নীল রক্তের রাজ কাঁকড়ার মৃত্যু ভাবাচ্ছে গবেষকদের - দৈনিকশিক্ষা

নীল রক্তের রাজ কাঁকড়ার মৃত্যু ভাবাচ্ছে গবেষকদের

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি |

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের সমাগম নেই। সৈকতে নেই কোন হৈ-হুল্লোর। তাই বালুর আল্পনা ফুটে উঠেছে গোটা সৈকত জুড়ে। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত শূন্য সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে লাল কাঁকড়া ও ছোট কাকড়ার দল। মূল সৈকতে যখন প্রাণ প্রকৃতি হাসছে আপন মনে, বিপরীত চিত্র কুয়াকাটার পশ্চিম সৈকতে। সেখানে মরে পড়ে আছে বিলুপ্ত প্রজাতির রাজ কাঁকড়ার দেহাবশেষ।

রাজ কাঁকড়া কয়েক হাজার বছর ধরে সমুদ্রে টিকে আছে অবিকৃত চেহারায়। বর্তমানে চিকিৎসাশাস্ত্রে এ রাজ কাকড়ার নীল রক্তের চাহিদা যখন বাড়ছে তখন হঠাৎ সমুদ্রে মারা যাচ্ছে এ প্রজাতির কাকড়া। একইভাবে সাগরে মৎস্য সম্পদ ধরার সঠিক নিয়ম না থাকায় অবাধে ধরা হচ্ছে ছোট-বড় হাঙ্গর। প্রায়ই কুয়াকাটায় ভেসে আসছে মরা ডলফিন, তিমি ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কচ্ছপ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতিতে ও সমুদ্র সম্পদে ক্রমশ বিরুপ প্রভাব পড়ায় চিন্তিত হয়ে পড়ছেন গবেষকরা। 

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গত কয়েক বছরে একাধিক ডলফিন, কচ্ছপ ও তিমি মরে ভেসে এসেছে। সাগরে মারা যাওয়া এ প্রাণীগুলো সৈকতে ভেসে এসেছে প্রায় পঁচন ধরা শরীর নিয়ে। একইভাবে জীবিত অনেক কচ্ছপকে সাগরে অবমুক্ত করেছে স্থানীয় যুবকরা। তবে এসব ডলফিন, কচ্ছপ ও তিমি মারা যাওয়ার সঠিক কারণ উদঘাটনে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি সরকারিভাবে। শুধু মৎস্য বিভাগ ও গবেষকদের একটি দল সরেজমিন পরিদর্শন করে মৃত ডলফিন, কচ্ছপ ও তিমি মাটি চাপা দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। 

সাম্প্রতিক সময়ে সাগরের জোয়ারে ভেসে এসেছে মৃত রাজ কাঁকড়ার দেহাবশেষ। কুয়াকাটা সৈকতের পশ্চিমে লেম্বরবন ও গঙ্গামতি সংলগ্ন সৈকতে প্রতিটি জোয়ারেই ভেসে আসছে এ মৃত রাজ কাঁকড়া। একইভাবে সমুদ্রে ইলিশের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর হাঙ্গর। প্রশাসনের অভিযানে কিছু হাঙ্গর আটক করা হলেও অধিকাংশ হাঙ্গর বিক্রি হয় বিভিন্ন শুটকি কারখানায়। এ হাঙ্গর ধরা পড়ে পড়ে প্রায় প্রতিদিনই।

কলাপাড়ার সাগড় উপকূলে ভেসে আসছে মৃত রাজ কাঁকড়ার দেহাবশেষ। ছবি : মিলন কর্মকার রাজু

রাজ কাঁকড়াগুলো দেখতে অনেকটা ঘোড়ার ক্ষুরের মতো। লিমুনাস গণের অন্তর্ভূক্ত এ প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম লিমুনাস পলিফিমাস। একে কাঁকড়া বলা হলেও এগুলো দেখতে অনেকটা মাকড়শার মতো। এরা অগভীর, নরম বালি ও কর্দমাক্ত সমুদ্র তলে বসবাস করে। ৯ থেকে ১২ বছর বয়সে এই প্রজাতির কাঁকড়া প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১৯ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। নিশাচর গোত্রের এ কাঁকড়া সমুদ্রের তলদেশে ছোট প্রাণী ও মাছ শিকার করে থাকে। স্থানীয় জেলেদের কাছে এই এটি ‘দৈত্য কাঁকড়া’ হিসেবেও পরিচিত। [insde-ad]

বাংলাদেশ মৎস্য গভেষণা ইনষ্টিটিউট খেপুপাড়া শাখার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক খান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এক সময় বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় লাল ও ধূষর কালো রঙের রাজ কাঁকড়া দেখা যেতো। এ কাঁকড়ার রক্ত নীল রঙের। মানুষের শরীরের রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে এবং মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি জীবানুমুক্ত করতে এই কাঁকড়ার নীল রক্ত অতুলনীয়। এছাড়া এর শরীরের পিছনে ছোট্র একটি লেজ রয়েছে। অনেকটা শাপলাপাতা মাছের লেজের মতো। এই লেজ দিয়ে তৈরি হয় ক্যান্সারের ঔষধ। তবে এই কাঁকড়া সমুদ্রে মারা যাওয়ায় কারণ কি সে প্রশ্ন ভাবিয়ে তুলছে। 

তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, সমুদ্রে হাঙ্গর, কাঁকড়া ডলফিন এভাবে মারা পড়লে সমুদ্রে সমুদ্রে খাদ্য শৃঙ্খলে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সাগরের তলদেশের পানি গরম হয়ে ওঠায় খাদ্যসংকটে হাঙ্গরের দল গভীর সমুদ্র থেকে উপরিভাগে উঠে আসায় কিছু হাঙ্গর ধরা পড়ছে। তবে সামুদ্রিক এ্ই মুল্যবান প্রাণী শিকার বন্ধে কঠোর আইন এবং একই সাথে সমুদ্রে ডলফিন, কচ্ছপ ও কাঁকড়া মারা যাওয়ায় বিষয়ে গবেষণা করা উচিত।

সাগরে মাছ শিকার করা জেলে ইব্রাহিম ও মোতালেব মিয়া দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, তারা সাগরে নিয়ম মেনেই মাছ শিকার করেন। কিন্তু কোন ধরনের সামুদ্রিক মাছ শিকার করা যাবেনা এই বিষয়টি তারা জানেন না। এমনকি মৎস্য বিভাগ থেকে শুধু জাটকা ও ইলিশ শিকার বন্ধে মাঝে মধ্যে অভিযান চালায়। তবে জেলেদের যদি সামুদ্রিক মূল্যবান মাছ শিকার করা যাবে না এ বিষয়টি ধারণা দিতেন তাহলে এভাবে হাঙ্গর, কচ্ছপ ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মৎস্য সম্পদ শিকার করতেন না।

আর ব্যবসায়ীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, জেলেদের কাছ থেকে মৎস্য আড়তে বিক্রির পর অবিক্রিত মাছ তারা ক্রয় করেন। এ মাছের মধ্যে হাঙ্গরসহ বিভিন্ন মাছ থাকে। হাঙ্গর শুটকি লাভজনক হওয়ায় তারা ছোট-বড় সবধরনের হাঙ্গর ক্রয় করেন। তবে হাঙ্গর শুটকির বিষয়ে তাদের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই বলে জানান।

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, হাঙ্গর শিকার বন্য আইনে অপরাধ। তবে রাজ কাঁকড়াসহ মূল্যবান সামুদ্রিক প্রাণী শিকার বন্ধে তারাও জেলেদের সচেতন করছেন। তবে সুক্ষ ফাঁসের জালে অনেক মাছ মারা পড়ছে যেগুলো বিক্রি করতে না পেরে জেলেরা সমুদ্র তীরে ফেলে যায়।

গবেষক ও মৎস্য কর্মকর্তাদের দাবি সমুদ্রের এ সম্পদ রক্ষায় সবার আগে সচেতন করা উচিত জেলেদের। একই সাথে মৎস্য সংরক্ষণ আইনটি কঠোর এবং সমুদ্র ও মৎস্য গবেষণায় আরও সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত।

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052609443664551