পরীক্ষার পূর্বশর্ত এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা - দৈনিকশিক্ষা

পরীক্ষার পূর্বশর্ত এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন |

আজ থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ২০২৩। শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম-এ প্রকাশিত তথ্যমতে, এবারের পরীক্ষায় মোট ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবেন। ১০ লাখ ২১ হাজার ১৯৭ জন ছাত্র ও ১০ লাখ ৫০ হাজার ৯৬৬ জন ছাত্রী মোট ১১টি শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেবেন। 

এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গত বছরের তুলনায় ৫০ হাজার ২৯৫ জন পরীক্ষার্থী বেড়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞানেই বেড়েছে ৩৭ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী। আর ছাত্রী বেড়েছে ৩৮ হাজার ৬০৯ জন। গতবার এসএসসি ও সমমানে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ২০ লাখ ২১ হাজার।

তথ্যমতে, নির্ধারিত দিনে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষা চলবে। প্রথমে বহুনির্বাচনী এবং পরে রচনামূলক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে পরীক্ষার্থীদের। বহুনির্বাচনী ও রচনামূলক বা সৃজনশীলে আলাদা আলাদাভাবে পাস করতে হবে। পরীক্ষার্থীরা সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবেন। কেন্দ্র সচিব ছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্য কেউ মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। কেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষার্থী ছাড়া ২০০ গজের মধ্যে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পরীক্ষা দিতে অতিরিক্ত সময় পাবেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা। 

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধকতা ও হাত না থাকা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা শ্রুতি লেখক সঙ্গে নিয়ে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ ধরনের পরীক্ষার্থীদের ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসিতে ভোগা পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় বৃদ্ধিসহ শিক্ষক, অভিভাবক, সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। 

৩০ এপ্রিল শুরু হয়ে ২৩ মে পর্যন্ত চলবে এসএসসির লিখিত পরীক্ষা। আর ২৪ থেকে ৩০ মের মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়া হবে। ৩০ এপ্রিল থেকে দাখিল পরীক্ষা শুরু হয়ে চলবে ২৫ মে পর্যন্ত। আর ২৭ মে থেকে ৩ জুনের মধ্যে দাখিলের ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়া হবে।  ৩০ এপ্রিল থেকে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালের লিখিত পরীক্ষা শুরু হয়ে চলবে ২৩ মে পর্যন্ত। ২৫ মে থেকে ৪ জুনের মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষা এবং ৫ জুন থেকে ১৫ জন পর্যন্ত বাস্তব প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। 

পাবলিক পরীক্ষায় বিভিন্ন কেন্দ্রে বিশেষ পদাধীকারী কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সন্তানকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অনেকেই ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে পাবলিক পরীক্ষা বিশেষ সুবিধা নেন। তবে এবার ক্ষমতার দাপটে এসএসসির হলে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, বিশেষ সুবিধা প্রাপ্য নন এমন কোনো শিক্ষার্থী বিশেষ সুবিধা পাবেন না। আমাদের ম্যানুয়ালে আছে এমন অসুস্থতার কারণে কোনো পরীক্ষার্থীর যদি বিশেষ সুবিধা পাওয়া সুযোগ না থাকে, তাহলে কোনো পদাধীকারী ব্যক্তির পুত্র বা কন্যা কোনোভাবেই সে সুবিধা পেতে পারেন না। অভিযোগ পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

৯টি সাধারণ ধারার শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৫ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৮৭০ জন। আর ছাত্রী ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪০৫ জন। মোট ১৭ হাজার ৭৮৬টি স্কুল থেকে এসব শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। তারা ২ হাজার ২৪৪টি কেন্দ্র থেকে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেবেন।

দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেবেন ২ লাখ ৯৫ হাজার ১২১ জন পরীক্ষার্থী। এদের মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৩ জন আর ছাত্রী ১ লাখ ৫১ হাজার ১২৮ জন। এবার ৯ হাজার ৮৫টি মাদরাসা থেকে পরীক্ষার্থীরা দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেবেন। মোট ৭১৬টি কেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। 

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৬৭ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ৯৭ হাজার ৩৩৪ জন আর ছাত্রী ৩০ হাজার ৪৩৩ জন। মোট ২ হাজার ৯২৭টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষার্থীরা এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেবেন। কেন্দ্র থাকবে ৮৫০টি। 

ছাত্রজীবনের সকল সুখকর মুহূর্ত গুলো একটি শব্দ শোনার পর বিষাদে রূপ নেয়, তারই নাম পরীক্ষা। অনেকের কাছে এটা এতটায় বিভীষিকাময় যে, পরীক্ষার নাম শুনলেই জ্বর চলে আসে। পরীক্ষার আবিষ্কারক কে নিয়ে চিন্তা করেননি এমন মানুষ খুব কমই আছেন। কমবেশি সকলেই আমরা আমাদের ছাত্রজীবনে প্রত্যেক পরীক্ষার আগে একবার হলেও সেই মানুষটিকে স্মরণ করি। কিন্তু এই পরীক্ষা কে আবিষ্কার করেন, সেটা জানার আগে আমাদের জানতে হবে কিভাবে এই পরীক্ষা পদ্ধতির সূত্রপাত হয়েছে।  

পরীক্ষার পদ্ধতির সূত্রপাত হয়েছে প্রাচীন চীনে। জি! এটাও . চীনে সর্বপ্রথম মানসম্মত পরীক্ষা বা সার্বভৌম পরীক্ষার প্রচলন করা হয়। এই পরীক্ষার ছিল মূলত একটি বাছাই পরীক্ষা। যার মাধ্যমে সরকারি চাকরির জন্য যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করা হত। এই পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হয় ৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে। সুই রাজবংশ এই পদ্ধতি চালু করে। এর প্রায় ১৩০০ বছর পরে কুইং রাজবংশ ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে এই পদ্ধতি বাতিল করে। কিন্তু ১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ড এই পরীক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করে এবং সরকারি বিভিন্ন কাজে প্রার্থী নিয়োগের জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করে। পরবর্তীতে তারা ইংল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থায় পরীক্ষা পদ্ধতির সংযোজন করে। এইভাবে আস্তে আস্তে বিভিন্ন দেশে পরীক্ষা পদ্ধতি ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশে দেশে গ্রহনযোগ্যতাও পেতে থাকে। বিশ্বব্যাপী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পরীক্ষা পদ্ধতির সূচনা হয়।  আসলে পরীক্ষা পদ্ধতি কবে থেকে প্রচলন হয়েছে সেটা যদি আমরা খেয়াল করি তাহলে দেখবো, আসলে আমরা যাকে পরীক্ষার জনক বলে আখ্যায়িত করছি তার জন্মের অনেক আগে থেকেই পরীক্ষার প্রচলন হয়েছে।

পরীক্ষার সাথে এখন অনেক কিছু জড়িত। রুটিন, গ্রেড, জিপিএ কিংবা ফলাফল সবকিছুই পরীক্ষার সাথে সম্পর্কিত। তাই এই বিষয়গুলো কে আরো সহজ করতে দিন দিন নতুন নতুন পরীক্ষা পদ্ধতির সূচনা হচ্ছে। যেমন আগে পরীক্ষা মানেই ছিল বড় বড় করে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া অনেকটা রচনার মত। এর পরে শুরু হল বহুনির্বাচনী প্রশ্নপদ্ধতি। যেখানে শুধু টিক দেওয়া লাগে বা বৃত্ত পূরণ করা লাগে। বিজ্ঞান শাখার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে যেটি সবচেয়ে মজার পরীক্ষা সেটি হল ব্যবহারিক পরীক্ষা বা প্র্যাকটিকেল। যেখানে সবকিছু হাতে কলমে করতে হয়। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এখন পরীক্ষা অনেকক্ষেত্রে কম্পিউটার নির্ভর হয়ে গেছে। অনেক দেশে বর্তমানে সরাসরি কম্পিউটারের মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়।

শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে পরীক্ষা পদ্ধতিতেও নতুন নতুন পরিবর্তন আসছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই উপকারি। আর ভবিষৎ বিবেচনা এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসএসসি পরীক্ষায় ভালো করার মাধ্যমে জীবন সিঁড়ির একটি ধাপ সফলভাবে ডিঙ্গিয়ে যেতে হবে। এ কথা যেমন সত্য তেমনি এ কথাও মনে রাখতে হবে, পরীক্ষা নিয়ে অহেতুক অস্বস্তি বা হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আর সব পরীক্ষার মতোই এসএসসি একটি পরীক্ষা তবে এর গুরুত্ব একটু বেশি। এই গুরুত্বটুকু বুঝে সঠিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আর পরীক্ষায় কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে এ জন্য নিজেকে যাচাই করা প্রয়োজন। এ যাচাই প্রক্রিয়ার অন্যতম মাধ্যম হল শেষ সময়ে এসে অতি কমন প্রশ্নের উত্তর লেখা এবং শুদ্ধভাবে কত সময় নিয়ে লিখতে পারবে তা অনুধাবন করা। এ অনুধাবন চূড়ান্ত পরীক্ষায় ঠিক সময়ে শতভাগ উত্তর দিতে সহায়তা করতে পারে।

প্রতিটি পরীক্ষার আগের রাতেই সকালে বের হওয়ার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি সেরে রাখতে হবে। অবশ্যই নিয়ম মেনে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। পরীক্ষার খাতা হাতে পাওয়ার পর নির্ভুলভাবে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ কর। এরপর খাতার প্রতিপৃষ্ঠায় ওপরে ও বাঁ পাশে আনুমানিক এক ইঞ্চি এবং নিচে হাফ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা রেখে পেনসিল দিয়ে মার্জিন করতে হবে। যদি এ মাপে খাতায় লেখা শুরু এবং শেষ করা যায় তবে মার্জিন না করলেও চলবে। শুদ্ধ, সুন্দর ও স্পষ্ট অক্ষরে উত্তর করবে, অহেতুক কাটাকাটি বা ওভাররাইটিং করা যাবে না। প্রয়োজনীয় উত্তর লেখার পরও সময় থাকলে রিভিশন করা এবং নির্দিষ্ট সময় খাতায় জমা দিয়ে হল ত্যাগ করাই উত্তম। একইসঙ্গে প্রস্তুতিকে দিতে হবে সমান গুরুত্ব। পরীক্ষার আগের রাতে শুধু পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পড়াগুলো রিভিশন দেওয়াটাই ভালো। 

লেখক : হোমিও ডাক্তার ও কলামিস্ট

 

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043680667877197