁ-চকচকে। পরিচ্ছন্ন ক্যান্টিন।

সুশৃঙ্খলভাবে সিট বরাদ্দ দেয় হল প্রশাসন। গণরুমের কোনো বালাই নেই। ঠিক বিপরীত চিত্র দেশি শিক্ষার্থীদের হলগুলোতে। স্যাঁতসেঁতে ক্যান্টিন। নোংরা রান্নাঘর। আবাসিক কক্ষে লক্কড়ঝক্কড় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। টিভি রুম, রিডিংরুম, ওয়াশরুমে ময়লার ছড়াছড়ি। গণরুমে থাকেন ৩০ থেকে ৪০ জন ছাত্র। তার পরও সিট পাওয়া যায় না।

শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আবাসিক হল ১৯টি। এর মধ্যে ছাত্রদের ১৩টি, ছাত্রীদের পাঁচটি। আর স্যার পি জে হার্টগ আন্তর্জাতিক হলে মোট কক্ষ ১২৩টি। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য ৫৩টি, ছাত্রদের জন্য ৫৭টি, কর্মকর্তাদের জন্য তিনটি এবং অতিথিদের জন্য ১০টি কক্ষ বরাদ্দ। ছাত্রদের প্রতিটি কক্ষে দুটি করে সিট। হল প্রশাসনের তথ্য মতে, ১১৪ শিক্ষার্থী থাকছেন হলটিতে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মেডিক্যাল কলেজের। এ ছাড়া থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবিবাহিত শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।

অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩টি ছাত্র হলেই ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী। গণরুমে এক কক্ষে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থীকে থাকতে হয়। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে আসন ৮১০টি। কিন্তু সেখানে প্রায় এক হাজার ২৬২ জন ছাত্র থাকছেন। এর মধ্যে গণরুম পাঁচটি, প্রতিটি গণরুমে ৩০ জনেরও বেশি ছাত্র থাকেন। অমর একুশে হলের ৬২০টি আসনের মধ্যে শিক্ষার্থী থাকেন ৭৫০ জন। এর মধ্যে ১০টি গণরুমে থাকেন প্রায় ১৬০ জন শিক্ষার্থী। ফজলুল হক মুসলিম হলের ৭১১টি আসনের মধ্যে শিক্ষার্থী থাকেন এক হাজার ১৪০ জন। এর মধ্যে গণরুম ছয়টি, প্রতিটি গণরুমে ৩০ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকেন।

স্যার পি জে হার্টগ আন্তর্জাতিক হলে কোনো শিক্ষার্থী সিটের জন্য আবেদন করলে খালি থাকলেই বরাদ্দ দেওয়া হয়। এটা হল প্রশাসনই করে থাকে। আর বাকি ১৩টি ছাত্র হলের মধ্যে বিজয় একাত্তর হল বাদে সব কটিতে ছাত্রলীগই নির্ধারণ করে কে কোথায় থাকবে, না থাকবে। বিজয় একাত্তর হলে আবেদন সাপেক্ষে সিট খালি থাকলে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

অবশ্য হল প্রশাসন বলছে, স্যার পি জে হার্টগ হলের আবাসন ফি অন্য ১৩টি হল থেকে বেশি হওয়ায় সেখানকার সার্বিক অবস্থা ভালো। আন্তর্জাতিক হলে শিক্ষার্থীর ভর্তিতে লাগে দুই হাজার টাকা। হলে থাকতে হলে জামানত লাগে ১০ হাজার টাকা। প্রতি মাসে আবাসিক ফি দিতে হয় ৫০০ টাকা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক, দ্বৈতাবাসিক, অনাবাসিক মিলিয়ে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ছাত্র থাকেন বিজয় একাত্তর হলে। সেখানে শিক্ষার্থীর ভর্তি সম্পন্ন করতে এক হাজার ৫০০ টাকা, হলে থাকতে জামানতসহ এক হাজার ৫০০ টাকা এবং আবাসিক ফি হিসেবে বার্ষিক এক হাজার ৭০০ টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্যার পি জে হার্টগ হলের জন্য বরাদ্দ এক কোটি ছয় লাখ ৬৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে বিজয় একাত্তর হলের জন্য বরাদ্দ এক কোটি ২৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, হলে নামকাওয়াস্তে প্রশাসন। হল কার্ড দেওয়া বা আবেদন করলে চেয়ার ও টেবিল দেওয়া তাদের কাজ। কিন্তু শিক্ষার্থীদের প্রধান যে প্রয়োজন সিট, সেই সিটের নিয়ন্ত্রণ ছাত্রলীগের কবজায়। কাগজে-কলমে প্রশাসন থাকলেও ছাত্রলীগই ছায়া প্রশাসন হিসেবে হল পরিচালনা করে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য আবাসনব্যবস্থা না থাকায় হলে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের পূর্ণ আবাসিকতা দেওয়া হয় না। বেশির ভাগ হলে দ্বিতীয় বর্ষের শেষের দিকে অথবা তৃতীয় বর্ষ থেকে সিট দেওয়া হয়। কিন্তু দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ চাইলে সিট দেয়। তাঁদের থাকতে হয় গণরুমে। আর ছাত্রলীগের প্রগ্রাম ‘গেস্ট রুমে’ অংশ নিতে হয়। এ ছাড়া স্নাতকোত্তর শেষ হয়ে গেলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হলে সিট বহাল থাকে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আবাসিক হলের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ প্রশাসনের হাতে। হলে কে থাকবে না থাকবে এসব প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করে। এতে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে আবাসিক হলে সিটসংকট রয়েছে। ছাত্রসংগঠন হিসেবে আমরা তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি যেন তারা লেখাপড়া করতে পারে। ’

স্যার পি জে হার্টগ হল এবং অন্যান্য হলের নিয়ম-কানুন ও সুযোগ-সুবিধার তফাত নিয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, আন্তর্জাতিক হল ও অন্যান্য হলের পরিচালনা পদ্ধতি ভিন্ন। সে জন্য অন্যান্য হলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক হলকে মেলানো যায় না। ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণের কথা অস্বীকার করেন তাঁরা।

স্যার এ এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক কে এম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, আন্তর্জাতিক হলে বিদেশি ছাত্র, ব্যাচেলর শিক্ষক ও কর্মকর্তারা থাকেন এবং তাঁদের সংখ্যা খুবই কম বলে চাপও কম থাকে। কিন্তু অন্যান্য হলে শিক্ষার্থীর চাপ বেশি থাকে। তাই অন্যান্য হলে এসব সমস্যা দেখা যায়। আবাসিক হলে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণের কথা বললে তিনি তা অস্বীকার করেন।

মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বললে তিনি আবাসনসংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থী অনুযায়ী সিট নেই। প্রান্তিক অঞ্চল থেকে আসা শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের বৈধ শিক্ষার্থী বাদেও অনেককে হলে রাখতে হয়। ’ ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, এসব সমস্যার জন্য অনেক বিষয় দায়ী। এককভাবে কাউকে দায়ী করে বিষয়গুলোর সমাধান করা যাবে না।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, আবাসনসংকট রয়েছে। আমরা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য সিটের ব্যবস্থা করতে পারিনি। এটা দুঃখজনক হলেও সত্য, যার ফলে আমাদের শিক্ষার্থীদের আশানুরূপ যে জীবনমান, সেটা নিশ্চিত করা যায়নি। এগুলোর জন্য আমাদের নানা ধরনের প্রয়াস রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই আবাসন সমস্যার সমাধান করা না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা, সমস্যা নিয়ে আমাদের চলতে হবে। ’

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0074479579925537