পাঠ্যবই বিক্রিতে মহাজোচ্চুরির পাকা আয়োজন - দৈনিকশিক্ষা

পাঠ্যবই বিক্রিতে মহাজোচ্চুরির পাকা আয়োজন

রুম্মান তূর্য |

সরকার বলে দিয়েছে শিক্ষা অফিসের গুদামে থাকা প্রতি কেজি পুরনো পাঠ্যবই ১০ টাকার কমে বিক্রি করা যাবে না। বাস্তবে এক কেজি অব্যবহৃত পুরনো পাঠ্যবই সর্বোচচ ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে ও হচ্ছে। কিন্তু এবার রীতিমতো তুঘলকি কাণ্ডই ঘটিয়ে দিয়েছে ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিস। তারা প্রতি কেজি বিক্রি করছে ৬৭ টাকা ৫০ পয়সা করে। অন্যান্য জেলায় যেখানে ২০/২৫ টাকা কেজি দরে পুরনো পাঠ্যবই বিক্রি করা হচ্ছে, সেখানে ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিস পাচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি দাম! ফাঁকিটা এখানেই। বাস্তবে ক্রেতা ও বিক্রেতার অবৈধ যোগাযোগেই নিহিত লাভালাভ।

কমিটির সামনে দাঁড়িপাল্লায় মাপার নিয়ম থাকলেও তা করা হবে না। বলা হবে, ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসের গুদামে মোট অব্যবহৃত বইয়ের পরিমাণ ১৬৭ টন। সে হিসেবেই ক্রেতা রানা এন্টারপ্রাইজ সরকারকে দাম পরিশোধ করবে। কিন্তু বাস্তবে ওখানে প্রায় চারশ টনেরও বেশি বই হবে বলে ধারণা করছেন শিক্ষা অফিসেরই একাধিক কর্মকর্তা। তাদের আশঙ্কা, এক কেজির প্রতি এককে তিন কেজি করে হাতিয়ে নেবে ক্রেতা। সব আয়োজন শেষ। এখন দুএকদিনের মধ্যে কার্যাদেশ পেলেই বাটখারা দিয়ে মেপে বই ডেলিভারি নেবে ক্রেতা। শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।    

রাজধানীর নিউ ইস্কাটন এলাকার কয়েকজন ভাঙারি ও পুরনো কাগজক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে পুরনো হোয়াইট প্রিন্ট কাগজ ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে তারা কিনছেন। আর পুরনো সংবাদপত্র কিনছেন ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। 

তারা আরও জানাচ্ছেন, কাগজের কলে পুরনো বই বা কাগজ ৩২/ ৩৩ টাকায় প্রতি কেজি কেনা হয়। 
জোচ্চুরির আয়োজন: 
ঢাকা জেলার পুরনো বই বিক্রির নিলামে মোট আটটি প্রতিষ্ঠান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও পাঁচটি প্রতিষ্ঠানই অস্বাভাবিক দাম হাকিয়েছে, যা ৬৭ থেকে ৪৮ টাকার মধ্যে। অভিযোগ আছে, অস্বাভাবিক বেশি দাম হাকানো প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক একই ব্যক্তি।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসের গুদামে মোট ১৭০ টন বিক্রিযোগ্য পুরনো পাঠ্যবই রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু কি কারণে এসব বইয়ের দাম এত বেশি ধরা হয়েছে তা নিয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, ১৭০ টন পুরনো বই বিক্রি করার কথা কর্মকর্তারা বললেও এর

থেকে কয়েকগুণ বেশি পুরনো বই গুদামে জমা আছে। কমপক্ষে ৪০০ টন বলে ধারণা তার। 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে কোনো একজন ব্যবসায়ী মোটা দাম হাকিয়ে পুরো লটটি কিনে নিতে চাচ্ছেন। ১৭০ টন পুরনো বইয়ের আড়ালে প্রায় চারশ টন বই বিক্রি হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  এতে ৫০/৬০ লাখ টাকার একটা দাও মারার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঢাকা জেলার পুরনো পাঠ্যবই বিক্রির দায়িত্বে আছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মমতাজ বেগম ও জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মজিদ।

সম্প্রতি ঢাকা জেলার পুরনো পাঠ্যবই বিক্রির জন্য নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। একটি সূত্র দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছে, রানা নামের একটি প্রতিষ্ঠান পুরনো পাঠ্যবই কিনতে প্রতি কেজির দাম ৬৭ টাকা ৫০ পয়সা দাম হাকিয়েছে। বিসমিল্লাহ নামের অপর একটি প্রতিষ্ঠান দাম হাকিয়েছে ৬২ টাকা ৭৫ পয়সা। মান্নান নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রতি কেজি পুরনো বইয়ের দাম হাঁকিয়েছে ৫৬ টাকা ৭০ পয়সা। আশোক ট্রেডিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রতি কেজির দাম হাকিয়েছে ৪৮ টাকা ২৬ পয়সা। একই নামের আর একটি প্রতিষ্ঠান দাম হাকিয়েছে ৫৫ টাকা।

পুরনো পাঠ্যবই কিনতে প্রতি কেজির দাম ৬৭ টাকা ৫০ পয়সা দাম হাকানো প্রতিষ্ঠান রানা সংশ্লিষ্টরা দৈনিক আমাদের বার্তার সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মজিদ গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এসব বই বিক্রি করা হচ্ছে। আমাদের হিসেবে মোট বই আছে ১২ লাখ কপি। অনুমানিক ১৬৭ টন বলা হলেও সঠিক হিসেব বলতে পারছি না। বই মেপে নেবেন ক্রেতারা। বই পরিমাপ করে বুঝিয়ে দিতে একটি কমিটি করা হয়েছে। 

অতিরিক্ত দামের বিষয়ে জানাতে চাইলে তিনি আরও বলেন, দাম নিয়ে আমাদেরও একটু সন্দেহ হয়েছিলো, আমরা যাচাই করে দেখেছি ৪৭ টাকা কেজি বর্তমানে চলছে। তারা যদি বেশি দাম দেন, তাহলে সরকারকে আমরা কিছু টাকা বেশি পাইয়ে দিতে পারি। 
গত ২২ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক আদেশে জানানো হয়েছে, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে পাঁচ বছরের পুরনো পাঠ্যবই জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি করা যাবে। এক্ষেত্রে বইয়ের সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করতে হবে প্রতি কেজি ১০ টাকা। এ কাজ অনধিক পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। এ কমিটিতে জেলা ও থানা পর্যায়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা ও আইসিটি) আহ্বায়ক ও জেলা শিক্ষা অফিসার সদস্য সচিব এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহ্বায়ক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সদস্য সচিব হিসেবে থাকবেন।

অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ - dainik shiksha চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার ৫ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস, তাপমাত্রা নিয়ে সুখবর - dainik shiksha ৫ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস, তাপমাত্রা নিয়ে সুখবর বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030100345611572