করোনা মহামারির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চলমান দেশের প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্থ। এ পরিস্থিতিতে দূরশিক্ষণের মাধ্যমে ঘরে বসে শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে একটি সুনির্দিষ্ট টেলিভিশন চ্যানেল চালুর চিন্তার কথা সংসদকে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। আর ২০ হাজার ৪৯৯ স্কুলের মধ্যে ১৫ হাজার ৬৭৬ টি এবং চার হাজার ২৩৮টি কলেজের মধ্যে ৭০০টিতে কলেজে অনলাইন ক্লাস চালু করেছে বলেও সংসদকে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) সংসদে জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে নওগাঁ-২ আসনের শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
তিনি বলেন, সারা বছরই যাতে শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারে তার জন্য একটি ডেডিকেটেড চ্যানেল চালুর বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার পরে সরাসরি উপস্থিতিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ে মধ্যে করোনাভাইরাসের টিকা প্রদানের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এই টিকা প্রদানের কর্মসূচি আবাসিক শিক্ষার্থীদের দিয়ে শুরু হবে। আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদানের পর হলগুলো খুলে দেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি ক্লাস শুরু হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পূরণে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব সক্ষমতা ও বাস্তবতা অনুযায়ী পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা প্রস্তুত করে তা বাস্তবায়নে কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন থেকে একটি গাইডলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
দীপু মনি বলেন, বর্তমানে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে পরীক্ষাও নেয়া হচ্ছে।
সংরক্ষিত নারী আসনের ফেরদৌসী ইসলামের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এ পর্যন্ত ১৬ টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। যে সকল জেলায় একটিও বিশ্ববিদ্যালয় নেই সেখানে পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।
সরকারদলীয় সাংসদ সহিদুজ্জামানের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। নীতিমালার আলোকে যোগ্যতার ভিত্তিতে এমপিওবিহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহকে পর্যায়ক্রমে এমপিওভুক্ত করা হয়ে থাকে। যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত নয় সে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারীর ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক ফিরিয়ে আনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২০ হাজার ৪৯৯ স্কুলের মধ্যে ১৫ হাজার ৬৭৬ টি এবং চার হাজার ২৩৮টি কলেজের মধ্যে ৭০০টি কলেজে অনলাইন ক্লাস চালু করেছে। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনলাইন ক্লাস নেয়া হচ্ছে।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এর কিছুদিন পর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষিত রাখতে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। করোনার চলমান ছুটি কয়েক দফা বাড়ানোর পর আবারও ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। একবছরের বেশি সময় ধরে ক্লাস থেকে দূরে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে টিভি, অনলাইন, রেডিও মাধ্যমে ক্লাস চালু করা হলেও তা সর্বস্তরে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ফলে অনেকে পিছিয়ে পড়েছে। বাল্যবিবাহ, পরিবারে অশান্তি তৈরি হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস শুরু করা হলেও এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয়নি। এদিকে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বারবার দুরশিক্ষণে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার সুপারিশ করা হচ্ছে।
সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর গত ফেব্রুয়ারি মাসের কার্যাবলি সম্পর্কিত মাসিক প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের দূরশিক্ষণে আরও সম্পৃক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের দূরশিক্ষণের মাধ্যমে ঘরে বসে শিক্ষা কার্যক্রমে আরও সম্পৃক্ত করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে গত ৭ এপ্রিল লিখিতভাবে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এর আগেও মন্ত্রণালয়গুলোর ডিসেম্বর মাসের কার্যাবলি সম্পর্কিত মাসিক প্রতিবেদনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রস্তাবে শিক্ষার্থীদের দুরশিক্ষণে আরও সম্পৃক্ত করতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। প্রস্তাবে বলা ছিল, ‘করোনা মহামারির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দূরশিক্ষণের মাধ্যমে ঘরে বলে শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের আরও সম্পৃক্ত করতে বিশেষ বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে। সে প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষা ডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষা ডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।