তিন মামলার আসামি গোদাগাড়ী সরকারি কলেজের ২৩ শিক্ষক - দৈনিকশিক্ষা

তিন মামলার আসামি গোদাগাড়ী সরকারি কলেজের ২৩ শিক্ষক

রাজশাহী প্রতিনিধি |

গেল তিনবছরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী সরকারি কলেজের ২৩ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যার মধ্যে চলতি বছরেই হয়েছে দু’টি মামলা। শিক্ষকদের নিজেদের মধ্যে মারামারি, ভাঙচুর ও জালিয়াতির অভিযোগের এ মামলাগুলো হয়েছে। শিক্ষকদের মধ্যে এমন হামলা-মামলায় কলেজটিতে শিক্ষা স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।  

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার এ সরকারি কলেজটিতে ৫৯ জন শিক্ষক কর্মরত। গেল তিনবছরে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ ও উপধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) নিজেদের মধ্যেই এ তিনটি মামলা করেছেন। এ মামলাগুলোর আসামি ২৩ শিক্ষক।

সর্বশেষ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা কলেজটির শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ওপর। 

শিক্ষাবিদরা বলছেন, ‘শিক্ষকের মধ্যে এমন অস্থির অবস্থার আচ পড়ছে শিক্ষার্থীদের ওপর। এতে করে ব্যহত হয় পাঠদান। নষ্ট হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক পরিবেশ। দ্রুত এ পরিস্থিতি সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।’ 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন,‘শিক্ষকদের মধ্যে মামলা আতঙ্ক বিরাজ করছে। কখন যে কার নামে কে মামলা করা হয় তা বলা মুসকিল। সর্বশেষ মঙ্গলবার একটি মামলা হয়েছে-পরিচয় ভুলের কারণে। আমরা চাই অতিদ্রুত এ পরিস্থিতির সমাধান হোক। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসুক।’
    
মঙ্গলবারের মামলার বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উমরুল হক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থা ভালো আছে।’ তবে, নিজের মধ্যে এসব মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেনি। 

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ আব্দুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
 
জানা গেছে, সর্বশেষ গত ২ নভেম্বর (মঙ্গলবার) জালিয়াতির অভিযোগ তুলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত  অধ্যক্ষ উমরুল হকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন সাময়িক বরখাস্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান। এর আগে গত ২৪ অক্টোবর অফিসকক্ষে ঢুকে মারধর করার অভিযোগে কলেজের ১২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উমরুল হক। এছাড়া ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ আগস্ট তৎকালীন অধ্যক্ষ আব্দুর রহমানকে তার অফিসকক্ষে মারধরের অভিযোগে কলেজের ১১ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়।  

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উমরুল হককের বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষের করা জালিয়াতির মামলা সূত্রে জানা গেছে, কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উমরুল হক বাদী হয়ে গত ২৪ অক্টোবর গোদাগাড়ী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। থানার দায়ের মামলায় বাদী উমরুল হক তার পিতা ও ঠিকানা পরিবর্তন করে অধ্যক্ষ (সাময়িক বরখাস্ত) আব্দুর রহমানের পিতা ও ঠিকানা উল্লেখ করে জালিয়াতির আশ্রায় নিয়েছে। আর এই কাজটি উদ্দোশ্য প্রণোদিতভাবে করার কারণে সাময়িক বরখাস্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রহমানকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে বলে তার আইনজীবি অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দীন বিশ্বাস জানান।

তিনি আরও জানান,  রাজশাহী জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আমলী আদালত-১ এ সাময়িক বরখাস্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রহমানের  দায়ের করা মামলাটি তদন্তের জন্য অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
 
বিষয়টি নিয়ে কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উমরুল হক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ‘আমি অসুস্থ্য অবস্থায় হাসপাতালে ছিলাম। তখন আমার প্রতিষ্ঠানের দুজন শিক্ষক দরখাস্ত দিয়েছিলেন। থানা থেকে অধ্যক্ষের বাবার নাম ও পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। তখন আব্দুর রহমানের বাবার নাম ও ঠিকানা দিয়েছে তারা। এটা অনইচ্ছাকৃত ভুল। ভুল তো মানুষের হয়।’
 
জানা গেছে, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ আগস্ট কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রহমানকে মারধর ও হামলার অভিযোগে ১১ শিক্ষককে আসামি করে মামলা দায়ের করে সাময়িক বরখাস্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান। মামলার আসামীরা হলেন, গোদাগাড়ী সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ উমরুল হক (৫২), সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক এ বি এম কামারুজ্জামান (৫৯), রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক তাইনুস আলী (৩৫), দর্শন বিভাগের প্রভাষক মাইনুল ইসলাম (৪৫), সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রভাষক হান্নান হোসাইন (৫৭), মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফারুক হোসেন (৫২), প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শহীদুল হক (৫৯), আইসিটি বিভাগের প্রভাষক ইউনুস আলী (৩৩), সহকারী অধ্যাপক জহিরুল ইসলাম (৫২), দর্শন বিভাগের প্রভাষক আব্দুল করিম (৫১) ও ব্যাংকিং বীমা বিভাগের প্রভাষক মাজহারুল ইসলাম (৫১)। তবে, চলতি বছরের গত ১২ অক্টোবর ১১ শিক্ষক আদালত থেকে জামিন নেন। 

অন্যদিকে, চলতি বছরের গত ২১ অক্টোবর বিকাল ৩ টার দিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উমরুল হককে শিক্ষকরা মারধর ও তার কক্ষের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় ১২ জন শিক্ষককে বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উমরুল হক। মামলার আসামিরা হলেন, রসায়নের শিক্ষক মনিরুল ইসলাম, ইংরেজির প্রভাষক নাজমুস সাদাত, সমাজবিজ্ঞানের প্রভাষক জেহাদুল ইসলাম ও গোলাম রাব্বানী, ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শহিদুল ইসলাম, গণিত বিভাগের প্রভাষক শীষ মোহাম্মদ, পরিসংখ্যানের প্রভাষক নুরুল ইসলাম, হিসাববিজ্ঞানের প্রভাষক জাফর ইকবাল, বাংলার প্রভাষক শাহাদাৎ হোসাইন ও মনিরুল ইসলাম এবং মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক খাইরুল ইসলাম।

এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হবিবুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, দীর্ঘদিন কলেজে এমন হামলা-মামলার খবর শুনছি। এসব কাজের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের মধ্যে পেষাদারিত্ব নেই। শিক্ষকরা হবেন সমাজের মডেল ও আইডল। তাদের থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা নেবে। পিতৃতুল্য শিক্ষকদের এমন আচরণ দেখলে শিক্ষার্থীরা কি শিখবে? শিক্ষকদের এমন অবস্থা থাকলে শিক্ষার্থীরা সম্মান দেবে না।

তিনি আরও বলেন, যারা ইন্ধন দিচ্ছেন বা যারা এই কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদের মনে রাখতে হবে- নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয় আশে-পাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে তাদের কারণে। এর প্রভাব পড়বে শিক্ষার্থীদের ওপর। যত দূর সম্ভব এই সমস্যা সামধান করতে হবে।
 
কলেজের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জানে আলম। শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা, ক্লাসের সমস্যা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘ক্লাসের কিছু টা হ্যাম্পার (ভোগান্তি) হচ্ছে।’ 
সমস্যা নিরসনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়গুলো নিয়ে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সবাই বসতে চেয়েছেন।’

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036499500274658