ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার একটি এবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। তার দুর্নীতির কারণে বর্তমানে মাদ্রাসাটিতে নেই কোনো শিক্ষার্থী ও তাদের পাঠদানের জন্য কোনো ঘর। উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামে প্রায় ৪০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় মাহমুদপুর স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদ্রাসা নামে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া ভুয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে উপবৃত্তিসহ শিক্ষার্থীদের করোনাকালীন ভাতা উত্তোলন করে তা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে প্রধান শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, তরিকুলের এসব অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করেছেন তার স্ত্রী জান্নাতুন নাহার ইতি ও আপন ভাতিজিসহ তিন সহকারী শিক্ষক। অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আজিমুদ্দিনের স্বাক্ষর জাল করে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন।
সম্প্রতি প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় এমপি, ইউএনও ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির দাতা ও প্রতিষ্ঠাতা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাদ্রাসায় পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম, জুনিয়র শিক্ষক লুৎফেওয়ালি রব্বানী, এবতেদায়ি কারি আছমা খাতুন ও জুনিয়র শিক্ষক দিলারা খাতুনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিকে জানানো হয়নি। এরপর তরিকুল ইসলাম জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে গোপনে জুনিয়র শিক্ষক লুৎফেওয়ালি রব্বানীকে বহিস্কার করেন। একই কায়দায় পদ শূন্য দেখিয়ে কোনো ধরনের নিয়োগ কমিটি গঠন ও নিয়োগ বিজ্ঞাপন ছাড়াই প্রধান শিক্ষক ওই পদে তার স্ত্রী জান্নাতুন নাহার ইতিকে (জুনিয়র মৌলভি) নিয়োগ দেন। এ ছাড়া তার ভাইয়ের মেয়ে আকলিমা আক্তারকেও (জুনিয়র মৌলভি) একইভাবে নিয়োগের ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে, অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী জান্নাতুন নাহার ইতির সার্টিফিকেট তদন্ত করে দেখা যায়, তার মাদ্রাসা বোর্ডের কোনো সনদ নেই। তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছেন।
মাদ্রাসার দাতা ও প্রতিষ্ঠাতা মো. নাজিম উদ্দিন জানান, প্রধান শিক্ষক ভুয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে ওই ভুয়া শিক্ষার্থীদের নামে নিয়মিত উপবৃত্তি ও করোনাকালীন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নামে বরাদ্দ ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।
প্রধান শিক্ষকের এসব দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় এমপি, ইউএনও ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে কর্তৃপক্ষ জেলা শিক্ষা অফিসের একজন কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে।
তরিকুল ইসলাম জানান, মাদ্রাসার শুরুতে তিনি ছিলেন না, যোগদানের পর প্রতিষ্ঠানটি পাঠদান উপযোগী করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার স্ত্রী ও ভাতিজিকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, নিয়মানুযায়ীই বহিস্কার ও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত চলছে।