বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুপারিশ পেয়ে যোগদান করা পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব নতুন শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে আদেশ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রোববার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে এ আদেশ জারি করা হয়। কিন্তু এ আদেশ জারি পর তা নিয়ে ‘ধোঁয়াশা’ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব নতুন শিক্ষকরা।
জানা গেছে, রোববার এনটিআরসিএর মাধ্যমে সুপারিশ পেয়ে যোগদান করা পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর বিকেলে আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক-৩ শাখার উপসচিব সোনা মনি চাকমা স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, এনটিআরসিএর তৃতীয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে যারা উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেছিলেন এবং ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুনের আগে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ পেয়েছেন তাদের এমপিওপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বয়সসীমা প্রযোজ্য হবে না। এ আদেশ অন্য কোনো ক্ষেত্রে নজির হিসেবে গণ্য করা যাবে না। আদেশটি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব হয়েও শিক্ষক পদে সুপারিশ পেয়েছিলেন তাদের সবাই রিট মামলায় অংশগ্রহণ করেননি। কিন্তু আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এনটিআরসিএ রিট না করা প্রার্থীদের কাছ থেকেও আবেদন নিয়ে তাদের সুপারিশ করেছে। তাই রিট না করেও ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুনের আগে নিবন্ধন সনদ পাওয়া অনেকে এমপিওর অপেক্ষায় আছেন। মন্ত্রণালয়ের আদেশে ‘যারা উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেছিলেন’ বিষয়টি উল্লেখ থাকায় প্রার্থীরা বিভ্রান্তিতে পরেছেন। এমপিওর অপেক্ষায় থাকা ননরিটকারী একজন শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এ আদেশটি নিয়ে আমরা এখন দুশ্চিন্তায়। এ আদেশ কাদের জন্য কার্যকর হবে তা বুঝতে পারছিনা। কেউ কেউ বলছেন শুধু যারা রিট করেছেন তাদের জন্য এ আদেশ প্রযোজ্য। কেউ কেউ বলছেন যারা সুপারিশ পেয়েছেন সবার জন্য এ আদেশ প্রযোজ্য। জটিলতার সমাধান হলো না জটিলতা বাড়লো বুঝতে পারছি না।’
অপর একজন প্রার্থী দুপুরে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘দুপুরে উপসচিব সোনা মনি চাকমার হাত থেকে আমরা আদেশ পেয়েছি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন সবার জটিলতা সমাধান হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, যারা রিট করেছেন সঙ্গে যারা ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুনের আগে নিবন্ধিত হয়েছেন তাদের সবার ক্ষেত্রে বয়সশিথিলযোগ্য।’
এ আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে উপসচিব সোনা মনি চাকমা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘যারা রিট উচ্চ আদালতে রিট করেছিলেন এবং ২০১৮ খ্র্রিষ্টাব্দের ১২ জুনের আগে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ পাবেন তাদের জন্য এ আদেশ প্রযোজ্য হবে।’ এ আদেশের ব্যাখ্যা জানতে পরবর্তীতে যোগাযোগ করা হলেও উপসচিব সোনা মনি চাকমার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ আদেশের রিটকারী ও নন রিটকারী উভয় প্রার্থীদের জন্য প্রযোজ্য হবে কী-না জানতে দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফৌজিয়া জাফরীনের সঙ্গে। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। আমি শাখায় বলেছি বিষয়টি জানাতে। তারা জানালে এ বিষয়ে পরিষ্কার করে বলতে পারবো।’
এদিকে রোববার সকালে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব নতুন শিক্ষক যাদের এনটিআরসিএ সুপারিশ করেছে তাদের জটিলতা নিরসনের বিষয়ে মন্ত্রী মহোদয় খুবই পজেটিভ ছিলেন। সভায় রিটকারী বা কে ননরিটকারী এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। যারা এনটিআরসিএর মাধ্যমে সুপারিশ পেয়েছেন তাদের জটিলতা নিরসনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং তাদের জটিলতা নিরসনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
জানা গেছে, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুন জারি করা এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়স নির্ধারণ করা হয়। তারপর থেকে ৩৫ বছরের বেশি বয়সি প্রার্থীরা শিক্ষক পদে সুপারিশ পাচ্ছিলেন না। পরে তারা আইনি লড়াইয়ে নামেন। হাইকোর্ট তাদের বয়সশিথিলের পক্ষে রায় দিলে আপিল করে এনটিআরসিএ। সর্বশেষ আপিল বিভাগের একটি রায়ে বয়স নির্ধারণ করে ওই এমপিও নীতিমালা জারির আগে নিবন্ধন সনদ অর্জন করা প্রার্থীদের শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সশিথিল রাখার নির্দেশনা আসে। সে অনুযায়ী, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মার্চ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুনের আগে নিবন্ধন সনদ অর্জনকারীদের বয়স শিথিল করে আবেদন নেয়া হয়। তাদেরকে শিক্ষক পদে সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। যারা সুপারিশ পেয়েছেন মধ্যে রিটকারী ও ননরিটকারী প্রার্থীরা রয়েছেন।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।