লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য দেয়া সরকারি উপবৃত্তির টাকা তুলতে হয়রান হচ্ছেন অভিভাবকরা। উপবৃত্তির টাকা আসা নগদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর বদলে যাওয়ায় তারা টাকা তুলতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এজেন্টদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও টাকা তুলতে না পেরে ক্ষোভ জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও জামা, জুতা এবং ব্যাগ কেনার (কিটস অ্যালাউন্স) টাকা গত সপ্তাহ থেকে শিক্ষার্থীদের দেয়া মা-বাবা বা বৈধ অভিভাবকের আগে জমা দেয়া নগদ অ্যাকাউন্টে আসতে শুরু করে। টাকা আসার খবরে শত শত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা নগদ এজেন্ট দোকানগুলোতে ভিড় জমান। কিন্তু কোনোভাবেই টাকা উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। অভিভাবকদের অভিযোগ, টাকা উত্তোলনের সর্বশেষ ধাপে গোপন পিন প্রবেশ করালে ‘ডিড নট ম্যাচ’ আসছে। আগে দেয়া গোপন পিন নম্বর এমনিতেই পরিবর্তন হয়ে গেছে। পুনরায় নতুন পিন সেট করার চেষ্টা করেও কাজ হচ্ছে না। অভিভাবকরা আরও বলছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও অন্যান্য তথ্য নিয়ে নগদের গ্রাহক সেবা (কাস্টমার কেয়ার) ১৬১৬৭ নম্বরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কল দিয়েও সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।
পাটগ্রাম পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের সাহেবডাঙা এলাকার বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘আমার মেয়ে মরিয়ম আক্তার তৃতীয় ও ছেলে মোস্তাকিন হোসেন পঞ্চম শ্রেণিতে পাটগ্রাম বালিকা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। উপবৃত্তির জন্য বিদ্যালয়ে দেয়া আমার মোবাইল নম্বরে টাকা আসার মেসেজ দেখে গত তিনদিন ধরে টাকা তোলার চেষ্টা করছি, কিন্তু টাকা তুলতে পারছিনা। নগদের এজেন্টের দোকানগুলোতে গেলে তারা বলেন গোপন পিন ঠিক নাই। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে গিয়েও কাজ হচ্ছেনা। এ টাকা তুলতে খুব হয়রানি হতে হচ্ছে।
উপজেলার পাটগ্রাম ইউনিয়নের টেপুরগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মজিদুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, টাকা তোলার জন্য বাবাসহ বাজারে এসেছি, কিন্তু টাকা তোলা যাচ্ছেনা। গ্রাম থেকে আসা-যাওয়ায় ৬০ টাকা খরচ। কয়দিন যে আসতে হবে আর কবে টাকা তোলা যাবে জানিনা। আগে তো এ রকম সমস্যা হয়নি।
জগতবেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, উপবৃত্তির টাকা আসার ম্যাসেজ অভিভাবকদের মোবাইল নম্বরে এসেছে। আমরা বিদ্যালয়ের অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর নিয়ে নিকটস্থ নগদ এজেন্ট পয়েন্টগুলোতে পাঠিয়েছি। এরআগে শিক্ষার্থীদের তাদের অভিভাবকদের নগদ অ্যাকাউন্ট খুলে গোপন পিন নম্বর সেট করে মনে রাখতে বলা হয়েছি। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা অভিযোগ করছেন তারা টাকা তুলতে পারছেন না। এভাবে প্রতিদিন প্রায় ১৫-২০ জন অভিভাবক ও শিক্ষার্থী আসছে। আমরা বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
কালীগঞ্জ এলাকার নগদের ডিস্ট্রিবিউটর হাউজের ম্যানেজার সোহেল কামাল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের হ্যাকাররা অনেকের নগদ অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছে। টাকা আসলে তারা (হ্যাকাররা) টাকা তুলে নেবে। এজন্য কোম্পানি শিক্ষার্থীদের টাকার নিরাপত্তার জন্য অটোমেটিক পিনগুলো পরিবর্তন করে দিয়েছে। মাঠে আমাদের ডিস্ট্রিবিউটর সেলস্ অফিসার বা প্রতিনিধিরা রয়েছে, তারা টাকা উঠানোর নিয়ম জানিয়ে দিচ্ছে। সবার টাকা তোলা যাবে কোনো সমস্যা হবে না। একটু সময় লাগবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, যেসব শিক্ষার্থীরা টাকা উঠাতে পারছেনা, নম্বরসহ তাঁরা লিখিত অভিযোগ দিলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হবে।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।