ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারকচক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। চক্রটি সেনাবাহিনী ও নেসকোতে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করেছে। অভিযানে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৪টি ল্যাপটপ, ১টি ডেস্কটপ, ৯টি মোবাইল ফোন সেট, ১৬টি ভুয়া নিয়োগপত্রসহ অন্যান্য মালামাল উদ্ধার হয়েছে।
পৃথক অভিযানের মধ্যে পুলিশ মোহসিইউ জামান অমি (৩০), রিদুয়ান ইসলাম (২১), আনোয়ার হোসেন (২৫), রাব্বি হাসান (২৮), আরাফাত হোসেন শুভ (২২) নামের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। আর র্যাব অভিযান চালিয়ে শফিকুল ইসলাম বাবুল (৫০), আনোয়ার হোসেন ওরফে সাবের আলী (৫০) নামের দুইজন গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতরা নর্দান ইলেকট্রিসিটি অ্যান্ড সাপ্লাই লিমিটেডে (নেসকো) বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নামে টাকার বিনিময়ে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়েছে। ঢাকা মহানগরীর মুগদা থানার উত্তর মুগদাপাড়ার মো. রইচ উদ্দিন মুন্সির ছেলে মোক্তাল হোসেন মোতালেবর (৫৩) এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি মামলা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাহাবুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) বেলা আড়াইটায় নগরীর উপশহর এলাকা অভিযান চালিয়ে মোহসিইউ জামান অমিকে (৩০) গ্রেফতার করে। অমির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজপাড়ার তেরখাদিয়া পশ্চিমপাড়া এলাকা থেকে অন্যদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় আসামীদের অফিস থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৪টি ল্যাপটপ, ১টি ডেস্কটপ, ১টি প্রিন্টার, নেসকো লিমিটেড এর বিভিন্ন পদে চাকরির ১৬টি ভুয়া নিয়োগপত্র, ২৪টি স্ট্যাম্প, নেসকো কোম্পানির লোগো সংবলিত ব্যানার ১টি, ভোটার আইডি কার্ড ২০ টি, মোবাইল ফোন সেট ৯টি, ১টি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারদের আসামীরা পুলিশকে জানিয়েছে, মোহসিইউ জামান অমি নিজেকে নেসকো লিমিটেডের সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভুয়া নিয়োগপত্র চাকরি প্রত্যাশীদের দিয়ে টাকা নিতো। গ্রেফতারকৃত রিদুয়ান ইসলাম কম্পিউটার প্রশিক্ষক ও নিয়োগপত্র তৈরির কাজগুলো করতো এবং অন্য আসামিরা প্রতারণার কাজে সহায়তা করতো। আসামিরা ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে সাধারণ জনগণকে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করেছে।
অন্যদিকে একই অভিযোগে র্যাবের সদস্যরা তানোরে অভিযান চালিয়ে শফিকুল ইসলাম বাবুল ও আনোয়ার হোসেন ওরফে সাবের আলীকে গ্রেফতার করে।
র্যাব জানায়, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাবুলের এলাকার রঞ্জু, আলমগীর ও মেহেদী হাসানের কাছ থেকে সেনাবাহিনীর বেসামরিক বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে সাড়ে ৭ লাখ, ৮ লাখ এবং ৭ লাখ টাকা চান। চক্রটি নিশ্চয়তা দিয়েছিল, চাকরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পাওয়ার পরেই টাকা নিবে তারা।
এ নিয়ে প্রতারক সাবের আলীর বাসায় আবদেনকারীদের একটি লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। একই মাসে ঢাকার উত্তরাতে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে। ফলাফলে শারীরিক যোগ্যতা ঠিক আছে বলে রাজশাহীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাদের। প্রতারকরা আবদেনকারীদেরকে আশ্বস্ত করে ১৫ দিনের ভেতরে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটার চলে আসবে। একই বছরের দুই ফেব্রুয়ারি অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার এসেছে বলে আবদেনকারী বাবুল, রঞ্জু ও শহিদুলকে সাবেরের বাসায় গিয়ে শুধু রঞ্জুকে ভুয়া অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারের অংশবিশেষ দেখানো হয়।
এ নিয়ে শনিবার (২০ নভেম্বর) সকালে র্যাব-৫, রাজশাহীর সিপিএসসি মোল্লাপাড়া ক্যাম্পের মেজর মো. নাজমুস শাকিবের নেতৃত্বে তানোরের ভালুকা কান্দর গ্রামে অভিযান চালিয়ে আনোয়ার হোসেন ও শফিকুল ইসলামকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে, বিভিন্ন ব্যক্তির থেকে টাকার বিনিময়ে সেনাবাহিনীর চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা ও সেনাবাহিনীতে সিভিল চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।