চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে লাখ টাকা খরচ করে তারা ভর্তি হয়েছিলেন বেসরকারি মেডিকেল কলেজে। কিন্তু তিন বছর পর সে স্বপ্ন ভেস্তে যেতে পরেছে। কখনো চিকিৎসক হতে পারবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন ঢাকার আশুলিয়ার নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠান কর্তপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলে তারা মাইগ্রেশনের দাবি জানিয়েছেন। এ দাবিতে রোববার রাজধানীর মহাখালিতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে মানববন্ধন করবেন বলে জানা গেছে। শনিবার প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শিক্ষার্থী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজের বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। কিন্তু পরে আদালতে করা রিট আবেদনের দোহাই দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থী ভর্তি করছিলো। মেডিকেল কলেজ পরিচালনার জন্য বিএমডিতি অনুমোদন প্রতিষ্ঠানটির নেই। শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি কিছু আগে প্রতিষ্ঠানটি আইনি লড়াই করে সংগ্রহ করেছে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে প্রতিষ্ঠানটিতে ৫২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল। এরপর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে আরও ৯জন শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা চিকিৎসক হওয়া নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে। তাদের অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটিতে চিকিৎসা শিক্ষার পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধাও নেই। ভাড়া করা রোগী দেখিয়ে হাসপাতাল চলানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। তারা মাইগ্রেশন নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চাচ্ছেন। এদিকে নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজে কর্তপক্ষ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে নারাজ।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের মিথ্যা আশ্বাস এবং আদালতের কিছু কাগজপত্র দেখিয়ে ভর্তি করায়। কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে প্রথম বর্ষে বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন এনে দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু তারা এখনো রেজিস্ট্রেশন এনে দিতে পারেনি। শুধু তাই নয় কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজের সব শিক্ষা ব্যবস্থা সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা থেকেও আমাদের বঞ্চিত করেছে। আমাদের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার বিষয়গুলো সমাধানের দাবি জানানোর পরেও তারা আমাদের বিভিন্ন অজুহাত এবং অনেক সময় হুমকি দিয়ে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করে।
শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, আমরা স্বাস্থ্য শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ছি এবং চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষার পর আমরা কিভাবে ইন্টার্নশিপ করবো তা আমাদের বোধগম্য নয়। বর্তমান পরিস্থিতে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই মেডিকেল কলেজে থেকে স্বাস্থ্য শিক্ষা সম্পর্কিত পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন আদৌ সম্ভব নয় বিধায় আমাদের সকল শিক্ষার্থীদের অন্যত্র মাইগ্রেশনের ব্যবস্থা করার অনুরোধ কামনা করছি।
শিক্ষার্থীরা বলেন, কলেজের বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন নেই। মেডিকেল কলেজে ভর্তির ২ মাস পর থেকে কলেজ অথোরিটিকে বার বার রেজিস্ট্রেশনের জন্য বলা হলেও তারা সনানা অজুহাত, এমনকি হুমকি দিয়ে আমাদের বিগত ৩ বছর যাবৎ দমিয়ে রেখেছে। প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। অ্যানাটমি ডিপার্টমেন্টে শুধুমাত্র একজন প্রফেসর আছে, কোনো লেকচারার নেই। ফিজিওলজি ডিপার্টমেন্টে শুধুমাত্র একজন প্রফেসর আছে, কোনো লেকচারার নেই। বায়োকেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে শুধুমাত্র একজন লেকচারার আছে, কোনো প্রফেসর নেই। কমিউনিটি মেডিসিন এবং ফরেনসিক মেডিসিন ডিপার্টমেন্টে কোনো প্রফেসর এবং লেকচারার নেই। শুধুমাত্র পরীক্ষার দিনগুলোতে প্রফেসরদের ভাড়া করে নিয়ে আসা হয় বলেও অভিযোগ ছাত্রদের।
ছাত্রদের অভিযোগ, প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি এবং ফার্মাকোলজি ডিপার্টমেন্টে কোনো স্থায়ী শিক্ষক নেই। অস্থায়ী শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করানো হয় এবং এসব শিক্ষকদেরকেও ঠিকমত বেতন না দেওয়ায় তারা কিছুদিন পরপর চাকরি ছেড়ে চলে যায়। হাসপাতালের ইনডোবে কোনো রোগী থাকে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা পরিদর্শনে আসার আগে ১ দিনের জন্য ভাড়া করে লোকজন এনে ওয়ার্ডগুলোতে ভর্তি রোগী হিসেবে সাজানো হয়। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের টাকা বিনিময়ে রোগী সাজার লোভও দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা পরিদর্শনে আসার পূর্বে ১ দিনের জন্য নার্স ভাড়া করে আনা হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হাসপাতালে নামে মাত্র একটি ল্যাব (প্যাথলজি) আছে। যেখানে মাত্র এক জন ল্যাব টেকনিশিয়ান আছে এবং বাকি কাজ ওয়ার্ড-বয়দের দিয়েই করানো হয়। কলেজ ভবনে প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি এবং ফার্মাকোলজি ল্যাব নেই।
শিক্ষার্থীরা বলেন, কলেজে ক্লাসের পরিবেশ নেই। কর্তৃপক্ষ প্রতারণ করে আমাদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। এখন আমরা ডাক্তার হতে পারবো কিনা তা নিয়ে শঙ্কায়। আমরা মাইগ্রেশন চাই। অন্য মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস কোর্স শেষ করতে চাই। এজন্য আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মাইগ্রেশনের দাবি নিয়ে আগামীকাল রোববার মহাখালীতে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে মানববন্ধন করবো।
সব জেনে শুনে কেন এই মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলে জানতে চাইলে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। সরকারি মেডিকেলে চান্স না ও নাইটিংগেল কর্তৃপক্ষের প্রলোভনে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু সে স্বপ্ন আজ শেষ হতে চলেছে। এখন মাইগ্রেশনের দাবি জানানোয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ আমাদের হুমকি দিচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ডা. দীপক স্যানেল দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। অধ্যক্ষ বলেন, এটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।