নিয়োগে অনাগ্রহী শীর্ষ কর্মকর্তারা : সরকারি চাকরিতে বয়স ছাড়ের সুফল নিয়ে শঙ্কা - দৈনিকশিক্ষা

নিয়োগে অনাগ্রহী শীর্ষ কর্মকর্তারা : সরকারি চাকরিতে বয়স ছাড়ের সুফল নিয়ে শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তাদের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থায় শূন্যপদ দ্রুত পূরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি বেকারদের মধ্যে আশার সঞ্চার করলেও বাস্তবে এর বাস্তবান নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ এর আগেও বিভিন্ন সময় নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে নিয়োগে গতি আনতে বলা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। তাই প্রতি বছর সাড়ে তিন থেকে চার লাখ পদ শূন্য থাকছে। গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান এটাই বলছে। অনেকের মতে, নিয়োগ কার্যক্রমে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলোর নীতিনির্ধারকদের সদিচ্ছার অভাবেই এ অবস্থার তৈরি হয়েছে। তাই সরকারি চাকরিতে ২১ মাসের বয়স ছাড় চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য কতটা উপকার বয়ে আনবে তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে নতুন নতুন দপ্তর-সংস্থা হচ্ছে। কিন্তু শূন্য পদ পূরণ হচ্ছে না। জনপ্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে, ৩১ ডিসেম্বর সরকার ঘোষিত বয়স ছাড়ের সুযোগ পাবে না চাকরি প্রত্যাশীরা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে সাধারণ প্রশাসনে সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। এ মন্ত্রণালয় থেকে প্রতি বছর ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসারর্স অ্যান্ড স্টাফস’ শীর্ষক মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরভিত্তিক পরিসংখ্যান বের হয়। গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, সাধারণ প্রশাসনে সরকারি কর্মচারীর শূন্য পদের সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৮১ হাজার। করোনার কারণে এবার শূন্য পদের সংখ্যা বেড়েছে। আর প্রতি বছর গড়ে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ পদ শূন্য থাকে। বর্তমানে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদ পূরণের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা নেই। চাকরি প্রার্থীরা মনে করছেন, শূন্যপদ পূরণের ক্ষেত্রে যদি সময়ের বাধ্যবাধকতা না থাকে তাহলে জনপ্রশাসন থেকে নির্দেশ দিয়েও বড় কোনো লাভ হবে না।

সরকারি চাকরির বয়স ৩২ বছর করার আন্দোলনে যুক্ত আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে ঢোকার পর সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর অবসরের তারিখ নির্ধারিত হয়ে যায়। তাই প্রত্যেকটি দপ্তরই কোনো বছর তাদের কতজন কর্মচারী অবসরে যাবেন তা সহজেই জানেন। সদিচ্ছা থাকলে অবসরে যাওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট বছরের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও পরীক্ষার কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগ থেকে পাশ করা ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘যারা সরকারি চাকরির বড় পদে ঢুকে যান তাদের বেশিরভাগই অন্যদের কথা ভাবেন না।’

সরকারি শূন্য পদ পূরণের ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসাবে উচ্চপদস্থদের সদিচ্ছার অভাবকে দায়ী করেন অনেকে। তাদের মতে, সরকারি নিয়োগে মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে সচিবরা নিজেদের লোক নেওয়ার প্রতিযোগিতা করেন। এ কারণে দপ্তর-সংস্থার প্রধানরা সহজে নিয়োগ কার্যক্রমে হাত দিতে চান। এছাড়া মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সচিব ও ডিজিরা চাকরির শেষ সময়ে এসে নিয়োগের কার্যক্রমে হাত দিতে চান না। নিয়োগসংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে অবসরে গিয়েও ঝামেলায় পড়তে হয়। জনপ্রশাসনের একটি দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, অর্ধেকের বেশি পদ খালি পড়ে আছে, নিয়োগ দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেই। কারণ নিয়োগে দুর্নীতি করলেও সমস্যা, স্বচ্ছতা আনলেও সমস্যা। একটি দপ্তরে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ দিয়ে ঊর্ধ্বতনদের বিরাগভাজন হয়ে পদ হারানোর নজিরও আছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, ঝামেলার কারণে অনেকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হাত দিতে চান না, এটা ঠিক। তবে নিয়োগ নিশ্চিতে বাধ্যতামূলক পদক্ষেপ নিতে গেলে সবকিছু ডিজিটাল মাধ্যমে হতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে ম্যানুয়ালি এসব কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় বিষয়টা বাধ্যতামূলক করা কঠিন হবে।

করোনার কারণে সরকারি নিয়োগ বন্ধ থাকায় ২১ মাসের বয়স ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। অর্থাৎ যাদের বয়স ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তারিখে ৩০ বছর পার হয়ে গেছে তারা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিসিএস ছাড়া প্রকাশিতব্য সব চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারবেন। এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে ২ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তাদের আওতাধীন সব দপ্তর-সংস্থায় দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সরকার ঘোষিত ২১ মাসের বয়স ছাড়ের বিষয়টি উল্লেখ করে ডিসেম্বরের মধ্যে দ্রুত সরকারি শূন্য পদ পূরণের করতে হবে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, শূন্য পদের সবই যে পুরোনো তা কিন্তু নয়, নতুন অনেক পদও সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন যেহেতু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তাই সব দপ্তর গুরুত্ব দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবে।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0069320201873779