পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - দৈনিকশিক্ষা

পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ

দৈনিক শিক্ষাডটকম, নীলফামারী |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, নীলফামারী : পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের নাটক সাজিয়েছেন নীলফামারীর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। 

ওই শিক্ষিকার নাম আয়শা সিদ্দিকা। স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে এক বছর আগে। কিন্তু স্বামী-সন্তান নিয়ে করছেন সুখের সংসার। আবার থাকেনও শ্বশুরবাড়িতেই। বাস্তবে বিবাহবিচ্ছেদ না হলেও এক বিদ্যালয় থেকে অন্য বিদ্যালয়ে বদলি হতে এমন অভিনব প্রতারণার পথ বেছে নিয়েছেন নীলফামারীর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। বিষয়টি জানাজানি হলে ইতোমধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে যোগদান না করাতে প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। 

 

বাবার বাড়ি নীলফামারী সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের খামাতপাড়ায়। তবে বিয়ের পর প্রায় ১০ বছর থেকে স্বামীর সঙ্গে বসবাস করছেন পাশের পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের জামতলা গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে। সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন কচুকাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ দোনদুরী কেরানীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সম্প্রতি বদলি কার্যক্রম শুরু হলে আবেদন করেন স্বামীর বাড়ির পাশে অবস্থিত পঞ্চপুকুর জামতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কয়েক দফা যাচাই-বাছাই শেষে অনুমোদন করা হয় তার আবেদনটি।

এ পর্যন্ত বিষয়টি একদমই স্বাভাবিক মনে হলেও বিপত্তি ঘটায় আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করা ডিভোর্স পেপার। যেখানে দেখা যায়, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের এক ফেব্রুয়ারি আয়শাকে ডিভোর্স দেন স্বামী আল-আমিন ইসলাম। যেখানে স্ত্রীকে চরিত্রহীনা হিসেবে উল্লেখ করে আয়শার সঙ্গে আর দাম্পত্য সম্পর্ক না রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তাদের সাজানো ডিভোর্সের নাটকটি নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। কানাকানি, বলাবলি ছাপিয়ে  শুরু হয় ফেসবুকে লেখালেখি। দাবি করা হয়, তাদের ডিভোর্সের বিষয়টি ভুয়া। বদলি হতে তৈরি করা হয়েছে জাল ডিভোর্স পেপার। শুরু হয় সমালোচনা।

এদিকে বিষয়টি নিশ্চিত হতে অভিযুক্ত শিক্ষিকা আয়শা সিদ্দিকার বর্তমান কর্মস্থল ও শ্বশুরবাড়ি এলাকায় গেলে তারা জানান, তিনি এখনো স্বামী-সন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকেন। এমনকি ডিভোর্সের বিষয়টি কেউ শোনেননি বলে জানান তারা। তাদের দাবি, স্বামী আল-আমিন প্রতিদিন স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাকে স্কুলে দিয়ে এবং নিয়ে আসেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘উনার স্বামী এসে স্কুলে দিয়ে যায় আবার নিয়ে যায়। স্কুল বন্ধ দেওয়ার দিনেও আসি গেল।’

আয়শা সিদ্দিকার খোঁজ নিতে তার বাবার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। আয়শা স্বামীর বাড়িতে থাকেন বলে জানান তার বড় ভাই তহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সে তার শ্বশুরবাড়িতেই থাকে। রামকলা স্কুলের ওখানে বাড়ি।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত শিক্ষিকা আয়শা সিদ্দিকার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে এ নিয়ে কথা বলতে ফোন করা হলে সংবাদকর্মীর ওপর খুব বিরক্ত হন স্বামী আল-আমিন। এমনকি বিষয়টি নিয়ে আর ফোন না দিতে বা মাথা না ঘামাতে অনুরোধ করেন তিনি।

আল-আমিন ইসলাম বলেন, এখানে বলার মতো কিছুই নেই। আপনারা যা শুনছেন, যা দেখছেন সবই ঠিক। এগুলো নিয়ে আপনারা মাথা ঘামাবেন না। আর এভাবে ফোন না করলেই ভালো। যারা অফিসিয়ালভাবে আদেশ দিয়েছে তারাই বুঝবে।

নিয়ম অনুযায়ী এসব বদলির ক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদনের পর সেগুলো সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষক ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা যাচাই-বাছাই করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেবেন অনুমোদনের জন্য। তবে এক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করা হয়নি বলে স্বীকার করেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

দক্ষিণ দোনদরী কেরানীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহাদুজ্জামান বলেন, আয়শা সিদ্দিকা তার স্বামীর সঙ্গেই থাকেন। আমিই অনুমোদন করেছি কিন্তু দেখার সুযোগ হয়নি। ওভাবেই অনুমোদন দিয়ে দিয়েছি।

আবেদনে উল্লিখিত কোনো তথ্য তদন্তে ভুয়া প্রমাণিত হলে বদলি বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানান শিক্ষা কর্মকর্তারা।

নীলফামারী সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জছিজুল আলম মন্ডল বলেন, আয়শা সিদ্দিকার বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি পাওয়া গেছে তা তদন্ত হবে। যদি ভুয়া প্রমাণিত হয় অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ বদলি বাতিল হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ.এম. শাহজাহান সিদ্দিক বলেন, নীলফামারী জেলায় ৩২ জন শিক্ষক অনলাইনে বদলি হয়েছেন। তার মধ্যে আয়শা সিদ্দিকা স্বামীপরিত্যক্তার মিথ্যা সার্টিফিকেট দাখিল করে বদলির আদেশ প্রাপ্ত হয়েছে এরকম একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি জানার পরপরই আমি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছি তিনি যেন সরেজমিনে তদন্ত করেন এবং ওই শিক্ষিকার কাছে লিখিত ব্যাখ্যা নেন। এরপর সমস্ত তথ্যাদি পর্যালোচনা করে আমরা মহাপরিচালক মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করবো।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004356861114502