তিনশ নম্বরের পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারের ৯০ শতাংশই ফেল! - দৈনিকশিক্ষা

তিনশ নম্বরের পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারের ৯০ শতাংশই ফেল!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের অর্থনীতি বিষয়ের ৬২ জন প্রভাষক সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন কিন্তু পাস করেছেন মাত্র একজন। একইভাবে দর্শন বিষয়ের ১৭ জনের মধ্যে সাতজন, উদ্ভিদবিদ্যায় ১১ জনের মধ্যে ছয়জন পাস করেছেন। ভূগোলে তিনজনের মধ্যে দুজন পাস করেছেন। তিন বিষয়ে মাত্র তিনশ নম্বরের পরীক্ষা হয়েছে। অনুত্তীর্ণ কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশিরভাগই তিন বিষয়ের মধ্যে মাত্র একটিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ফেলকরাদের সবাই সরাসরি বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ ও মাদরাসার প্রভাষক পদে যোগ দিয়েছিলেন। গত বছরের আগস্টে  এই পদোন্নতির পরীক্ষাটি নেয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা পিছিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নেয়া হয়। একই সময়ে অন্যান্য ক্যাডারেরও পরীক্ষা হয়। তবে, ফেলের দিক দিয়ে শিক্ষা ক্যাডার এগিয়ে। অথচ এ ক্যাডারের মূল কাজই সরকারিকৃত ও সরকারি কলেজে পাঠদান করা। এ বছর পরীক্ষার হলে ব্যাপক কড়াকড়ি হওয়ার ফলে ফেলের সংখ্যা এত বেশি বলে দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়।  

উল্লেখ্য, বিগত দিনে এই পরীক্ষায় নকল করে ধরা পড়ে বহিষ্কারও হয়েছেন বেশ কয়েকজন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার। দৈনিক শিক্ষার হাতে থাকা তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, পরবর্তীতে নানা গোঁজামিল দিয়ে পদোন্নতি বাগিয়ে অধ্যাপক হয়েছেন বহিষ্কৃতরাও। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ল্যাটারাল এন্ট্রির বিধান রয়েছে। অর্থাৎ সরাসরি বিসিএস পরীক্ষা না দিয়েও ক্যাডারের প্রবেশ করতে পারে।  

সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতির জন্য তিনটি বিষয়ে ৩০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রথম পত্র 'বাংলাদেশ ও চলতি বিষয়াবলি', দ্বিতীয় পত্র 'সব সরকারি অফিসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আইন, বিধি ও পদ্ধতি' ও তৃতীয় পত্র 'সংশ্নিষ্ট ক্যাডারের কাজকর্ম সম্পর্কিত বিষয়াদি'। একজন কর্মকর্তা একসঙ্গে তিনটি অথবা কম সংখ্যক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন। তবে এতে অংশ নেওয়ার জন্য চাকরির বয়স কমপক্ষে চার বছর ও স্থায়ী হতে হবে। প্রতিটি পত্রের পূর্ণমান ১০০। পাস নম্বর থাকে ৫০। কোনো কর্মকর্তা কোনো সময়ই উত্তীর্ণ হতে না পারলে তার চাকরির বয়স ১৪ বছর বা নিজের বয়স ৫০ বছর হলে বিশেষ বিবেচনায় সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতি পেতে পারেন।

জানা যায়, করোনা মহামারির মধ্যেই সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতির পরীক্ষায় অংশ নেন ৩৪তম বিসিএসের দুই হাজার ১৮৯ কর্মকর্তা। তাদের অধিকাংশই উত্তীর্ণ হতে পারেননি। অনুত্তীর্ণরা একই ব্যাচের পাস করা কর্মকর্তাদের চেয়ে নানা সুবিধা থেকে পিছিয়ে পড়বেন। আগের ব্যাচের অনেক কর্মকর্তা দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার পরও অনুত্তীর্ণ হয়েছেন। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এতে উত্তীর্ণ না হলে বেতন-ভাতাও বাড়ে না, রাষ্ট্রীয় কাজও ব্যাহত হতে পারে। 

সংশ্নিষ্টরা জানান, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। ফল প্রকাশিত হয় চলতি মাসের ৮ তারিখে। উত্তীর্ণ কর্মকর্তাদের বেতন নবম থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে পরিবর্তন হবে। ফলে তাদের মূল বেতন হবে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা। ১ জুলাই থেকেই তা কার্যকর হবে। আর প্রশাসনের অনুত্তীর্ণরাসহ কয়েকটি ক্যাডারের কর্মকর্তারা বিদেশে পদায়ন ও প্রশিক্ষণও পাবেন না।

ফল পর্যালোচনায় দেখা যায় ফেলের হার শিক্ষা ক্যাডারে বেশি। প্রশাসন ক্যাডারের ২৭৯ জনের মধ্যে ১০৯ জন অনুত্তীর্ণ হয়েছেন, পুলিশে ১২০ কর্মকর্তার ৭৭ জন, পররাষ্ট্রে ২৪ জনের মধ্যে ১১ জন, তথ্যে ৩৮ জনের মধ্যে ২৭, ট্যাক্সে ৩২ কর্মকর্তার মধ্যে ২৩, গণপূর্তে (ই/এম) ১৯ জনের মধ্যে ১৩ ও গণপূর্তে (সিভিল) ৪০ জনের মধ্যে ২৫ জন অনুত্তীর্ণ হয়েছেন। আনসার ক্যাডারে ১৬ জনের মধ্যে ১০ জন, পরিবার পরিকল্পনায় পাঁচজনের মধ্যে চারজন, খাদ্যে চারজনের মধ্যে দু'জন উত্তীর্ণ হতে পারেননি। 

এ বিষয়ে পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ বলেন, ফল সাধারণত এতটা খারাপ হয় না। বিপুলসংখ্যক প্রার্থী অনুত্তীর্ণ হওয়া পিএসসির জন্য রেকর্ড। কারণ, এ প্রার্থীরাই বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পেয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, চাকরির পর অনেকে পড়াশোনার প্রতি উদাসীন হয়ে যান। আবার মাঠ প্রশাসনে যারা কাজ করেন, তাদের সব সময় কাজের মধ্যে থাকতে হয়। কাজের চাপে তারা সিলেবাস অনুসরণ করে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পান না। এ ছাড়া করোনার মধ্যে অনেক কিছু বদলে গেছে। অনেক পরীক্ষার সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। পিএসসি হয়তো তাদের কোয়ালিটি ও পদ্ধতি বজায় রেখেছে। ফলে একটা বিপর্যয় হয়ে গেছে। আশা করি, কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে নজর দেবেন।

পিএসসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, অনুত্তীর্ণরা আবার পরীক্ষা দিতে পারবেন। পরবর্তীতে তারা পাস করবেন- এমন আশা করা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচছুক পিএসসির সাবেক একজন সদস্য দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, রাজধানীর অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষার হলে ব্যাপক নকলবাজি হয়। এ বছর হয়তো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও কড়াকড়িভাবে পরীক্ষা নেয়ায় ফেলের হার বেড়েছে। বিগত বিএনপির আমলে পিএসসির প্রশ্নফাঁস, হাওয়া ভবনের তালিকাসহ পিএসসির বিরুদ্ধে সব সময়েই কমবেশি অভিযোগ রয়েছে।

অনুত্তীর্ণ একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, যারা দেশের জন্য পরিবার-পরিজনকে ঝুঁকিতে রেখে কাজ করছেন, তাদের পরীক্ষার নামে বঞ্চিত করা হয়েছে। কারণ, অংশগ্রহণকারী সবাই যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই ক্যাডার হয়েছেন। সবাইকে পাস করিয়ে দিলেও কোনো ক্ষতি হতো না। এখন অনুত্তীর্ণ বেশিরভাগ কর্মকর্তা এই ফল পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করেছেন। চলতি সপ্তাহে আরও অনেকে আবেদন করবেন বলে জানা গেছে।

পিএসসি সূত্র জানায়, প্রতিবছরই কিছুসংখ্যক প্রার্থী  ফেল করেন। গতবারের মতো এবারও হয়েছে। ফল পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন বেশি আসেনি। বেশিসংখ্যক আবেদন এলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, পরীক্ষার নম্বর ভুল হওয়ার আশঙ্কা নেই। কারণ, নিরীক্ষকের মাধ্যমে খাতা দেখানো হয়।

প্রশাসন ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের বেশিরভাগ কর্মকর্তা উত্তীর্ণ না হওয়ায় মাঠ প্রশাসনে যথাসময়ে ইউএনও পদায়নে সংকট দেখা দেবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব ও একান্ত সচিব পদেও পদায়ন করা যাবে না।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0078880786895752