পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তির আগেই বদলি চাই - দৈনিকশিক্ষা

পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তির আগেই বদলি চাই

মো. আবু তাহের মিয়া |

‘কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে কভূ আশীবিষে দংশেনি যারে’ কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের পঙ্ক্তি যথার্থ যেনো বেসরকারি শিক্ষকরা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারছেন। বেসরকারি শিক্ষকদের  বদলি চালু পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তির পূর্বে না হলে, পরে বদলি চালু হলেও দূর-দূরান্তের শিক্ষকরা আর বাড়ির পাশে ফিরতে পারবেন বলে মনে হয় না। তাই পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তির আগেই বদলি চালু হোক বেসরকারি এমপিওভু্ক্ত শিক্ষকদের। নয়তো অতিথি পাখির মতো সারা জীবন ঘুরে বেড়াতে হবে, আর ঘরে ফেরা হবে না। তাই জরুরি ভিত্তিতে বদলি গণবিজ্ঞপ্তি বা ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের আলাদা গণবিজ্ঞপ্তি হতে পারে সহজ সমাধানের পথ। 

তবে কী শিক্ষকতা পেশা অভিশাপ! বলছিলাম বেসরকারি এমপিওভূ্ক্ত শিক্ষকদের কথা। শাখের করাতের মতো দুদিকেই বিপদ। যারা বাড়ি থেকে ৭০০-৮০০ কিলোমিটার দূরে শিক্ষকতা পেশায় আছেন তারা বুঝতে পারছেন। দুনিয়াতে এতো পেশা থাকতে কেনো এ পেশায় নিয়োজিত আছেন। মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখতে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন, তা স্থগিত করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আমরা যারা শিক্ষকতা করি তখন বুঝলাম বদলি চালু কতো জরুরি। বাড়ির পাশে শিক্ষকতা করলে লম্বা ছুটি নিয়ে এতো ভাবতে হতো না। বেসরকারি শিক্ষকদের সময়োপযোগী প্রাসঙ্গিক দাবি শিক্ষকদের বদলি চালু করা।

বিদ্যালয় বন্ধ থাকলে কোনো শিক্ষকই খুশি হন না। বরং বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ বাস্তবায়নে বিদ্যালয়ের কর্মঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিপত্তি হয় তখনই যখন গত ১৩ ডিসেম্বর জারিকৃত সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষাবর্ষের ছুটির তালিকা ও শিক্ষাপঞ্জি আংশিক সংশোধন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বছরের শুরুতে যদি সিদ্ধান্ত হতো রমজানে খোলা থাকবে, তাহলে আর শিক্ষকরা মনোক্ষুণ্ন হতেন না। 

যাহোক বেসরকারি শিক্ষকদের শরীর যেনো শরীর নয় ‘শরীরের নাম মহাশয়, যা সওয়াবে তাই সয়’। গ্রীষ্মের ছুটি বাতিল হলো, শীতকালের ছুটি নতুন শিক্ষাক্রমের ট্রেনিং ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ট্রেনিং-এ বাতিল হলো, রমজানে ছুটি কমানো হলো। সব তড়িঘড়ি করে করা হয়। অথচ শিক্ষকদের দাবির বেলায় অনড়। কথায় আছে পেটে খেলে পিঠে সয়। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষকদের যেনো পেট নেই, সারাটা পিঠ। যারা বাড়ি যাবার জন্য বন্ধের অপেক্ষা করেন, তাদের জন্য বদলি চালু কতো জরুরি! বদলি চালু হলে বাড়ির পাশে যাওয়ার আক্ষেপ থাকবে না। বদলি চালু অতি জরুরি। এটা শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি। 

এতো এতো ছুটি বাতিল হলো। তবুও বেসরকারি শিক্ষকদের ধৈর্য ধরা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। ধৈর্য মানে শুধু বসে বসে অপেক্ষা করা নয়। ধৈর্য মানে ভবিষ্যৎকে দেখতে পাওয়া, ধৈর্য মানে কাঁটার দিকে তাকিয়েও গোলাপকে দেখা, রাতের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে দিনের আলোকে দেখা। মাঝে আশার আলো দেখেন শিক্ষকরা। গত বছরের ২২ অক্টোবর বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নিয়ে প্রথম কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর শিক্ষকদের বদলি নিয়ে দ্বিতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের আবেদনে সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বদলির জন্য নিয়োগ নীতিমালার ৭ নম্বর ধারা স্থগিতের পর থেকে বদলি নিয়ে শিক্ষকরা বিভিন্নভাবে তাদের দাবি জানিয়ে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা আলাদা গণবিজ্ঞপ্তি দাবি করছেন। বদলির নীতিমালা তৈরি করতে শিক্ষাসচিব ও অধিদপ্তর বরাবর স্মারকলিপি দিচ্ছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি চালু নিয়ে শিক্ষকরা মন্ত্রণালয়-এনটিআরসিএ মাউশি, অধিদপ্তর, সচিবালয় সব কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করছেন। বদলি বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের প্রধান, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী সবাইকে অবহিত করছেন। শিক্ষকদের জীবনে আনন্দ উৎসব নেই। পরিবার পরিজন থেকে শত-শত মাইক দূরে শিক্ষকতা করেন। আত্নীয়-স্বজন মারা গেলে খবরটাই শোনেন। দূর থেকে শুধু চোখের পানি ফেলেন। লাশটা দেখার সৌভাগ্য পর্যন্ত হয় না। মা-বাবার বৃদ্ধ বয়সে সন্তানরা পাশে থাকেন না। স্বামী-স্ত্রী কর্মস্থল আলাদা হওয়া একে অপরকে রেখে দূরে থাকছেন। অন্যের ছেলে-মেয়েদের মানুষ করছেন, নিজের ছেলে-মেয়ের খবর কে রাখছেন। 

এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের প্রধানদের সুদৃষ্টি কামনা করছি। আপনাদের প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতা বদলি চালু বা ইনডেক্সধারীদের আলাদা গণবিজ্ঞপ্তি সময়ের ব্যাপার মাত্র।

ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানের শূন্য পদের তথ্য প্রেরণ করা হয়ে গেছে। সব ঠিক থাকলে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সকল শূন্য পদের তথ্য পৌঁছে যাবে। আমরা ইনডেক্সধারী শিক্ষকরা মনে করি ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের আলাদা গণবিজ্ঞপ্তি হতে পারে সহজ সমাধান। এতে প্রায় ১ লাখ শিক্ষক যারা যার বাড়ির কাছে চলে যেতে পারবেন। কোনো পদ কমবে না। আর যদি পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তির পূর্বে আলাদা গণবিজ্ঞপ্তি না দেয়া হয় বা বদলি চালু না হয় তবে বদলি চালু হলে বাড়ির পাশে যাওয়ার মতো তেমন কোনো শূন্যপদ থাকবে না। তাই বদলি গণবিজ্ঞপ্তি বা আলাদা গণবিজ্ঞপ্তি সব ইনডেক্সধারীদের প্রাণের দাবি।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, তাড়ল উচ্চ বিদ্যালয়, দিরাই, সুনামগঞ্জ

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031898021697998