পুরুষের হাই হিল যেভাবে নারীদের হলো - দৈনিকশিক্ষা

পুরুষের হাই হিল যেভাবে নারীদের হলো

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: ফ্যাশন সচেতন নারীদের অন্যতম এক অনুষঙ্গ হলো হাই হিল। আরামদায়ক না হলেও নারীরা দুই ইঞ্চি থেকে শুরু করে ছয় ইঞ্চি পর্যন্ত উঁচু হিলও পরেন। তবে মজার বিষয় হলো—হাই হিল প্রথমে পুরুষদের জন্যই তৈরি করা হয়েছিল। অবশ্য সেগুলো এখনকার মতো এত সুচালো হিল ছিল না।

হাই হিল পরার একটা বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল। টরন্টোর বাটা সু মিউজিয়ামের এলিজাবেথ সেমেলহ্যাক বলেন, ‘হাই হিল বহু শতাব্দী ধরে পূর্বাঞ্চলজুড়ে (পশ্চিম এশিয়া, দক্ষিণ–পূর্ব ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকার একটি আন্তঃমহাদেশীয় অঞ্চল) ঘোরায় চড়ার জুতা হিসেবে ব্যবহৃত হতো।’ 

দক্ষ ঘোড়সওয়ার ছিল পারস্য (বর্তমান ইরান) সেনাবাহিনীর বড় শক্তি। সেমেলহ্যাক বলেন, যখন সৈনিক স্টিরাপে (ঘোড়ায় পা রাখার জায়গা) ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায়, তখন হিল সেই স্টিরাপে ভালোভাবে পা আটকে রাখতে সাহায্য করে। ফলে সৈনিকেরা শরীরের ভারসাম্য রেখে আরও নিখুঁতভাবে তীর ছুড়তে পারে। 

বিশ্বের সবচেয়ে বড় অশ্বারোহী বাহিনী ছিল পারস্যের সম্রাট শাহ আব্বাসের। তিনি ১৬ শতকের শেষের দিকে রাজত্ব করেন। তৎকালীন শত্রু অটোমান সাম্রাজ্যকে পদানত করতে পশ্চিম ইউরোপের শাসকদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিলেন এই সম্রাট। 

তাই ১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দে, আব্বাস ইউরোপে প্রথম পার্সিয়ান কূটনীতিক দল পাঠান। তাঁরা আব্বাসের প্রস্তাব রাশিয়া, জার্মানি ও স্পেনে পৌঁছে দেন। সেসময় পশ্চিম ইউরোপে পারস্যের সমস্ত জিনিসের প্রতি আগ্রহে বাড়ে। পারস্যের এই বিশেষ জুতায় মজেন ইউরোপীয় অভিজাত শ্রেণির পুরুষেরা। এই জুতা পরলে পৌরুষ আরও প্রবলভাবে ফুটে ওঠে বলে তাঁরা মনে করতেন। 

পরবর্তীতে যখন নিম্ন শ্রেণির পুরুষেরাও হিল জুতা পরা শুরু করে, তখন অভিজাতরা পাল্লা দিয়ে হিলের উচ্চতা বাড়াতে থাকেন। 

১৭ শতকে ইউরোপে ভাঙাচোরা ও কর্দমাক্ত রাস্তায় এই জুতা পরে হাঁটার উপযোগী ছিল না। তবে এটি ফ্যাশন ও আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে পরা হতো। 

ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই জুতা সংগ্রহ করতে পছন্দ করতেন। তাঁর উচ্চতা ছিল মাত্র ৫ ফিট ৪ ইঞ্চি (১ দশমিক ৬৩ মিটার)। হিল পরে ৪ ইঞ্চি উচ্চতা বাড়াতেন তিনি। 

ইউরোপের এই জুতার আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল—হিল ও জুতার সোল সব সময় লাল রঙের হতো। জুতার এই রং অনেক দামি ছিল। 

ফ্যাশনের এই ধারা শিগগিরই অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৬৬১ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাজ্যের রাজা দ্বিতীয় চার্লসের অভিষেকের চিত্রে তাঁকে হাই হিল পরতে দেখা যায়। উচ্চতা ৬ ফুটের বেশি হলেও তিনি হিল পরতেন। 

১৬৭০–এর দশকে রাজা চতুর্দশ লুই একটি আদেশ জারি করেন। তিনি শুধু আদালতের কর্মকর্তাদের লাল হিল পরার অনুমতি দেন। 

ইউরোপে পুরুষেরাই প্রথমে হিলের প্রতি আকৃষ্ট হয়। পরবর্তীতে নারীদের মধ্যে পুরুষদের পোশাক–পরিচ্ছদের বিভিন্ন অনুষঙ্গ ব্যবহারের প্রবণতা শুরু হলে, হিল আর পুরুষদের একক ফ্যাশন থাকেনি; নারী ও শিশুরা হিল পরতে শুরু করে। 

সেমেলহ্যাক বলেন, ১৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে নারীরা চুল ছোট রাখতেন ও পোশাকে ইপোলেট (বিশেষ করে সেনা কর্মকর্তাদের ঘাড়ে পরা কাপড়ের অলংকার বিশেষ) যুক্ত করতেন। তাঁরা পাইপের মাধ্যমে ধূমপান করতেন ও পুরুষদের মতো টুপি পরা শুরু করেন। নিজেদের পোশাকে পুরুষালি ভাব আনার চেষ্টা করতেন। এভাবে পুরুষদের মতো হিল জুতা পরাও শুরু করেন। 

লন্ডনের ভিক্টোরিয়া ও অ্যালবার্ট মিউজিয়ামের কিউরেটর হেলেন পারসন বলেন, এই সময়ে হিলের নকশার পরিবর্তন শুরু হয়। পুরুষেরা বর্গাকার, মজবুত, নিচু হিল পরতে শুরু করেন। অপরদিকে মেয়েদের হিল আরও সরু ও ঋজু হতে শুরু করে। 

মেয়েদের জুতার সোলের পায়ের পাতার অংশে সরু করা হয় সেই তখন থেকেই। পা যাতে ছোট দেখায়। ছোট পা মেয়ের বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য ধরে নিয়েই এই আদর্শ মান ঠিক করেন ফ্যাশন সচেতনরা। 

আরও কয়েক বছর পর এনলাইটেনমেন্ট বা আলোকায়ন নামে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন শুরু হয় ইউরোপে, বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপে। এই আন্দোলনে যৌক্তিক, দরকারি জিনিস ও আলোকায়নের নামে শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়। তাই পুরুষদের ফ্যাশন আরও ব্যবহারিক পোশাকের দিকে ধাবিত হয়। ইংল্যান্ডের অভিজাতরা জাঁকজমকহীন সাধারণ পোশাক পরতে শুরু করে। এ সময় ‘গ্রেট মেল রিনানসিয়েশন’ নামে এক যুগের সূচনা হয়। এ সময় উজ্জ্বল রঙের জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক ও গয়না পরা বন্ধ করে দেয় ধনী পশ্চিমা পুরুষেরা। এসব নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়। এভাবে পুরুষ ও নারীদের পোশাকের মধ্যে পার্থক্যগুলো আরও স্পষ্ট হতে থাকে। 

সেমেলহ্যাক বলেন, এর মাধ্যমে জন্ম পরিচয় নির্বিশেষে শিক্ষিত হলেই নাগরিক হতে পারতেন পুরুষেরা। বিপরীতে, নারীদের দুর্বল, আবেগপ্রবণ ও অশিক্ষিত হিসেবে দেখা হতো। পুরুষ মুখাপেক্ষিতা নারীদের অযৌক্তিক ও অতিরঞ্জিত ফ্যাশনের দিকে আগ্রহী করে তোলে। ক্রমেই হাই হিল নারীদের পরিচ্ছদের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। 

 ১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে পুরুষেরা হাই হিল পরা পুরোপুরি বাদ দেয়। ফরাসি বিপ্লবের পর নারীরাও হিল জুতা পরা বন্ধ করে দিয়েছিল। 

আবার উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে হিল জুতা পরার ফ্যাশন আবারও নারীদের মধ্যে ফিরে আসে। হাই হিল পর্নোগ্রাফিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হতো। সেসময়ের নীল ছবির মডেলদের নগ্ন অবস্থায় শুধু হিল পরে ফটোশুট করতে দেখা যেত। 

 ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে কাউবয় সংস্কৃতিতে পুরুষের জুতায় আবারও হিল ফিরে আসে ও ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে কিছু পুরুষ ফ্যাশনের জন্য হিল জুতা পরতো। তবে আগের মতো জৌলুশ আর কখনোই ফিরে আসেনি। 

তথ্যসূত্র: বিবিসি

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002993106842041