রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েও পোষ্য কোটায় ভর্তির সুযোগ পান ৪৬ শিক্ষার্থী। এবারও একইভাবে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন অন্তত ৪০ জন। রাবিতে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তানরা পোষ্য কোটা সুবিধা ভোগ করেন। পোষ্য কোটার শিক্ষার্থীদের জন্য এরই মধ্যে পাস নম্বর ৪০ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হয়েছে। গত সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষা উপকমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উপাচার্যের দপ্তরে অনুষ্ঠিত সভায় বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত বেশ কয়েকজন ডিন বিষয়টি নিশ্চিত করলেও প্রশাসনের কেউই এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেননি। তবে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক এমন সিদ্ধান্ত ভর্তিযুদ্ধে বাজে সংস্কৃতি তৈরি করবে বলে মত দিয়েছেন।
বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক শাহেদ জামান ভর্তি উপকমিটির সিদ্ধান্তের বিষয়ে বলেন, আপাতত ৩০ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। পোষ্য কোটায় সিট ফাঁকা সাপেক্ষে প্রতিবারই নম্বর শিথিল করা হয়। কতজনকে ভর্তি করা হবে, সেটি এখনও চূড়ান্ত নয়। কোটার জন্য বরাদ্দ সিট পূরণ করতে ৩০ নম্বরও শিথিল করা হতে পারে বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশে ভর্তির বিষয়ে কোটা-সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধার সুস্পষ্ট কোনো উল্লেখ নেই। তবে ভর্তির বিষয়ে কমিটিকে ক্ষমতা দিয়ে অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভর্তি কার্যক্রম অধ্যাদেশের ৪৬ ধারা অনুযায়ী ভর্তি কমিটি দ্বারা নির্ধারিত কার্যপ্রণালি অনুযায়ী তৈরি করা হবে।' অধ্যাদেশের এই ধারাকে কাজে লাগিয়েই রাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি চালু করা হয় বলে অনেকে মনে করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে পোষ্য কোটা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা, শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও বিকেএসপি কোটা রয়েছে।
কোটাধারী ৭০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন, যারা নূ্যনতম পাস নম্বর ৪০ পাননি। ৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় ৪০ নম্বরের কম পেয়েও ভর্তির সুযোগ পাবেন।
উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু কতজন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে, কীভাবে করা হবে, সব বিষয় আমার মনে নেই। বিভিন্ন মিটিং ও কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় সব সময়।
সব মিটিংয়ের সব সিদ্ধান্ত মনে থাকে না। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, কোটা পদ্ধতি চালু হয় পশ্চাৎপদ কোনো গোষ্ঠী বা শ্রেণিকে এগিয়ে নিতে। রাবিতে পোষ্য কোটা যারা ভোগ করছেন, তারা তো পশ্চাৎপদ গোষ্ঠীর কেউ নন।ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, যে শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় পাস করতে পারছে না, তাকে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না।
গত ৪ থেকে ৬ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এবার তিনটি ইউনিটে এক লাখ ২৭ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষার জন্য মনোনীত হন।