বেতনবৈষম্য নিরসন ও চাকরি জাতীয়করণসহ তিন দফা দাবিতে মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনের সড়কে অবস্থান কর্মসূচি ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি-কাম-প্রহরীরা। পাশাপাশি ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
এর আগে আজ সকাল ১০টা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কয়েক হাজার দপ্তরি-কাম-প্রহরী সড়কে অবস্থান নিয়ে তিন দফা দাবিতে অধিদপ্তরের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। এতে ওই এলাকার সড়কগুলো বন্ধ হয়ে যায়। দুই পাশের সড়কগুলোতে যানজট দেখা দেয়ায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
আরও পড়ুন : তিন দফা দাবিতে দপ্তরিদের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ঘেরাও
আন্দোলনকারীরা জানান, সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৭ হাজার দপ্তরি-কাম-প্রহরী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সরকারি বিদ্যালয়ে চাকরি করেও তারা ন্যায্য বেতনভাতা পাচ্ছেন না। তাদের অমানবিকভাবে দিনে দাপ্তরিক কাজ ও রাতে প্রহরার দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে এ পদে নিয়োগের পর থেকে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না। তাই তারা তিন দফা দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ঘেরাও করেন।
দপ্তরিদের দাবিগুলো হলো- ১) দপ্তরি কাম প্রহরী পদটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে ২) মহামান্য উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন করতে হবে ৩) আইনানুযায়ী কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করতে হবে ৪) চলমান বেতন ও উৎসব ভাতার বৈষম্য দূর করতে হবে ৫) নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।
কর্মসূচিতে দপ্তরিদের নেতারা জানান, মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত ও গতিশীল করার লক্ষে দেশব্যাপী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম প্রহরী পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দিয়ে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ দপ্তরিরা। নিয়োগের পর থেকে আমরা সততা ও কর্তব্যপরাণয়তার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছি।
বেতন-ভাতার বিষয়ে তারা বলেন, একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেও আমরা ন্যায্য বেতন ভাতা পাই না। তার মধ্যে আবার বিভিন্ন উপজেলায় বেতন বিভিন্ন ধরনের। কোনো উপজেলায় ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা আবার কোথাও ১৬ হাজার ১৩০ টাকা করে বেতন দেয়া হচ্ছে। আবার কোনো উপজেলার উৎসব ভাতা পাচ্ছে কোথাও পাচ্ছে না।
২৪ ঘণ্টা ডিউটি পালন করাকে অমানবিক ও নজিরবিহীন উল্লেখ করে তারা বলেন, আমাদের দিনে দাপ্তরিক কাজ ও রাতে পাহারার দায়িত্ব পালন করতে হয়। এতে করে আমরা স্ত্রী-সন্তান ও পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও দপ্তরিরা নানারকম সমস্যায় জর্জরিত।
তারা আরও বলেন, আমাদের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি নেই, নানাবিধ সমস্যার কারণ এবং চাকরি জাতীয়করণের জন্য ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করি। চলতি বছরের ৩০ জুলাই আদালতের রায় আমাদের পক্ষে এলেও এ বিষয়ে অধিদপ্তরে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা বাধ্য হয়ে দেশের সব জেলা থেকে দপ্তরি-কাম-প্রহরী একত্রে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি।
সরকারের এক শ্রেণির সুবিধাভোগী ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ ও প্রধানমন্ত্রীর সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে বলে জানান তারা। কর্মসূচি থেকে দপ্তরি কাম প্রহরীদের ন্যায্য দাবিগুলো অনতিবিলম্বে কার্যকর করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি উদার্ত্ত আহ্বান জানিয়ে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সাধন কান্ত বাড়ৈ, মো. নাছির উদ্দিন, আরমান হোসেন, মিজানুর রহমান, মজিবুর রহমান, মোহন মিয়া, শফিকুল ইসলাম, আ. রহমান, মো. বাবর, মো. মিঠুন, মো. রিয়াজ শেখ প্রমুখ।
