নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে দেশের দুই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (সিবিআইইউ) শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর গত স্প্রিং সেমিস্টার থেকে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সাতটি প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। যদিও মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শিক্ষার্থী ভর্তি নিচ্ছে বেসরকারি এ দুই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রোববার (১০ অক্টোবর) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাইফ সুজন।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সম্প্রতি ইউজিসির মাধ্যমে সিবিআইইউ কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশনা সংবলিত একটি চিঠি পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির সার্বিক শিক্ষার মান বিবেচনায় এক বছর নতুন ছাত্র ভর্তি সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে বলা হয়। এ সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি, যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগসহ উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সার্বিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে বলা হয়। যদিও মন্ত্রণালয়ের সেই সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে আগের মতোই ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার জেলার একমাত্র এ বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল যোগাযোগ করা হলে ভর্তি কার্যক্রম চলমান থাকার কথা জানান সেখানকার একজন কর্মকর্তা।
পাশাপাশি শিক্ষার্থী ভর্তির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদনও করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক বলেন, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার জন্য একটি চিঠি দেয়া হয়েছিল। তবে সম্প্রতি তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার স্বার্থে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার জন্য একটি আবেদন করেছে, যা বর্তমানে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
এর আগে আইন লঙ্ঘন করে কার্যক্রম পরিচালনা করায় গত জানুয়ারিতে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির সাতটি প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেয় ইউজিসি। তদারক সংস্থার দেয়া ওই নিষেধাজ্ঞা এখনো বলবৎ। যদিও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শিক্ষার্থী ভর্তি করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে। এশিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেয়া প্রোগ্রামগুলো হলো বিএ (অনার্স) ইন বাংলা, এমএ ইন বাংলা, এমএসএস ইন ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট, বিএ (অনার্স) ইন ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড সিভিলাইজেশন, এমএ ইন ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড সিভিলাইজেশন, বিএড ও এমএড। বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রারকে চিঠি দিয়ে পাঁচটি বিভাগের এ সাতটি প্রোগ্রামে স্প্রিং সেমিস্টার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে বলে ইউজিসি। ন্যূনতম যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষক না থাকার কারণেই এসব প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করা হয়।
ইউজিসির তথ্যমতে, এশিয়ান ইউনিভার্সিটির বিএড ও এমএড প্রোগ্রামে প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এসব শিক্ষার্থীর পাঠদানে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন। বিএড ও এমএড প্রোগ্রামে শিক্ষকতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। যদিও একমাত্র শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। একইভাবে বাংলা ও ইংরেজি বিভাগের প্রতিটিতে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন করে। ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগেও শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন। যদিও ইউজিসির নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি প্রোগ্রামে কমপক্ষে চারজন স্থায়ী শিক্ষক থাকতে হবে। এর মধ্যে একজন কমপক্ষে সহযোগী অধ্যাপক পদমর্যাদার।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড সিভিলাইজেশনে শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন বিভাগের একজন শিক্ষক। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির ভর্তি অফিসে যোগাযোগ করলেও নিষেধাজ্ঞা চলমান প্রোগ্রামগুলোতে ভর্তি হওয়ার সুযোগের কথা নিশ্চিত করেন সেখানকার কর্মকর্তারা।
কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি এড়াতে শিক্ষার্থী ভর্তি ফরমে নিষেধাজ্ঞার চিঠি জারি হওয়ার আগের তারিখ উল্লেখ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর থেকে কোনো শিক্ষার্থীকে ফিরিয়ে দেয়া হয়নি। সবাই ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। আসলে এখানে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে আয় বাড়ানোই মুখ্য উদ্দেশ্য। শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে কোনো ক্ষেত্রেই এখানে আইন-কানুন অনুসরণ করা হয় না।
বিভিন্ন অনিয়মের কারণে সম্প্রতি এশিয়ান ইউনিভার্সিটিকে লাল তারকায় চিহ্নিত করেছে ইউজিসি। প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে ইউজিসির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, কমিশনের অনুমোদন ছাড়াই এমবিএ এক্সিকিউটিভ ও এমবিএ ইভনিং প্রোগ্রাম দুটি পরিচালনা করছে, দীর্ঘ নয় বছরের বেশি সময় ধরে আচার্য কর্তৃক নিযুক্ত কোনো কর্তৃপক্ষ নেই ও এমবিএ প্রোগ্রামে নির্ধারিত আসন সংখ্যার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে সব প্রোগ্রাম ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটিকে কয়েকটি প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে বলা হয়। এক্ষেত্রে তাদের শিক্ষার পরিবেশসহ বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা ও ব্যবস্থার মানোন্নয়ন করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এখন যদি তারা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়, সেটি কোনোভাবেই সমীচীন নয়। আর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরও এ বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভর্তি হওয়া এসব শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে সনদ নিয়ে কোনো জটিলতায় পড়লে কমিশন এর দায় নেবে না। এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি গণবিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে ইউজিসি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে বলেও জানান তিনি।