ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অবস্থান এমন থাকতে হয়, যেন কোনো ছাত্র তাকে প্রভাবিত করতে না পারে। যারা তদবির করে উপাচার্য হন, অনেক সময় ছাত্রদের কথায় তাদের উঠতে-বসতে হয়। যারা ছাত্রদের কথায় উঠে বসে, তাদের উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবেক উপাচার্য। দেশের উচ্চশিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা ও ছাত্ররাজনীতি প্রসঙ্গে আলাপকালে সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সমস্যা আছে। এসব আমরা বলি। কিন্তু তা সমাধানে কী উদ্যোগ আছে। আমি মনে করি, সার্বিকভাবে শিক্ষা খাতে বাজেট ও জনবল আরও বাড়াতে হবে। শিক্ষকতার পেশাকে যদি আরও আকর্ষণীয় করা না যায়, তাহলে মেধাবীরা এই পেশায় আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
যদি দেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বেতনভাতা ও সুযোগ-সুবিধা অন্য পেশার মতো যদি ভালো হতো কিংবা আরও সম্মানজনক হতো, তাহলে মেধাবীরা তাদের প্রথম পছন্দ রাখত শিক্ষকতাকে। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে দুর্ভাগ্য শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করতে পারিনি। যখন দেখা যায় কোনো স্কুলের প্রধান শিক্ষক ১৬তম গ্রেডে বেতনভাতা পান, তখন সমাজে তাদের তেমন একটা সম্মানজনক অবস্থা থাকে না। এখানেই রাষ্ট্রের দায়িত্ব এসে যায়। বেতন ও সুবিধাসহ সার্বিক মর্যাদার দৃষ্টিকোণ থেকে যদি এই পেশাকে আকর্ষণীয় করা যায়, তবে এমনিতেই মেধাবীরা এদিকে আসার আগ্রহ দেখাবে।
তবে এটা ঠিক যে, আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অবকাঠামোগত অনেক সমস্যা আছে। শিক্ষা খাতে দেশের জিডিপির ৬ শতাংশ ব্যয় করার কথা। অথচ আমাদের দেশে শিক্ষা খাতে জিডিপির ২ শতাংশ আবার কখনো এরও কম ব্যয় হয়। নেপাল, ভুটান এমনকি পাকিস্তানের চেয়েও পিছিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দ। শিক্ষার মানের আরেক প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত। দেশে যে হারে ছাত্রের সংখ্যা বাড়ছে, সেই হারে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। ইউরোপসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে স্কুল পর্যায়ে একজন শিক্ষককে ক্লাসে ১০-১৫ জন ছাত্রকে পড়াতে হয়। অথচ আমাদের দেশে ৫০-৬০ জন ছাত্রকে পড়াতে হয়।
বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক র্যাংকিং প্রকাশিত হয়ে থাকে। তাতে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান নিয়েও অনেকে আক্ষেপ করে থাকেন। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীর ৫০০ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও আমাদের দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। কিন্তু আমরা যদি এর বিপরীত দিকে তাকাই তাহলে দেখব, যেসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ওই ৫শর মধ্যে আছে, সেসব দেশের তুলনায় আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রের বরাদ্দ বিশ্বের ১ হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও পড়ে না। গবেষণা ও বিভিন্ন খাতে যে বরাদ্দ দেয়, এটি অত্যন্ত কম। বরাদ্দ বা শিক্ষা খাতে ব্যয় যত কম হবে, মানও তত কমে যাবে।
সূত্র : দৈনিক যুগান্তর।