শিক্ষক পদে নতুন সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরমের ১১০ টি বস্তা এখনো এনটিআরসিএ কার্যালয়ে আছে। সোমবার দুপুরে সরেজমিনে এনটিআরসিএর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরমের ১১০টি বস্তা স্তুপ করে রাখা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এ ফরমগুলো সিআইডি, এনএসআই ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাঠানো হবে। সে অপেক্ষাতেই আছে এনটিআরসিএর।
এদিকে পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ না হওয়ায় শিক্ষক পদে নতুন সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা যোগদান করতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষক সংকটে থাকা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা ও নতুন সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা দ্রুত নতুন শিক্ষকদের যোগদান করানোর দাবি জানিয়েছেন।
দুপুরে এনটিআরসিএর সংশ্লিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরমের ১১০টি বস্তা এখনো আমাদের কার্যালয়ে আছে। প্রার্থীরা পাঁচ কপি করে ফরম পূরণ করে পাঠিয়েছেন। এরমধ্যে এক কপি এনটিআরসিএতে, এক কপি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রাখা হবে। আর এক কপি সিআইডিকে, এক কপি এনএসআইকে এবং এক কপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা প্রার্থীদের দুই কপি ফরম রাখছি। আর সিআইডি, এনএসআই ও স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের কাছ থেকে ফরম নেবেন। আমরা অপেক্ষায় আছি, তারা আমাদের কাছ থেকে কখন ফরম সংগ্রহ করবেন।’
তবে কবে নাগাদ ভেরিফিকেশন শুরু হবে এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কোনো তথ্য দিতে পারেনি এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা। তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘এ দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। আমরা প্রার্থীদের ফরম পাঠাবো, পুলিশ ভেরিফিকেশনের রিপোর্ট পাওয়ার পর সুপারিশপত্র প্রকাশ করবো।’ কবে নাগাদ পুলিশ ভেরিফিকেশন শুরু হতে পারে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি কর্মকর্তারা।
এদিকে নিয়োগ সুপারিশের জন্য নির্বাচিত হওয়ার প্রায় তিনমাস পরেও চূড়ান্ত সুপারিশ না পেয়ে হতাশ প্রার্থীরা। তারা দ্রুত শিক্ষক পদে যোগদান করার দাবি জানিয়েছেন। চাকরি পাওয়ার পরেও যোগদানে অহেতুক দেরি হওয়ায় অনেক প্রার্থীই হতাশ। তারা বলছেন, দ্রুত যোগদানের ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষকসংকট কিছুটা কমবে। তারা যোগাদানের পর পুলিশ ভেরিফিকেশন করারও দাবি জানিয়েছেন।
করোনায় দেড় বছরের বেশি সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। স্কুল খোলার পর শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করেছিল সরকার। আবেদন গ্রহণের পর প্রার্থীরা গত ১৫ জুলাই প্রাথমিক সুপারিশও পেয়েছেন ৩৮ হাজার ২৮৬ জন প্রার্থী। কিন্তু শিক্ষক পদের যোগদানের আগে প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ও প্রার্থীরা। কিন্তু এ জন্য অনেক সময় লেগে যাচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে শিক্ষক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের দ্রুত যোগদান করানোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সুপারিশ প্রাপ্তরা।
নতুন সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, দ্রুত শিক্ষক পদে যোগদান করতে চাই। প্রায় তিন মাস হলো সুপারিশ পেয়েছি। কিন্তু যোগদান করতে পারি নি। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের নিয়োগ পাওয়া প্রার্থীরা দুই মাসে এমপিওভুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। পুলিশ ভেরিফিকেশনের সিদ্ধান্তকে তারা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু দেরি হওয়ার কারণ বুঝতে পারছি না।
প্রার্থীরা আরও বলেন, শিক্ষক পদে সুপারিশ পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অনেকেই তাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। ক্লাস নেওয়ার অনুরোধ করছেন। তারাও ক্লাস নিতে চান। কিন্তু এনটিআরসিএ তাদের দ্রুত যোগদানের জন্য কোনো পদক্ষেপ এখনো নিতে পারেনি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক যোগদানের পর পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়। তারাও চান, যোগদানের পর তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন হোক। ডোপ টেস্ট করতেও তাদের অসুবিধা নেই। যাচাই-বাছাইকে তারা তারা স্বাগত জানাই। কিন্তু দ্রুত বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দেওয়া হোক।