টানা একযুগ ধরে হজে যান দুর্গাপুর ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেন। তিনি হজ করেন না তবে ছুটি নিয়ে সৌদি আরবে যান ও একটি হজ এজেন্সির দালালি করেন। তাই তিনি প্রতিবছর হজের সময়ে একটানা ৪৫ থেকে ৫০ দিন ছুটি কাটান। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাদান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা। এই মাদরাসাটি প্রথম শ্রেণি থেকে ফাজিল ডিগ্রির অধ্যয়নরত প্রায় ছয়শ’ শিক্ষার্থী রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে অভিযোগও করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ‘সাগর হজ এজেন্সির’ প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন অধ্যক্ষ। তিনি মাদরাসার অধ্যক্ষ হয়েও ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতি বছর হজ যাত্রীদের মোয়াল্লেম হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সৌদিআররে যান। এই হজ সম্পন্ন করতে ৪৫ দিন সময় লাগে। তিনি ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে চলতি বছরে দুইবার মোয়াল্লেমের দায়িত্ব নিয়ে যান। চলতি বছরে সর্বশেষ তিনি জুলাই মাসে সাগর এজেন্সির মাধ্যমে ৪৮ জন হজ যাত্রীর মোয়াল্লেমের দায়িত্ব নিয়ে সৌদিতে যান অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেন। এসময় তিনি একটানা ৪৫ দিন প্রতিষ্ঠান বাইরে ছিলেন। এমনকি তিনি চলতি বছরে প্রায় ৮৫ দিন ব্যক্তিগত কাজে প্রতিষ্ঠান বাহিরে ছিলেন। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান কেউ কথা বললে নিজের ইচ্ছেমত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। সরকারি বিধি অমান্য করে নিজের খেয়াল-খুশি মতো সে প্রতিষ্ঠানে যান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠান কোনো নিয়ম শৃঙ্খলা নেই। অধ্যক্ষ তার খেয়াল খুশিমতো কাজ করেন। তিনি দিনের বেশির ভাগ সময় তার ব্যক্তিগত কাজে প্রতিষ্ঠান বাইরে অবস্থান করেন। আর যতটুকু সময় প্রতিষ্ঠান অবস্থান করেন, তাও আবার নতুন হজ করা প্রার্থীদের নিয়ে অফিসে বসে দেনদরবার করেন।
মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাসুমা খাতুন অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেন মোয়াল্লেম হিসেবে হাজিদের সঙ্গে যাওয়া এবং নতুন নতুন হাজি খুঁজে হজে নিয়ে যাওয়ার দেন-দরবারের বিষয়টি স্বীকার করেন।
তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ধর্মীয় কাজে আমি প্রতিবছর ছুটি নিতে পারি। আমি স্বাধীনমতো ছুটি নিতে পারি, সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত ছুটি নিতে পারি।
দুর্গাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহীদুল হক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, অধ্যক্ষ আলতাব হোসেনের বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ মৌখিকভাবে পেয়েছি। মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতেই আমরা জানতে পারি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। আমরা ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি আজাহার আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, অধ্যক্ষ প্রতিবছরই হজের জন্য ছুটি নেয়। নতুন হজ করবেন এমন লোক খুঁজেন, হজ করতে নিয়ে যান। এ কারণে তিনি ছুটিও নেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে সভাপতি আরও জানান, প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেয়ার নাম করে একজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন এটা আমি শুনেছি। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাব্যবস্থা ঝিমিয়ে পড়েছে। অধ্যক্ষকে কেন্দ্র করেই শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের বিশৃঙ্খলাও রয়েছে। গভর্নিং বডির মেয়াদ বেশি না থাকায় সে (অধ্যক্ষ) আমাকে তেমন পাত্তা দেন না।
এ বিষয়ে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রতিষ্ঠানের অভিযোগগুলো যদি সত্যতা মেলে তাহলে তদন্ত করে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।