নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা - দৈনিকশিক্ষা

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কয়েকটি কোচিং মালিক নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে গুজব আর অপপ্রচার করছে। এসব অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ২৩ অক্টোবর রাজধানীর মতিঝিল থাকায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের’ (এনসিটিবি)।

এনসিটিবির কর্মকর্তারা মনে করছেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে কোচিং সেন্টারের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য কোচিং সেন্টারের মালিকরা নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রে’ লিপ্ত হয়েছেন। তারাই কিছু লোককে রাস্তায় নামিয়েছেন। ফেসবুকে নানা নামে গ্রুপ খুলেছে অপপ্রচারকারীরা।’ এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।

২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় এবং মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম পাঠদান শুরু হচ্ছে। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ এবং ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বই ছাপা নিয়েই বেশি ‘জটিলতায়’ পরেছে এনসিটিবি।

এর মধ্যে ‘বিজ্ঞান ও অনুসন্ধানী পাঠ’ বইটি কয়েকটি ছাপাখানায় পুরোদমে মুদ্রণ কাজ চলমান থাকা অবস্থায় সম্প্রতি এনসিটিবির নির্দেশ তা স্থগিত করা হয়েছে। বইটির প্রায় এক লাখ কপি ছাপানো হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিভাবকদের ‘অপপ্রচারের’ কারণে ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের পান্ডুলিপি চূড়ান্ত করতে ‘ধীরে’ এগুচ্ছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।

এনসিটিবির সম্পাদনা শাখার একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কিছু ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বিষয়জুড়ে দিয়ে ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইটির ২৬০ পৃষ্ঠার মতো পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করা হয়েছিল। পরে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বিষয়গুলো বাদ দিয়ে বইটির আকার ২০০ পৃষ্ঠার কাছাকাছি রাখা হচ্ছে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাঠ্যবই ছাপা নিয়ে কোনো জটিলতা নেই। যেহেতু নতুন শিক্ষাক্রম, সেহেতু আমরা একটু ভেবে চিন্তে সবকিছু চূড়ান্ত করছি। তবে নভেম্বরের মধ্যেই পাঠ্যবই ছাপা শেষ হয়ে যাবে।’

অপপ্রচার রোধে পদক্ষেপ

এনসিটিবির ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবই ছাপার কাজ এখন চলমান। এই সময়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে এসব বই যাওয়ার কথা নয়। এরপরও বইগুলোর বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ‘ফেসবুকে’ নানা রকম ‘অপপ্রচার’ হচ্ছে। রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের শাখা প্রধান নাসির উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত খণ্ডকালীন সায়েদুজ্জামান এবং ভিকারুন নিসা স্কুলের হাবিবুর রহমান, মতিঝিল আইডিয়ালের আবদুল মজিদসহ কয়েকজন শিক্ষকের সংশ্লিষ্টতায় মানববন্ধন করেছেন কথিত অভিভাবকরা। এছাড়া ঢাকা, রাজশাহী, বরিশালসহ কয়েকটি স্থানে বিভিন্ন কর্মসূচির নামে শিক্ষাক্রমের ‘অপব্যাখ্যা’ দেয়া হচ্ছে, ‘ভুল তথ্য’ প্রচার করা হচ্ছে এবং শিক্ষাক্রমে যেসব তথ্য-উপাত্ত নেই তা জুড়ে দিয়ে অপ্রচার চালানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মামলা করেছি। কারণ আমরা অপপ্রচারের শিকার হচ্ছি। আমাদের কাছে বই আসার আগেই অভিভাবকরা কীভাবে নতুন শিক্ষাক্রমের বই পেলেন? তারা কিসের ভিত্তিতে মানববন্ধব করে বই বাতিলের দাবি করছেন? সব বই তো এখনও ছাপা হয়নি।’

আন্দোলনকারী কথিত অভিভাবকরা কোথাও থেকে, কীভাবে নতুন শিক্ষাক্রমের বইগুলো পেলেন বিষয়টি তদন্ত হওয়া প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি; এজন্য মামলা করেছি। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী পদক্ষেপ নেয় সেই অপেক্ষায় আছি।’

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত ২৩ অক্টোবর রাতে ‘জুম সভা’ করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ঢাকা অঞ্চলের প্রায় ৫০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গে। 

কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন, জুম সভায় শিক্ষামন্ত্রী নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ‘অপপ্রচারের’ বিরুদ্ধে সব স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ সব শিক্ষককে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি শিক্ষাক্রম সম্পর্কে অভিভাবকদের অবহিত করতে সব স্কুলে অভিভাবক সমাবেশ আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন।

মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী।

সভায় ‘অপপ্রচার’ নিয়ে সতর্ক থাকতে প্রধান শিক্ষক ও শ্রেণী শিক্ষকদের পরার্মশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে একাধিক বলেন, সভায় জানানো হয়েছে মূল্যায়ন নির্দেশিকা ও টিচার্স গাইড শীঘ্রই সারাদেশের স্কুলে পৌঁছে যাবে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের তথ্য সংগ্রহে আগামী নভেম্বরে একটি অ্যাপ চালু করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় ভর্তি কার্যক্রমও নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করে হবে বলে সভায় জানানো হয়।

জুম সভায় অংশ নেয়া বিভিন্ন স্কুলের প্রধান বা সহকারী প্রধানরা শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছেন, ভিকারুন নিসা স্কুলসহ অন্যান্য স্থানে যারা জমায়েত হচ্ছেন তাদের মধ্যে আসল অভিভাবক ছিলেন না। তারা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য সরকারের ‘শিক্ষাক্রমকে’ বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন।

ওই সভায় ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী দাবি করেন, তার প্রতিষ্ঠানের সামনে যারা মানববন্ধন করেছিলেন তাদের কেউই প্রকৃত অভিভাবক নন। তারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারেন।

কয়েকজন প্রধান শিক্ষক নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ‘অপপ্রচারের’ চালানোর কথাও তুলে ধরেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকরা জানিয়েছেন....আমরাও খোঁজ নিয়ে দেখেছি, যারা অভিভাবকের ব্যানারে নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে অপপ্রচার (শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবি) চালাচ্ছেন তারা কেউই প্রকৃত অভিভাবক নয়।’

ফেসবুকে হঠাৎ গড়ে তোলা এবং প্রকৃত পরিচয় লুকানো এডমিন দ্বারা পরিচালিত ‘সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন’র ব্যানারে একদল কথিত ‘অভিভাবক’ গত ১৯ অক্টোবর রাজধানীর ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের সামনে মানববন্ধন করে নতুন শিক্ষাক্রম সংস্কার ও পরীক্ষা পদ্ধতি চালু রাখার দাবি জানান। 

তারা বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেই। চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়তে হবে আটটি বিষয়।

তারা আরও অভিযোগ করেন, নতুন শিক্ষাক্রমে সবচেয়ে বড় সমস্যা দলগত কার্যক্রমে। দেখা যাচ্ছে, স্কুল থেকে দেয়া দলগত কাজটি করতে হচ্ছে স্কুল পিরিয়েডের পর। এ কারণে ছাত্রছাত্রীদের বন্ধু-বান্ধবীর বাসায় বা অন্য কোথাও একত্রিত হয়ে তা সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এতে ছাত্রছাত্রী অভিভাবক উভয়কেই নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অনেক অভিভাবক স্কুল ছুটির পর তার সন্তানকে অন্য কারো বাসায় নিয়ে যেতে আগ্রহী নয় এবং স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না বলে ওই মানববন্ধনে দাবি করা হয়।

প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে - dainik shiksha তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত - dainik shiksha বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003389835357666