পঞ্চাশ বছরে উচ্চশিক্ষা - দৈনিকশিক্ষা

পঞ্চাশ বছরে উচ্চশিক্ষা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

‘স্বাধীনতা’ শব্দটি আমাদের হয়েছে ৫০ বছর হলো। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে এদেশের মানুষ অনুভব করেছিল স্বাধীনতা অর্জনের। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের প্রিয় ভূমি বাংলাদেশ। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তানে গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যা ছিল ৪১ হাজার আর পশ্চিমে ছিল ৪৫ হাজার। কিন্তু ১০ বছর পর ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তানে গ্র্যাজুয়েট তৈরি হয় ২৮ হাজার, যেখানে পশ্চিমে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৪ হাজারে। অর্থাত্, উচ্চশিক্ষা শেষ করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেখানে পূর্ব পাকিস্তানে ঐ ১০ বছরে ৩২ শতাংশ কমে গিয়েছিল, পশ্চিমে বেড়েছিল ২১ শতাংশ।সোমবার (২০ এপ্রিল) ইত্তেফাত পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে  আরও জানা যায়, স্বাধীনতার সময় দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ, যা বর্তমানে ৭৪ দশমিক ৭ শতাংশে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে ফিরে আসার পর থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে থাকেন এবং দেশের প্রতিটি সেক্টরের জন্য উন্নয়নের নতুন নীতিমালা তৈরি করেন। বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সংখ্যা বৃদ্ধি, ছাত্রানুপাতে শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়।

পাশাপাশি সব তরুণ-তরুণীর জন্য উচ্চশিক্ষা গ্রহণ আবশ্যিক নয় সে বিষয়টি প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়। শিক্ষার মাধ্যম যেন প্রায়োগিক হয়, সে বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রতিটি শিক্ষিত তরুণ-তরুণী শিক্ষাজীবন শেষ করে যেন দেশের সেবায় নিয়োজিত হতে পারে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। এক্ষেত্রে শুধু চাকরির পরিবর্তে, যে বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণ করেছেন, শিক্ষার্থীরা যেন সেই বিষয়ে কাজ পায়, এ ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়। এজন্য শুধু তাত্ত্বিক বিষয়ের ওপর জোর না দিয়ে হাতে-কলমে শিক্ষার বিষয়টিকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ৩০০ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে বৃত্তি দিয়ে বিদেশে গবেষণায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। তত্কালীন সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এটি ছিল অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ। বাংলাদেশে পরবর্তীকালে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তা প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ধারাবাহিকতা। এমনকি আমরা এখন মানসম্পন্ন যে শিক্ষার কথা বলছি, প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সে বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া হয়। এটি অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী বিষয় যে, বঙ্গবন্ধু ঐ সময়েই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্রবিজ্ঞান ও আবহাওয়া ইনস্টিটিউট এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস) প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। নতুন দেশের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়াবলির ওপর গবেষণার জন্য আইবিএস প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, যেটি গবেষণার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে।

১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রণীত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর ভাবনার যে প্রতিফলন ঘটে, তারই আলোকে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা হাতে নেন। এখানে একটা লক্ষ করার বিষয় হলো, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়—এ ধারণা প্রকৃতপক্ষে একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তোলার উদ্যোগ। বৈশ্বিক আর্থ-রাজনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সংগতি রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজ্ঞান গবেষণাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ ও প্রধানমন্ত্রী বৃত্তি চালু করা হয়েছে ইতিমধ্যে। এসব ফেলোশিপ বা বৃত্তির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও বর্তমানে অত্যন্ত সম্মানজনক হারে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য বৃত্তি প্রদান করছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। Higher Education Quality Enhancement Project (HEQEP) নামীয় এই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন বিভাগ বা ডিসিপ্লিনের কারিকুলাম সময়োপযোগীকরণ, নতুন ল্যাবরেটরি স্থাপন, ল্যাবরেটরিতে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

পাশাপাশি উন্নত বিশ্বের শিক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে শিক্ষকদের যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি এরই মধ্যে সম্পাদিত হয়েছে, তা হলো Institutional Quality Assurance Cell (IQAC) প্রতিষ্ঠা। এ সেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থার মান বজায় রাখার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবে। এ প্রতিষ্ঠানের জনবলকাঠামো অনুমোদিত হয়ে এখন এটি রাজস্ব খাতের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে।

লেখক :মো. আশিকুর রহমান (সৈকত), শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038840770721436