দুই বছরেরও বেশি সময় আগে থেকে বিদেশে অবস্থান করছেন কক্সবাজারের এক মাদরাসা শিক্ষক। সরকারি বিধি মোতাবেক তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো তার চাকরি রক্ষায় তৎপর মাদরাসা প্রধান। তিনি ওই শিক্ষকের পক্ষে চিকিৎসা ছুটির কথিত কাগজপত্র তৈরি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, ওই শিক্ষক বিদেশে থাকলেও তার বেতনভাতার সরকারি অংশ তথা এমপিওর বিল ব্যাংকে পাঠান সুপার। পরে ওই শিক্ষক দেশে ফিরলে তা উত্তোলন করে ভাগবাটোয়ারা করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে মাদরাসার অন্য শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এমনকি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তা বিষয়টি জানার পরও সুপারের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলেও জানা গেছে।
অভিযোগে জানা যায়,, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চের দিকে দেশের সব প্রতিষ্ঠানের মত কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী নতুন মহাল রহমানিয়া দাখিল মাদরাসাও বন্ধ হয়ে যায়। এ সুযোগে ওই মাদ্রাসার ক্রীড়া শিক্ষক মো. ফেরদৌস ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসের দিকে বিদেশি সামুদ্রিক বাণিজ্যিক জাহাজের ক্রুর হিসেবে চাকরি নিয়ে দেশ ত্যাগ করেন। সেই থেকে তিনি ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশে অবস্থান করেন। ৭-৮ মাস দেশে না থাকার পরও সুপার মিজানুর রহমান রহস্যময় কারণে প্রতিমাসে তার সরকারি অংশের বেতন বিল করেছেন। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ওই শিক্ষক দেশে ফিরলে এমপিওর টাকা উত্তোলন করে তা ভাগবাটোয়ারা করা হয়। শিক্ষকরা জানান, মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি সরকারি বিধি সম্পর্কে তেমন অবগত না হওয়ায় তাকে নয় ছয় বুঝিয়ে সুপার বিদেশে অবস্থান করা শিক্ষকের বেতন বিলে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়।
অভিযোগে উঠেছে, অনুপস্থিত শিক্ষক ফেরদৌসের জায়গায় অনেক সময় সুপার মিজানুর রহমান নিজে অথবা ফেরদৌসের স্ত্রীকে দিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করানো হয়েছে। শিক্ষকরা বিষয়টি সভাপতিকে জানানোর পর তা বন্ধ হয়। পরে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে মাস দু'য়েক ফেরদৌস দেশে ছিলেন। পুনরায় ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে এপ্রিলের দিকে পুনরায় বৈদেশিক জাহাজে চাকরি নিয়ে দেশ ত্যাগ করেন শিক্ষক ফেরদৌস। শিক্ষকরা বলছেন, তিনি এখনো বিদেশে অবস্থান করছে। কিন্তু ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলেও সুপার প্রতিমাসেই সভাপতিকে বুঝিয়ে তার বেতন বিল করে অনৈতিক সুবিধা আদায় করে আসছেন। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাস থেকে সরকার পুনরায় প্রতিষ্ঠান চালু করে। কিন্তু সুপার এখনো অনুপস্থিত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মাদরাসার শিক্ষকরা বলেন, একাধিকবার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন ও একাডেমিক সুপার ভাইজার রাশেদুল ইসলাম পরিদর্শনে এসে উপস্থিতি খাতায় ওই শিক্ষকের অনুপস্থিতি দেখে জানতে চান। কিন্তু সুপার একেক সময় একেক কথা বলেন। তিনি কোন সময় বলেন, সে না বলে বিদেশে চলে গেছে। কোন সময় বলেন অসুস্থ। আবার কোন সময় সে ছুটিতে আছে বলে চালিয়ে দেন সুপার। কর্মকর্তারা তার বেতন স্থগিত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বললে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাস থেকে তার বেতন স্থগিত করা হয়। কিন্তু বিদেশে থাকা শিক্ষকের চাকরি রক্ষায় সুপার তৎপর। তিনি দুই বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করা শিক্ষকের পক্ষ হয়ে মেডিকেল ছুটির কাগজপত্র তৈরি করে তার পক্ষে এখনো সাফাই গেয়ে যাচ্ছেন। এমনকি এখনো পর্যন্ত উপস্থিতি খাতায় ঐ শিক্ষককে অনুপস্থিত। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে হাাজিরা খাতায় স্বাক্ষরের জায়গা খালি রাখা হয়েছে।
শিক্ষকরা আরও জানান, উপজেলা ও জেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা তার বিদেশে থাকার তথ্য বারবার নিশ্চিত হওয়ার পরও রহস্যময় কারণে এখনো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি। গত কয়েক মাস আগে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। এরপরও সুপার মেয়াদ শেষ হওয়া সভাপতিকে বশে এনে বিদেশে অবস্থান করা শিক্ষক ফেরদৌস অসুস্থ বলে ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে ছুটি দেখান। এমনকি গত কমিটির মেয়াদের সময়ের ‘ভুয়া রেজুলেশন’ তৈরি করে সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত করা বেতন বিল তৈরির অপচেষ্টা চালান বলেন জানিয়েছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকরা এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে সুপার মিজানুর রহমান কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি একেক সময় একেক রকম কথা বলেন। শেষে তিনি বিদেশে অবস্থানকারী শিক্ষকের স্ত্রীর মোবাইল নম্বর দিয়ে, তার সাথে কথা বলতে বলেন।
মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলামের সাথে দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই শিক্ষক ছুটিতে আছেন। এ কথা বলেই লাইন কেটে দেন তিনি। এরপর বারবার টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি প্রথমে ফোন ধরেননি। পরে তিনি ফোন ধরে বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত সুপার জানেন। এরপর থেকেই তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বিদেশে অবস্থান করা শিক্ষক ফেরদৌসের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ফেরদৌস প্রায় ১ বছর আগে থেকে এখনো পর্যন্ত বিদেশী জাহাজে চাকরি করছেন। কিছুদিনের মধ্যে তার দেশে ফেরার সম্ভবনা রয়েছে বলেও জানান তারা।