লাল শাপলায় ভরপুর লেক। সেই লেকে কিছু পাখি ভেসে বেড়াচ্ছে, কিছু পাখি উড়ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধ ক্যাম্পাসের লেকগুলো এখন পরযায়ী পাখিদের দখলে। তাদের মাতামাতিতে বন্ধ ক্যাম্পাস যেন প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। সারা দিন পর সন্ধ্যা নামার পর পাখিরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে কোনো গাছের ডালে রাতের জন্য আবাস গড়ে। আবার ভোর হলেই তারা ফিরে আসে লেকগুলোতে। শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারও অতিথি পাখিদের কলতানে মুখর হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলো।
প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে হালকা শীতের আবহে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে তারা ছুটে আসে এখানে। মাঘ মাসের শেষ পর্যন্ত থাকে তাদের এই পদচারণা। উত্তরের শীতপ্রধান অঞ্চল সুদূর সাইবেরিয়া, চীন, নেপাল, জিনজিয়াং ও মঙ্গোলিয়া অঞ্চল থেকে আসে অসংখ্য প্রজাতির এসব পাখি। এর মধ্যে থাকে—সরালি, গার্গেনি, পিচার্ড, মানিকজোড়, মুরগ্যাধি, জলপিপি, নাকতা, কলাই, ফ্লাইপেচার, পাতারি, চিতা টুপি ও লাল গুরগুটিসহ নানা প্রজাতির পাখি।
তবে মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় আট মাস ধরে বন্ধ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ফলে ক্যাম্পাসে মানুষ ও যানবাহন চলাচল সীমিত থাকায় জাহাঙ্গীরনগর হয়ে উঠেছে বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য। এবার অতিথি পাখিদের সংখ্যাও অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি হবে বলে আশা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষকরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এরই মধ্যেই ক্যাম্পাসের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার, মনপুরা, সুইমিংপুল এলাকায় ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশের লেক আর ট্রান্সপোর্ট চত্বরের লেকে প্রচুর পাখি বিচরণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাধ্যমে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলোতে ১৯৮৬ সাল থেকে অতিথি পাখি আসছে। এখন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ২০৪ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে এই ক্যাম্পাসে। এগুলোর ১২৬টি দেশি ও ৭৮টি বিদেশি প্রজাতির। এদের মধ্যে এক ধরনের পাখি ডাঙায় বা গাছের ডালে বসে বিশ্রাম নেয়, আরেক ধরনের পাখি পানিতে থাকে এবং পানিতেই বিশ্রাম নেয়।
বিশ্ববিদ্যালয় এস্টেটের প্রধান উদ্যানতত্ত্ববিদ ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল আমিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতি বছর লেকগুলো অতিথি পাখির বাসযোগ্য রাখতে পদক্ষেপ নেয়। এবারও নিয়েছে। অন্যদিকে, পাখি বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে গত সেপ্টেম্বরের শেষার্ধে অতিথি পাখিরা এসে দুটি লেকে বসে। এরপর অক্টোবরের মাঝামাঝিতে অন্যান্য লেকে পাখিরা আসতে শুরু করে। এ পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বিভিন্ন লেকে সব মিলিয়ে ৪ হাজারের মতো অতিথি পাখি দেখা যাচ্ছে।