অন্য শিক্ষক দিয়ে দাখিলের উত্তরপত্র মূল্যায়ন অপ্রয়োজনীয় চিন্তা ও বিভ্রান্তি তৈরি হবে বলে মনে করেন মাদরাসা বিষয়ে অভিজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন।
বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের দাখিল পরীক্ষার বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের উত্তরপত্র মাদরাসা শিক্ষকের বাইরে অন্য ধারার শিক্ষকদের দিয়ে মূল্যায়নে সংসদীয় কমিটির পরামর্শের পরিপেক্ষিতে তিনি এ কথা বলেন । বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) অন্য ধারার শিক্ষকদের দিয়ে দাখিলের উত্তরপত্র মূল্যায়নের সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি।
এ বিষয়ে ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, মাদরাসায় বাংলা, অংক ও ইংরেজি যারা পড়ান তারা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা। "তারা কিন্তু মাদরাসায় পড়া নন। কোনো কোনো মাদরাসায় হয়তো সুনির্দিষ্ট কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অযোগ্যতার অভিযোগ থাকতে পারে। কিন্তু ঢালাও ভাবে অন্য ধারার শিক্ষকদের দিয়ে এসব বিষয়ের উত্তরপত্র মূল্যায়নের চিন্তা করলে সেটি নতুন করে বিভ্রান্তি তৈরি করবে। কারণ, এসব শিক্ষকরা সাধারণ শিক্ষায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চশিক্ষিত,"।
আরও পড়ুন দাখিলের গণিত-ইংরেজি খাতা অন্য বোর্ডের শিক্ষকদের দিয়ে দেখানোর সুপারিশ
দাখিলের খাতা দেখানোর সুপারিশ বান্তবায়ন না করার দাবি শিক্ষকদের
দাখিলের খাতা দেখানোর সুপারিশ বান্তবায়ন না করার দাবি শিক্ষকদের
মাদরাসায় যোগ্য শিক্ষকের সংকট আছে : হানিফ
"এগুলো অপ্রয়োজনীয় চিন্তা। বরং ব্যবস্থাপনা আরও স্বচ্ছ করে অধিকতর যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করাটাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।"
এ প্রসঙ্গে সংসদীয় কমিটির সদস্য এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, বিষয়টি আলোচনায় এসেছে কারণ দেখা যাচ্ছে দাখিলে এসব বিষয়ে ভালো করা অনেক শিক্ষার্থী পরে এসব বিষয়ে ভালো করছেনা। অর্থাৎ তাদের মধ্যে দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে। অনেক সংসদ সদস্যই এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন। সে কারণে আলোচনা হয়েছে।
হানিফ বলেন, মনে হচ্ছে একই ধারার শিক্ষকরা সবাই ঠিকমত শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র দেখতে পারছেন না। দাখিল পাস করেই উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার দিকে যায় শিক্ষার্থীরা এবং পরবর্তীতে চাকুরীর জন্য অনেক পরীক্ষায় তাদের অংশ নিতে হয়। এখানে সঠিক মূল্যায়ন হলে পরে আর তাদের সমস্যায় পড়তে হবে না বলেই আমরা চাই তারা এসব বিষয়ে যথাযথ যোগ্যতা অর্জন করুক এবং সেভাবেই মূল্যায়ন হোক। কিন্তু এসব বিষয়ে যোগ্য শিক্ষকেরও সংকট আছে। আবার অনেকের মধ্যে অতিরিক্ত নাম্বার দেয়ার প্রবণতাও আছে। অন্য ধারার শিক্ষক দিয়ে মূল্যায়ন হলে এসব সমস্যা কেটে যাবে বলে মনে করেছে কমিটি।
সরকার নিয়ন্ত্রিত মাদরাসায় যা পড়ানো হয়:
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় দাখিল হলো এসএসসির সমমানের এবং দাখিল মাদরাসাগুলোতে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। প্রথম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত অংশকে ইবতেদায়ী বলা হয়।
প্রধানত: ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোরআন ও হাদিস শিক্ষার পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানেও বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও বাংলাদেশের বিশ্ব পরিচয়ের মতো বিষয়গুলো পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের।
আর দাখিল মাদরাসা পরিচালনার জন্য মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের যেমন অনুমোদন দরকার তেমনি এন্ট্রি লেভেলে (প্রভাষক, মৌলভী ইত্যাদি) শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কতৃপক্ষ কতৃক প্রাথী বাছাই হয় ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাস থেকে। মাদরাসার প্রধান ও সহকারী প্রধান পদে নিয়োগের ক্ষমতা এখনও বেসরকারি ব্যবস্থাপনা কমিটির হাতে।
তার আগে ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করতেই শিক্ষক নিবন্ধন কতৃপক্ষের দেয়া প্রাক-যোগ্যতা সনদ বাধ্যতামূলক। এই সনদ থাকলে মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পরীক্ষার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকত। সব পদে নিয়োগের জন্য স্ব স্ব ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়োগ পরীক্ষা নিত। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে এই বিধান চালুর আগে ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমেই মাদরাসার সব পদে নিয়োগ হতো।