তিন বছরেও গঠন হয়নি বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ কমিশন - দৈনিকশিক্ষা

তিন বছরেও গঠন হয়নি বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ কমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক |

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের স্বতন্ত্র কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো তিন বছর আগে। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে জারি হওয়া জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে এ বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন বা ননগভার্নমেন্ট টিচার্স সিলেকশন কমিশন (এনটিএসসি) গঠনের কাজ শুরু হয়েছিলো ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝিতে। কিন্তু এরপর প্রায় তিন বছর পার হয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি কমিশন।

২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টে বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১০ এ জাতীয় শিক্ষানীতিতে এ কমিশন গঠনের বিষয়ে বলা হয়েছিলো। এ কমিশন গঠনে আইনের একটি খসড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিলো বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ফের এ আইনের খসড়া তৈরি করে তা জমা দিতে বলেছে প্রতিষ্ঠানটিকে। 

রোববার দুপুরে দৈনিক আমাদের বার্তার সঙ্গে আলাপকালে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

ফের হচ্ছে আইনের খসড়া :

এনামুল কাদের খান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, মন্ত্রণালয় শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠনের বিষয়ে একটি আইনের খসড়া তৈরি করে জমা দিতে বলেছে। যে সংক্রান্ত একটি খসড়া আগেও আমরা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। তারা ফের খসড়া চেয়েছে। আমরা সে খসড়া তৈরির কাজ শুরু করেছি। গত ১৬ মে অনুষ্ঠিত নির্বাহী কমিটির সভায়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা একটি খসড়া তৈরি করে তার ওপর আমাদের নির্বাহী বোর্ডের সভায় আলোচনা করবো। তারপর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আদলে এ কমিশন গঠন করা হবে। 

নির্বাচন পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগ :

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনটিএসসি গঠিত হলে, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব পাবে কমিশন। কমিশন শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থীদের সুপারিশ করবে। শিক্ষক হতে নিবন্ধন পরীক্ষা না, সরসরি নির্বাচন পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে প্রার্থীদের। পরে যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচন করে তাদের বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে সুপারিশ করবে এনটিএসসি। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা থাকবে না। 

শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়নের উদ্দেশ্যে ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ বা এনটিআরসিএ গঠিত হয়। এটা গঠিত হয়েছিলো প্রার্থীদের প্রাক-যোগ্যতার সনদ দিতে। নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রার্থীদের শিক্ষক পদে নিয়োগের প্রাক যোগ্যতা হিসেবে নিবন্ধন সনদ অর্জন করতে হয়। শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে ২০১৫ থেকে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব এনটিআরসিএকে দেয়া হয়। এর আগে নিবন্ধন সনদধারীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের একচ্ছত্র ক্ষমতা ছিলো ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির হাতে। এখন এনটিআরসিএর সুপারিশ করা প্রার্থী ছাড়া শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ নেই। এনটিআরসিএর শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য আর কোনও পরীক্ষা দিতে হয় না। এনটিআরসিএ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে নিবন্ধিত প্রার্থীদের আবেদন গ্রহণ করে তাদের জাতীয় মেধাতালিকা অনুসারে নিয়োগ সুপারিশ করে। সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের সরাসরি নিয়োগপত্র দেয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
 
এনটিআরসিএর মাধ্যমে সারাদেশ থেকে শূন্যপদের তালিকা সংগ্রহ ও নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনায় নানা ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। নিবন্ধন পরীক্ষা আয়োজন ও ফল প্রকাশে দেরি, শিক্ষক নিয়োগে জটিলতাসহ নানা কারণে সঠিক সময়ে এসব কাজ করা যাচ্ছে না। এনটিআরসিএর জনবল সংকটেও অনেক কাজ আটকে যায়। এছাড়া নানা কারণে নিয়োগপ্রত্যাশীরা আদালতে গিয়ে মামলা দিচ্ছেন। এসব বিষয় বিবেচনায় জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে ২০১৯ এর আগস্ট মাসে এক সভায় এ কমিশন গঠনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

শিক্ষানীতির ৬৩ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,  বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে দ্রুত ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নির্বাচন করে এলাকাভিত্তিক ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করবে। সে বছর শেষের দিকে কমিশন গঠন আইনের খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলো এনটিআরসিএ। তৎকালীন চেয়ারম্যান আশফাক হুসেন সেসময় বিষয়টি দৈনিক আমাদের বার্তাকে নিশ্চিত করেছিলেন। পরে একটি কমিটি গঠন করেছিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু করোনার ধাক্কায় সে কমিটির কাজে কিছুটা দেরি হয়। পরে সম্প্রতি ফের আইনের খসড়া তৈরির নির্দেশনা দিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

আরও সময় লাগবে কমিশন গঠনে :

এনটিআরসিএর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম দফায় আইনের খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও আবারও আইনের খসড়া করতে বলা হয়েছে। সে খসড়া তৈরির কাজ চলছে। তারা বলছেন এ আইনের খসড়া তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে তিন মাস সময় লাগবে। তারপর বিভিন্ন পর্যায়ে খসড়ায় অনুমোদন নেয়া হবে। আইন মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, সচিব কমিটির অনুমোদন পেলে তা  মন্ত্রিপরিষদে তোলা হবে। সেখানে অনুমোদন হলে তা সংসদে উত্থাপন ও সেখানে পাস হলে আইন হিসেবে জারি হবে।
 
কমিশন গঠনের প্রথম ধাপ আইনের খসড়া তৈরিতে কতটা সময় লাগবে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা খসড়া তৈরি কাজ শুরু করেছি। এ বিষয়ে এনটিআরসিএর নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মত চাওয়া হয়েছে। তারা আগামী নির্বাহী কমিটির সভায় সে বিষয়ে মত জানাবেন। প্রতি তিন মাস পরপর নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মত অনুসারে সব ঠিক থাকলে আমরা তখন আইনের খসড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। মন্ত্রণালয় তখন যাচাই বাছাই করে তা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া হাতে নেবে। সার্বিকভাবে পুরো কাজে আরও কিছুটা সময় লাগবে।

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065159797668457