ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিনেটের বার্ষিক অধিবেশন আজ বৃহস্পতিবার। এ অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হবে৷ অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পেলেও ‘নৈতিকতার’ জায়গা থেকে এ অধিবেশন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন সিনেটের শিক্ষার্থী-প্রতিনিধি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক। তবে ছাত্রলীগ বলছে, এটি নুরুলের ‘অ্যাটেনশন সিক করার (মনোযোগ আকর্ষণ) চেষ্টা’ ছাড়া অন্য কিছু নয়।
আজ বেলা তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সিনেটের বার্ষিক অধিবেশন শুরু হবে। এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন সিনেটের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। অধিবেশনে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হবে। সিনেটে আলোচনার পর নতুন অর্থবছরের বাজেট ও চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সদস্যসংখ্যা ১০৫। এর মধ্যে ডাকসু মনোনীত পাঁচ শিক্ষার্থী-প্রতিনিধি থাকেন। পরবর্তী ডাকসু নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রত্ব থাকা সাপেক্ষে ওই শিক্ষার্থী-প্রতিনিধিরা সিনেটের সদস্য থাকতে পারেন। সেই নিয়ম অনুযায়ী ডাকসুর কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও সাবেক ভিপি নুরুল হক, জিএস গোলাম রাব্বানী, এজিএস সাদ্দাম হোসেন, সদস্য তিলোত্তমা শিকদার ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস সিনেট সদস্য পদে বহাল আছেন। সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে তাঁরা দাওয়াতও পেয়েছেন।
দীর্ঘ ২৮ বছর অচল থাকার পর ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে ডাকসুর নির্বাচন হয়েছিল। এতে ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫ পদের ২৩টিতে জেতে ছাত্রলীগ। ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে জেতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র অধিকার পরিষদ। ডাকসুর সেই কমিটির মনোনয়নে ভিপি নুরুল ও ছাত্রলীগের চার নেতা শিক্ষার্থী-প্রতিনিধি হিসেবে সিনেট সদস্য হন। প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের পর আর নির্বাচন হয়নি। কিন্তু নুরুলসহ ওই পাঁচ শিক্ষার্থী-প্রতিনিধিই এখনো ছাত্রত্ব ‘টিকিয়ে’ রেখেছেন। তাই এখনো তাঁরা সিনেট সদস্য। নুরুল বর্তমানে গণঅধিকার পরিষদ নামের একটি রাজনৈতিক দলের সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
আজ সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে যাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক৷ তিনি গতকাল বুধবার বলেন, ‘অচল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ডাকসুর প্রতিনিধি হয়ে সিনেটের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা নৈতিকতাবিরোধী বলে আমি মনে করি। এ কারণে গত এক বছর সিনেট সদস্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সভায় আমন্ত্রণ পেলেও আমি সেসবে অংশ নিইনি। এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (আজ) অনুষ্ঠিতব্য সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনেও অংশ নিচ্ছি না। আমার সুস্পষ্ট দাবি, অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করে সিনেটে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হোক।’
তবে ছাত্রলীগের প্রতিনিধিরা সিনেট অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘ডাকসুর কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও নুরুল হক আরও কিছুদিন ভিপি পদে বহাল থাকতে চেয়েছিলেন, সাবেক হতে চাননি। সেই নুরুল এখন নৈতিকতার কথা বলছেন! ইতিমধ্যে তিনি একটি নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দলও খুলেছেন। তাঁর সিনেট অধিবেশন বর্জনের ঘোষণাটি আসলে ওই তথাকথিত রাজনৈতিক দলকে কেন্দ্র করে অ্যাটেনশন সিক করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। ছাত্রলীগ সব সময়ই ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার আছে।’