দ্রুত নতুন শিক্ষকদের যোগদান চান প্রতিষ্ঠান প্রধানরা - দৈনিকশিক্ষা

দ্রুত নতুন শিক্ষকদের যোগদান চান প্রতিষ্ঠান প্রধানরা

রুম্মান তূর্য |

পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ না হওয়ায় শিক্ষক পদে নতুন সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা যোগদান করতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষক সংকটে থাকা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা দ্রুত নতুন শিক্ষকদের যোগদান করানোর দাবি জানিয়েছেন। 

এদিকে শিক্ষক পদে নতুন সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য পূরণ করা ফরম জেলা-উপজেলা থেকে এনটিআরসিএতে পৌছেছে। এ ফরমগুলো এন্ট্রি করছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। তবে কতজন প্রার্থীর ফরম পাওয়া গেছে সে বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কোনো তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দিতে পারছেন না। তারা বলছেন, ফরম এন্ট্রি চলছে। সুপারিশপ্রাপ্তদের ফরমগুলোর জেলাভিত্তিক তালিকা তৈরি করা হবে। অক্টোবরের শুরুর দিকে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো যাবে বলে আশা করেছেন কর্মকর্তারা।

এদিকে নিয়োগ সুপারিশের জন্য নির্বাচিত হওয়ার আড়াইমাস পরেও চূড়ান্ত সুপারিশ না পেয়ে হতাশ প্রার্থীরা। তারা দ্রুত শিক্ষক পদে যোগদান করার দাবি জানিয়েছেন। চাকরি পাওয়ার পরেও যোগদানে অহেতুক দেরি হওয়ায় অনেক প্রার্থীই হতাশ। তারা বলছেন, দ্রুত যোগদানের ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষক সংকট কিছুটা কমবে। তারা যোগাদানের পর পুলিশ ভেরিফিকেশন করারও দাবি জানিয়েছেন। 

করোনায় দেড় বছরের বেশি সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। স্কুল খোলার পর শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করেছিল সরকার। আবেদন গ্রহণের পর প্রার্থীরা গত ১৫ জুলাই প্রাথমিক সুপারিশও পেয়েছেন। কিন্তু শিক্ষক পদের যোগদানের আগে প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ও প্রার্থীরা। কিন্তু এ জন্য অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর একজন কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘আমরা প্রার্থীদের ফরম সংগ্রহ করেছি। ডাকযোগে পাঠানো ফরমগুলো এন্ট্রি করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে আমরা জেলাওয়ারি তালিকা তৈরি করছি। ফরমগুলো এন্ট্রি শেষ হলে বোঝা যাবে কতজন ফরম পূরণ করে পাঠিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ফরম এন্ট্রি করে তালিকা করছি আমরা। এ তালিকা তৈরি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, আমরা যত দ্রুত সম্ভব এ কাজ করতে চাচ্ছি। তালিকা এন্ট্রির পর জেলা পর্যায়ের তালিকা করা হবে। এরপর তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। সেখান থেকে পুলিশকে তা পাঠিয়ে ভেরিফিকেশন শুরুর করা হবে। 

তবে কবে নাগাদ ভেরিফিকেশন শুরু হবে এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কোনো তথ্য দিতে পারেনি এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা। তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এ দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। আমরা প্রার্থীদের ফরম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো, পুলিশ ভেরিফিকেশনের রিপোর্ট পাওয়ার পর সুপারিশপত্র প্রকাশ করবো। কবে নাগাদ পুলিশ ভেরিফিকেশন শুরু হতে পারে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি কর্মকর্তারা। তারা আরও জানিয়েছেন দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট ৮০ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য আছে। 

এ পরিস্থিতে দ্রুত শিক্ষক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের দ্রুত যোগদন করানোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার লৌহজং পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এস এম হেলাল দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষক নেই। ৫ জন শিক্ষক পদ শূন্য আছে। এ পরিস্থিতে বর্তমানে সীমিত সময় ক্লাস পরিচালনার নির্দেশনা থাকায় সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস পুরোদমে শুরু হবে। এ পরিস্থিতিতে যেকোনো সময় পুরোদমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলে আমরা বিপাকে পড়বো। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাতে চাই নতুন সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের দ্রুত যোগদানের ব্যবস্থা করা হোক। 

ঝালকাঠির নলছিটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান জলিলুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে ১০ শিক্ষকের পদ শূন্য। এখন যেহেতু কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীর নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে সেজন্য আপাতত সমস্য না হলেও পরে সব শিক্ষার্থীর ক্লাস চলাতে সমস্যা হবে। এনটিআরসিএ শিক্ষক পদে প্রার্থী সুপারিশ করেছে, তবে কেউ যোগদান করতে পারেনি। আমরা চাই নতুন শিক্ষকরা দ্রুত যোগদান করুক। ৮ জন শিক্ষকের চাহিদা দিয়ে ৮ জন সুপারিশ পেয়েছেন। কিন্তু তারা যোগদান করতে না পারায় সংকট রয়েই গেছে। প্রার্থীদের দ্রুত যোগদানের ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রতিষ্ঠান প্রধান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নতুন শিক্ষক নিয়োগের আবেদন হলো। সুপারিশ হলো। কিন্তু শিক্ষক সংকট গেলো না। মনে হচ্ছে সরকার কিছুটা খরচ কমাতে প্রার্থীদের যোগদন করাচ্ছেন না। আমরা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা চাই দ্রুত নতুন শিক্ষকদের যোগদানের ব্যবস্থা করা হোক। 

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পঞ্চানন্দ দাখিল মাদরাসার সুপার আবেদ আলী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে ৪ জন শিক্ষকের চাহিদা দিয়েছিলাম। ৪ জন প্রার্থী সুপারিশ পেয়েছেন। এরপর মাদরাসায় কর্মরত এক শিক্ষক মারা গেছেন। শিক্ষক সংকটে আমরা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বিপাকে আছি। যেভাবে চলছে নতুন শিক্ষকরা কবে যোগদান করতে পারবেন সে বিষয়ে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। আমরা চাই সরকার নতুন শিক্ষকদের দ্রুত যোগদানের ব্যবস্থা করুক। 

নতুন সুপারিশ প্রাপ্ত দ্রুত যোগাদানের ব্যবস্থা করানোর তাগিদ জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদও। পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা চাচ্ছি দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ হোক। কিন্তু দেরি হচ্ছে। যাচাই বাছাই অবশ্যই দরকার আছে। আমারও চাই ভেরিফিকেশন শেষে শিক্ষকরা যোগদান করুক। কিন্তু যোগদান প্রক্রিয়া যেন দ্রুত হয়। যেভাবে এগুচ্ছে নতুন শিক্ষকরা কবে যোগদান করবেন সে বিষয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। এ দিকে সারাদেশের প্রতিষ্ঠান প্রধানরা চাচ্ছেন দ্রুত শিক্ষকরা যোগদান করুক। আমরা পরিষদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এনটিআরসিএতে গিয়ে তাদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। 

এদিকে নতুন সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, আমরা দ্রুত শিক্ষক পদে যোগদান করতে চাই। দুই মাসের বেশি সময় হলো আমরা সুপারিশ পেয়েছি। কিন্তু যোগদান করতে পারিনি। আমরা হতাশ। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের নিয়োগ পাওয়া প্রার্থীরা দুই মাসে এমপিওভুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। আমরা যোগদানই করতে পারলাম না। আমার পুলিশ ভেরিফিকেশনের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এতো দেরি কেন হচ্ছে বুঝতে পারছি না। 

প্রার্থীরা আরও বলেন, শিক্ষক পদে সুপারিশ পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অনেকেই আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। ক্লাস নেওয়ার অনুরোধ করছেন। আমরাও ক্লাস নিতে চাই। কিন্তু এনটিআরসিএ আমাদের দ্রুত যোগদানের জন্য কোনো পদক্ষেপ এখনো কেনো নিচ্ছে না বুঝতে পারছি না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক যোগদানের পর পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়। আমরাও চাই আমাদেরও যোগদানের পর পুলিশ ভেরিফিকেশন হোক। ডোপ টেস্ট করতেও আমাদের অসুবিধা নেই। যাচাই-বাছাই আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু দ্রুত বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি চাই।

ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত - dainik shiksha ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল - dainik shiksha শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল - dainik shiksha ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003242015838623