তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৮ এপ্রিল রাতে ও ১৯ এপ্রিল নিউমার্কেটের দোকান-মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। এতে নাহিদ ও মোরসালিন নামে দুজন মারা যায়।
সংঘর্ষের সময় ডেলিভারিম্যান নাহিদকে রড দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করেছিল ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান সিয়াম। এরপর নাহিদকে অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে ইমন। দু’জনের মধ্যে সিয়াম ধরা পড়লেও ইমন এখনো পলাতক।
ঘটনার পর আশপাশের এলাকার বিভিন্ন সিসি ফুটেজের সূত্র ধরে এমন তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
প্রায় দুই সপ্তাহ আগের ওই সংঘর্ষের ঘটনায় আরও তিনজন র্যাবের হাতে ধরা পড়লে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর জন্য সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয় এলিট ফোর্সটির পক্ষ থেকে।
বৃহস্পতিবার (৫ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন গ্রেফতারদের সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কক্সবাজার ও শরীয়তপুরে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। তারা হলেন- মোয়াজ্জেম হোসেন সজিব (২৩), মেহেদি হাসান বাপ্পী (২১) ও মাহমুদুল হাসান সিয়াম (২১)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেদিনের সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডে তাদের প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতার বাপ্পী ও সজীব নিউমার্কেটের ওয়েলকাম ফাস্টফুডের কর্মচারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, রাজধানীর নিউমার্কেটের ক্যাপিটাল ফাস্ট ফুড এবং ওয়েলকাম ফাস্টফুডের কর্মচারীদের মধ্যে ইফতারের চেয়ার পাতানোকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরে তারা প্রতিপক্ষকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য বাহির থেকে ছেলে ডেকে নিয়ে আসে। পরে একটি স্বার্থান্বেষী মহল মারামারির বিষয়টাকে ভিন্নখাতে নিতে গুজব ছড়ায়। ফলে নিউমার্কেট এলাকায় ছাত্র ও কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ঘটনার রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলে দফায় দফায় সংঘর্ষ। সেহরির সময় কিছুটা থামলেও পরবর্তীতে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়।
সংঘর্ষের পর বাপ্পী ও সজীব কক্সবাজারে আত্মগোপন করে এবং তারা নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে চুল ছোট করে কক্সবাজার আবাসিক হোটেলে চাকরি নেওয়ার চেষ্টা চালায়।
সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্রেফতার সিয়াম সংঘর্ষের এক পর্যায়ে নাহিদকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। আহত অবস্থায় নাহিদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেদিনই রাত ৯টার দিকে নাহিদ মারা যায়। এরপর গ্রেফতার এড়াতেই সিয়াম আত্মগোপনে চলে যায়।
নাহিদের মৃত্যুর বিষয়টি তুলে ধরে র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, ‘মারা যাওয়া ডেলিভারিম্যান নাহিদ প্রথমে বিভিন্নজনের ইটের আঘাতে আহত হয়ে পড়ে যান। সিসি ফুটেজে দেখা যায় নাহিদ প্রাথমিকভাবে ইটের আঘাতে মাটিতে পড়ে যায়। ওই সময় দুপুর দেড়টা। পরবর্তীতে পাশে থাকা সিয়াম রড দিয়ে নাহিদকে বেধড়ক পেটায়। এরপর চলে আসে ইমন। সে এসে নাহিদকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে চলে যায়।’প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম র্যাবকে জানিয়েছে, ‘আবেগে বশীভূত হয়ে এবং বিভিন্নজনের ইন্ধন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারে তিনি এমনটা করেছেন। সজীব ও বাপ্পী হিরো হতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে প্রতিপক্ষকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ায় জন্য কৌশল নিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে মারামারি ও সংঘর্ষে রূপ নেয়।
গ্রেফতার সিয়াম ঢাকা কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সিয়াম হলে থাকতেন না। বহিরাগত ছাত্র হিসেবে ঘটনার দিন মারামারিতে অংশ নিয়েছিলেন।