ঢাবির উন্নয়নে ৯ হাজার কোটি টাকার মহাপরিকল্পনা - দৈনিকশিক্ষা

ঢাবির উন্নয়নে ৯ হাজার কোটি টাকার মহাপরিকল্পনা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

গ্রন্থাগারে বসার একটি আসন পেতে লম্বা সারিতে দাঁড়াতে হয় শিক্ষার্থীদের। তীব্র আবাসন সংকট। শ্রেণীকক্ষ ও গবেষণাগারের অপ্রতুলতাও দিন দিন আরো প্রকট হয়ে উঠছে। শৌচাগার ব্যবস্থাও অনুন্নত। ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ঝুলতে হয় বাসের দরজায়। এ ধরনের মৌলিক অবকাঠামো সংকট নিয়েই গত ১ জুলাই প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূর্ণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাইফ সুজন।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, দ্বিতীয় শতাব্দীর পথচলায় প্রতিষ্ঠানের মৌলিক অবকাঠামোগত সংকটের এ চিত্র বদলাতে চায় ঢাবি কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে এরই মধ্যে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে গতকালই আনুষ্ঠানিকভাবে মহাপরিকল্পনাটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি উপাচার্য বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তিনি সব সময়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে উদার। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তিনি মাস্টারপ্ল্যানের বিভিন্ন বিষয় অবলোকন করে সন্তোষ জানিয়েছেন। তিনি কিছু পরামর্শ ও পর্যবেক্ষণ দিয়ে সেগুলো সমন্বয়ের নির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব পরিকল্পনার গুণগত বাস্তবায়নেরও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিক্ষা-গবেষণার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে গত বছর এ মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে কর্তৃপক্ষ। মোট ১৫ বছরে তিন ধাপে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এতে প্রাক্কলিত ব্যয়ের পরিমাণ ৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ধাপের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবও (ডিপিপি) প্রণয়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রথম ধাপে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

কর্তৃপক্ষ বলছে, মহাপরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় চোখ ধাঁধানো পরিবর্তন আসবে। বিশাল এ কর্মযজ্ঞে নতুন সুউচ্চ আধুনিক ইমারত যেমন তৈরি হবে, তেমনি সংস্কার করা হবে পুরনো ভবনও। মহাপরিকল্পনার আওতায় এখানে বিশ্বমানের গ্রন্থাগার সুবিধা, গাড়ি পার্কিং, যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ, সবুজায়ন, খেলার মাঠ উন্নয়ন, সোলার এনার্জি স্থাপন, রেইন ওয়াটার হারভেস্টিংসহ জলাধার, সৌন্দর্যবর্ধন, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, আধুনিক জিমনেসিয়াম ও আধুনিক মেডিকেল সেন্টার স্থাপন করা হবে।

মহাপরিকল্পনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিন ধাপে মোট ৯৭টি ভবন নির্মাণের প্রস্তাব আনা হয়েছে এতে। এর মধ্যে প্রস্তাবিত নতুন একাডেমিক ভবনের সংখ্যা ১৭। আর আবাসনের ক্ষেত্রে ছাত্রীদের জন্য আটটি, ছাত্রদের ১৬টি, হাউজ টিউটরদের জন্য ২২টি, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ১২টি ও কর্মচারীদের জন্য নয়টি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর বাইরেও আরো ১৩টি ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম ধাপে অগ্রাধিকার পাচ্ছে গ্রন্থাগার সেবার মানোন্নয়ন। বিদ্যমান কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে ১২ তলার একটি সুউচ্চ ভবন নির্মাণের প্রস্তাব আনা হয়েছে। একইভাবে আইএসআরটি ও ফার্মেসি বিভাগের জায়গায় একটি ১০ তলা ভবন, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের জন্য তিনতলা ভবন, চারুকলায় একটি পাঁচতলা ভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ১০ তলাবিশিষ্ট এমবিএ টাওয়ার এবং নীলক্ষেতের প্রেস ভবন ও পুলিশ ফাঁড়ি ভেঙে ১১ তলা একাডেমিক ভবন ও পাঁচতলা প্রেস ভবন করা হবে।

আর আবাসিক অবকাঠামো উন্নয়নের প্রথম ধাপে নিউমার্কেট এলাকায় শাহনেওয়াজ হোস্টেল ভেঙে ১৫ তলা জয় বাংলা হল ও ১১ তলাবিশিষ্ট হাউজ টিউটর ভবন নির্মাণ করা হবে। একইভাবে শামসুননাহার হলে তিনটি সুউচ্চ ভবন, শহীদ অ্যাথলিট সুলতানা কামাল হোস্টেলের এক্সটেনশন হিসেবে তিনটি ভবন ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে দুটি ভবন নির্মাণের প্রস্তাব আনা হয়েছে। এছাড়া শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে তিনটি ভবন, সূর্য সেন হলের ১১ তলাবিশিষ্ট দুটি ভবন ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে তিনটি ভবন নির্মাণ করা হবে। সূর্য সেন হল ও মুহসীন হলের প্রভোস্ট বাংলো ভেঙে দোতলাবিশিষ্ট প্রোভিসি বাংলো নির্মাণ করা হবে। দক্ষিণ ফুলার রোডে শিক্ষকদের জন্য ১৫ তলাবিশিষ্ট রেসিডেন্সিয়াল টাওয়ার ও ধানমন্ডিতে সাততলার একটি ভবন নির্মাণ করা হবে।

শতবর্ষী ও ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনটিও অনেক পুরনো হয়ে পড়েছে। মহাপরিকল্পনার অধীনে বিদ্যমান ভবন ভেঙে নতুন করে প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবনের সামনে থাকবে একটি ফোয়ারা। ত্রিকোণাকৃতির এ ভবনের মাঝামাঝি অবস্থানে থাকবে উপাচার্যের কার্যালয়, দুপাশে দুই উপ-উপাচার্যের কার্যালয় এবং এক পাশে থাকবে কোষাধ্যক্ষের দপ্তর।

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) দোতলা ভবন ভেঙে বহুতল ভবন তৈরির পরিকল্পনা করেছে প্রশাসন। সেখানে ডাকসু নেতাদের জন্য কক্ষের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরও স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি কয়েকটি বিভাগের জন্যও জায়গা বরাদ্দ দেয়া হতে পারে।

মহাপরিকল্পনার আওতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাইরের অবকাঠামোগুলোতেও পরিবর্তন আনার প্রস্তাব রয়েছে। রাজধানীর গ্রিন রোডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ দশমিক ১ একর জায়গা রয়েছে। এর একটি অংশে বিপণিবিতান ও অন্য অংশে আইবিএ হোস্টেল রয়েছে। নতুন পরিকল্পনায় আইবিএ হোস্টেলের পাশাপাশি বহুতল ভবন নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। এতে একটি আধুনিক বিপণিবিতান স্থাপন করা হবে। পাশে থাকবে কনভেনশন হল। এটিও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে।

নতুন এ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থায়ও। এর অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের জন্য কার্জন হল থেকে কলাভবন পর্যন্ত আলাদা সাইকেল লেন স্থাপন করা হবে। এছাড়া বহিরাগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণেও বেশকিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে পরিকল্পনায়।

মহাপরিকল্পনা প্রণয়নবিষয়ক কারিগরি কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে এ মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করলে দেশের সর্বোচ্চ এ বিদ্যাপীঠের শিক্ষা ও গবেষণায় গুণগত পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংকটের সমাধান হবে। পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপীঠ বৈশ্বিক মানদণ্ডেও অনেক ধাপ এগিয়ে যাবে।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032451152801514