দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আগামী অর্থবছরের ব্যয় নির্বাহে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা বাজেট প্রণয়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এর মধ্যে অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬ হাজার ৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪ হাজার ৪২০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিশনের বাজেট ওয়ার্কিং কমিটি (বিডব্লিউসি) ও বাজেট ম্যানেজমেন্ট কমিটির (বিএমসি) সভায় এ বাজেট প্রস্তাব আনা হয়েছে। আগামী ১১ মে ফাইন্যান্স কমিটি (এফসি) ও ১৭ মে পূর্ণ কমিশন সভায় উত্থাপন এবং অনুমোদনের মাধ্যমে এ বাজেট চূড়ান্ত করা হবে।
কমিশন সূত্রে জানা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী অর্থবছরের ব্যয় নির্বাহে ইউজিসির প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ১০ হাজার ৫১৪ কোটি ৪ লাখ টাকা। আর চলতি অর্থবছরে দেশের ৪৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১০ হাজার ৩২ কোটি ৮১ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন করে ইউজিসি। সে হিসেবে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন পেলে চলতি বছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ৫ শতাংশ বাড়বে।
চলতি অর্থবছরে রাজস্ব বা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬ হাজার ৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রাজস্ব বাজেটের আকার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে। আর চলতি বছরের উন্নয়ন বাজেটের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, যা আগামী অর্থবছরের জন্য ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৪ হাজার ৪২০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় ইউজিসির মাধ্যমে। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের চাহিদার নিরিখে কমিশনের কাছে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়ে থাকে। তাদের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে এরই মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী অর্থবছরের ব্যয় নির্বাহের জন্য বাজেট প্রণয়ন করেছে ইউজিসি।
ইউজিসির আর্থিক বিষয়গুলো দেখভাল করেন কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য ড. মো. আবু তাহের। বাজেট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের চাহিদার কথা আমাদের জানায়। আমরা সেটি বিচার-বিশ্লেষণ করে উচ্চশিক্ষার সর্বমোট বাজেট প্রণয়ন করি। এরই মধ্যে বাজেট ওয়ার্কিং কমিটি ও বাজেট ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভায় একটি বাজেট প্রস্তাব আনা হয়েছে, যা অনুমোদনের জন্য ফাইন্যান্স কমিটি ও পূর্ণ কমিশন সভায় উত্থাপন করা হবে।
এদিকে মূল বাজেটের মতো বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে গবেষণা খাতেও। আগামী অর্থবছরে উচ্চশিক্ষায় গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটে এর আকার ছিল ১০০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সে হিসেবে প্রায় এক অর্থবছরের ব্যবধানে গবেষণায়
বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে গবেষণায় মূল বাজেটে ৬৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছিল। গত দুই অর্থবছরে উচ্চশিক্ষা বাজেটে গবেষণা খাতকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে কমিশন।
ইউজিসি বলছে, নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গবেষণা সংকটের বিষয়টি তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছে। এছাড়া গুণগত গবেষণা না থাকায় উদ্ভাবন ও আবিষ্কারের ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে যেতে পারছে না দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তাই বিশেষ বিবেচনায় গবেষণা খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনেক বড় উল্লম্ফন ঘটানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, দেশের উন্নয়নে গুণগত গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। আর উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্যই নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি। যদিও গবেষণা কম হওয়ার কারণে উদ্ভাবন ও আবিষ্কারের ক্ষেত্রে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্র খুবই অনুজ্জ্বল। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য জোর দিচ্ছি। বিশেষ করে প্রায়োগিক গবেষণায় বেশি অর্থ ব্যয় করার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছে। আমরা পদোন্নতি পাওয়ার জন্য গবেষণা চাই না। আমরা সত্যিকারের প্রায়োগিক ও সৃষ্টিশীল গবেষণা কার্যক্রম চাই।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বিদেশে উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি দিতে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ: এক সময় উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বাংলাদেশী উচ্চশিক্ষা প্রার্থীদের প্রচুরসংখ্যক ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ দেয়া হতো। তবে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য সে সুযোগ দিনকে দিন সীমিত হয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশে উচ্চশিক্ষার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য বৃত্তির প্রচলন করতে যাচ্ছে ইউজিসি। এজন্য আগামী অর্থবছরের গবেষণা বাজেটে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কমিশন সূত্রে জানা যায়, একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে সেটির আলোকে বৈদেশিক স্কলারশিপ দেয়া হবে। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই এ বৈদেশিক স্কলারশিপের আওতায় আসবে। এক্ষেত্রে যেসব শিক্ষক বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টিউশন ফি ছাড় নিতে পারবেন, তাদের সেখানে অবস্থান ও খাওয়া বাবদ যে অর্থ ব্যয় হবে, সেটি কমিশনের স্কলারশিপের মাধ্যমে বহন করা হবে।