একটি মামলায় রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘সংবিধানের অধীন আইনসভা তার নিজস্ব পরিধিতে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। কখন, কোন বিষয়ে আইন প্রণীত হবে তা একান্তই আইনসভার বিবেচ্য বিষয়।’ রায়ে আরও বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনোভাবে আইনসভা বা নির্বাহী বিভাগের সাংবিধানিকভাবে নির্ধারিত কর্মক্ষেত্রের এখতিয়ারে অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।’
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
রায়টি লিখেছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তাতে একমত পোষণ করেছেন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতি। লিখিত এ রায় ‘আমার ভাষা’সফটওয়্যারের মাধ্যমে ইংরেজি থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সংবিধানের ১০২নং অনুচ্ছেদের অধীন এখতিয়ার প্রয়োগের মাধ্যমে হাইকোর্ট বিভাগ আইনসভাকে নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের নির্দেশ দিতে পারে না। গতকাল রোববার (৯ মে) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ রায়টি প্রকাশ করা হয়।
রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এ মামলায় একমাত্র প্রশ্ন হলো বীর মুক্তিযোদ্ধারা যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের বয়স ৬১ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত চাকরিতে থাকার অধিকার রাখেন কি না? কিংবা বয়সসীমা বাড়ানোর জন্য হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদানে আইনগতভাবে কর্তৃত্বসম্পন্ন কি না?’
এ সম্পর্কে রায়ে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের সরকারি কর্মচারীদের অবসরগ্রহণের বয়স ৫৭ বছর পর্যন্ত। এরপর আইন সংশোধন করে প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে কর্মরত মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরগ্রহণের বয়স ৫৯ বছর করা হয়। যখন সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের মাধ্যমে সব সরকারি কর্মচারীর অবসরগ্রহণের বয়সসীমা ৫৯ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হলো, তখন চাকরিতে কর্মরত মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরগ্রহণের বয়স ৬০ বছর পর্যন্ত করা হয়।’
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
‘আইনসভা প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে সেবা দেয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ৬১ বছর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করেনি। এ মামলায় হাইকোর্ট তার রায়ে রিট আবেদনকারীদের অবসরগ্রহণের বয়স ৬১ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য বিবাদীদের নির্দেশ দেন। এ জাতীয় অবসরগ্রহণের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়টি কেবলমাত্র আইনসভা দ্বারা সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করে করা যেতে পারে।’
আপিল বিভাগের রায়ে আরও বলা হয়, ‘প্রকৃতপক্ষে হাইকোর্ট পরোক্ষভাবে আইনসভাকে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছেন। হাইকোর্ট এমন কোনো কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারে না, যা দ্বারা সরকারি কর্মচারীদের অবসরগ্রহণের বয়স বৃদ্ধি করা যায়।’
রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, ‘আইনসভার ক্ষমতাকে নিজের ক্ষমতারূপে গ্রহণ করে তা দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্বপালনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরগ্রহণের বয়সসীমা বাড়িয়ে হাইকোর্ট তার এখতিয়ার অতিক্রম করেছে।’